Tuesday, October 27, 2015

“ প্রেমে বান্দরের উৎপাত “



আমাদের প্রধান কাজ ছিলো বাঁদরামি করা তাই বাঁদরামির কোন সুযোগ সহজে হাত ছাড়া করতাম না। বাঁদরামি ছাড়া জীবনটা’ই পানসে মনে হত !!! কলোনির জনৈক প্রেমিক যুগলও আমাদের বাঁদরামির হাত থেকে রেহাই পায় নাই !!!

একদিন সন্ধার সময় কলোনির মেইন রাস্তায় হাটা-হাটি করছিলাম। দুই বড় ভাই আমার অপজিট দিক থেকে হেটে হেটে আসছেন, তাদেরকে অতিক্রম করে একটু সামনে গিয়েছি, এমন সময় কানে এলো, একজন এহেম...এহেম... করে ২/৩ বার কাশি দেবার মত সাউন্ড করলেন। কাশি রিয়েল হলে তো বুঝা যায়, এইটা কেমন কাশি !!! আমি পিছনে ফিরে তাদেরকে একনজর দেখে আবার হাটা শুরু করলাম, ব্যাপারটা তেমন আমলে নিলাম না।


দুর্ভাগ্যবশত পরদিনও এক’ই অবস্থার সম্মুখীন হলাম। এইবার মাথার ভিতরে কিট-মিট করে উঠলো, ঘটনা কি? এই জায়গায় আসলে ভাইদের এমন শুকনো কাশি দেওয়ার মানে কি ? কৌতূহল বশত, আমি একটু দূর থেকে ফলো করলাম, দেখলাম তারা রাস্তার একটি নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যেই হাটাহাটি করছেন !!!! কিছুক্ষন পর রাস্তার এক পাশে গিয়ে বসলেন, এমন ভাবে একজন আরেকজনের সাথে কানে-মুখে কথা বলছিলেন যে পাশের মানুষও শুনতে পারবে না। আমার কৌতূহল আরো বেড়ে গেলো !! ঘটনা কি ? আজকে বের করতেই হবে। দূর থেকে আশে পাশে সব দিকে চোখ দিয়ে অনুসন্ধান করতে লাগলাম, কিছু একটা ব্যাপারতো নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু আমার চোখে পড়ছে না কেন !!! ১০/১৫ মিনিট পর তারা যে বিল্ডিং এর দিকে মুখ করে বসেছিলেন, সেই বিল্ডিং এর দিকে খুজতে লাগলাম। বাহ… বাহ… কি সুন্দর দৃশ্য, জনৈক নায়িকা তিন তালার জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে, জনৈক নায়ক আর নায়কের দোস্তের দিকে, হাত দিয়ে ইশারা করে কি কি যেন বলছে !!! আহা... মনটা জুড়ায়া গেলো, কি সুন্দর প্রেম !!! এই তাহলে এই জায়গায় এসে শুকনা কাশির রহস্য !!!

কিন্তু আমার মাথায় বান্দর ভর করলে শান্তি সহ্য হয় না, এর একটা ব্যাবস্থা করতে না পারলেতো মনে শান্তি আসবে না, পরদিন বিকেলে খেলাধুলার পর আমি ডাকলাম সম্ভবত সোহেল বা জুয়েলকে, কারন দুইজন হতে হবে, সোহেলকে বললাম চল আজকে সন্ধ্যায় তোকে ম্যাজিক দেখাবো !!! সোহেলও ম্যাজিক দেখার জন্য আমার সাথে আসলো, সন্ধ্যা নেমে এলো, আমরাও বিল্ডিংটার পাশে কলোনির মেইন রাস্তায় নেমে এলাম, হাটা-হাটি করতে লাগলাম, সোহেল বলল “ কিরে কি দেখাবি দেখা “ আরে সময় হতে দে, ১০/১৫ মিনিট পর দেখতে পারবি। ১০/১৫ মিনিট পর রাস্তার ঠিক নির্দিষ্ট জায়গা থেকে দিলাম ২/৩ টা শুকনা কাশি। সারপ্রাইজ !!! নায়িকা জানালায় সঙ্গে সঙ্গে হাজির !!! হা হা হা

সোহেলের চোখতো ছড়া-বড়া, এইটা কি দেখাইলি তুই!!! কেমনে কি !!! আমি বললাম, “নাটক এখনো বাকি আছে, আয় বসি ” এর পর ঠিক জনৈক নায়ক যেখানে বসে সেখানেই পাথরের উপরে বসলাম, বাহ নায়িকা জানালায় দাঁড়িয়ে আছে, দেখলাম এমন অন্ধকার না দেখা যায় নায়িকাকে, না নায়িকা দেখে নায়ককে !!! শুধু অবয়ব দেখেই প্রেম নিবেদন চলে !!! হা হা হা

এমন সময় জনৈক নায়ক আর নায়কের দোস্ত হাটা হাটি করছে একটু দূর থেকে, আমরাতো ওদের জায়গায় বসে আছি, আজকে বিল্ডিং এর দিকে আসতেও পারে না, শুকনা কাশিও দিতে পারে না !!! দূর থেকে কেউ তাদের যায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছে দেখে আর এদিকে আসে না, উল্টা হেটে চলে যায়, এভাবে জনৈক নায়ক দূরে পায়চারি করতে থাকে, আর আমরা আড্ডা দেবার ভান করে বসে থকি, এই দিকে জনৈক নায়িকাতো অন্ধকারের মধ্যে আমাদেরকে নায়ক ভেবে জানালায় দাঁড়িয়ে আছে !!! আমরা জনৈক নায়ক আর দোস্তের কান্ড দেখেতো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি, হা হা হা

আমিও ম্যজিক আর জনৈক নায়কদের করুন অবস্থা দেখানোর জন্য রবিন, জুয়েল, রিপু, হিরু, ছামির, রিপন, পরাগ সবাইকেই একে একে দাওয়াত দিলাম।

এভাবে ৫/৬ দিন ডিস্টার্ব করার পর একদিন দেখি কাশীতে কাজ হচ্ছে না !!! ঘটনা কি ? শুকনো কাশিতে কাজ হয় না কেন !!!! তাহলে কি সংকেত পরিবর্তন হয়েছে ? কোন সমস্যা না শুকনা কাশি যখন বের করা গেছে, নতুন সংকেতও বের করা যাবে। ২ দিন আর ডিস্টার্ব করলাম না, জায়গা ছেড়ে দিলাম, এতে কাজ হলো। ময়দান খালি পেয়ে জনৈক নায়ক আর দোস্ত ঐ জায়গায় এসে, দিলো মুখ দিয়ে বাশির মত করে ২ টা সাউন্ড, হা হা হা !!! আর যায় কোথায় !!! মন্ত্র প্রকাশ পেয়ে গেছে !!! পরদিন আবার একজনকে নিয়ে এসে দিলাম মুখ দিয়ে সেই বিখ্যাত বাঁশি, আবার নায়িকা হাজির !!! আবার ডিস্টার্ব শুরু, এভাবেও কয়েকদিন ডিস্টার্ব করার পর, মনের ভিতরে একটু মায়ার সঞ্চার হল। সবাই মিলে আলোচনা করে ভাইদেরকে ময়দান ছেড়ে দিলাম, আর ডিস্টার্ব করি নি কখনো।
ময়দান খালি পেয়ে জনৈক নায়ক ও নায়িকা মনের আনন্দে অন্ধকারের মধ্যে অবয়ব দেখে প্রেম করিতে লাগিলো !!!

আবোল তাবোল অনেক কিছু’ইতো এখানে শেয়ার করলাম, আসলে যখন লিখি ভালো খারাপ বুঝি না, সত্যি বলতে কি আমার চোখের সামনে জায়গাগুলো আর চেহারাগুলো ভেসে উঠে, যদি আকতে পারতাম মনে হয় প্রতিটা জায়গা একে দিতে পারতাম, আসলে কলোনির খুব সামান্য / ক্ষুদ্র কিছু’ই আমরা সবাই এখানে শেয়ার করতে পেরেছি।

মাঝে মাঝে কলোনির এই সমস্ত কান্ড মনে হলে, নিজের’ই বিশ্বাস হই না !!! মনে হয় আমরা CSM কলোনি নামক কোথাও কখনো থাকতাম না !!! সব কিছু’ই স্বপ্ন !!!!

No comments:

Post a Comment