Friday, December 4, 2015

টি শার্ট

 -       -  Iftee Nomi 

বছর পাঁচ কি ছয় আগের কথা আমার স্কুলের কম্বাইন্ড রিইউনিয়ন এর কথা শুনতে পেলাম আমারে ষ্টিল মিল স্কুল/ কলোনি একবার ডাকলেই হলো কোথায় কি আছে দেখার সময় নেই , একদম উসাইন বোল্টের মতো করে দৌড় শুরু করি তারুপর আবার জাহাঙ্গির/রায়হান/ কাইজ্জা যাবে আমারে আর পায় কে ? প্রতিদিন আমরা প্ল্যান করি , সময় যেন কাটছেই না চিটাগং এর আলো বাতাস এর স্পর্শ পাবো সব বড় ভাই বোন দের সাথে দেখা হবে উফ ভাবতেই কেমন জানো লাগছে ভাবতে ভাবতে এক সময় আমাদের রিইউনিয়নের সময় হয়ে গেলো , রিপক আমাদের ফ্রেন্ডের জন্য ট্রেনের টিকেট কেটে আনলো কিন্তু প্রোগ্রাম হচ্ছে শীতের সময়, এক দম হাড় কাপুনে শীত জাহাঙ্গির বগুড়া থেকে আমার বাসায় এসে বলে দোস্ত টঙ্গিতে শীত কম থাকলেও একেবাড়ে কম না তুই ফ্লিসের কম্বল টা নিয়ে নে


আরে বাপ রে এমনিতেই এক গাদা সুয়েটার নিলাম আবার কম্বল ?
জাহাঙ্গির এর কথা শুনে আমারে আমার মা বাধ্য করলো কম্বল সাথে নিতে আমি আবার শীত সহ্য করতে পারি না নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয় এয়ার পোর্ট ষ্টেশনে আমি রিপক জাহাঙ্গির রায়হান অপেক্ষা করছি তো করছি , সুবর্ন আপুর (ট্রেন) এর দেখা নেই নয়টার ট্রেন কয়টায় আসে প্রবাদ টা প্রমান করতে যেন রাত দুইটা বেজে গেলো তবুও আসছে না রিপক বলল কিরে চা খাবি ?
আবার জিগায় ?
চা খাচ্ছি আর গান শুনছি রায়হান গান গাইছে ...
রিপক এর স্বভাব সুলভ জোকস চলছে , শীত তাড়ানোর জোকস শুরু হতেই জাহাঙ্গির হাসতে হাসতে সব চা আমাদের গায়ে ভাবে ঢেলে দিলো

হারামজাদা এই শীতে এখন ড্রেস চেঞ্জ করবো কেমনে ? আর আমার টিশার্ট টা বরবাদ করে দিলি তুই ? আমাদের রাগ আবার অয়েদার এর সাথে উঠানামা করে একটু পরেই শেষ হয়ে যায় যাই হোক টিশার্ট এর মায়া ছেড়ে আবার আড্ডায় মশগুল হলাম স্মৃতিচারন করতে থাকলাম আমাদের ষ্টিল মিল কলোনির সেই দিন গুলোর
হুট করে রিপক বিকট শব্দ করে " আইলোরে ...... "
সবাই ভেবছে ট্রেন এসেছে grin emoticon পরে বুঝতে পেরে সবাই মজা পেয়েছে
জাহাঙ্গির তোর মনে আছে ...... ভাইয়া প্রতি দিন বড় মাঠের কোনায় এসে মাইনাস করতো ?
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠ ...... ভাইয়ার কোনায় এসে কাজ টা করতেই হবে? ছেলেপুলেরা ছিল ফাজিলের হাড্ডি 

কোনায় দেয়ালে লিখে রেখেছিল
" ... ভাই প্লিজ এইখানে মাইনাস করবেন না, দুর্গন্ধ ছড়ায় "
রিপক আবার চিৎকার করে উঠলো " আইয়া পরছে "
রিপক তুই কিন্তু এইবার পাবলিকের মাইড় খাবি
পতেঙ্গার বীচে কত বড় ভাই দের দেখতাম আমাদের সামনে জিএফ নিয়ে ধরা খেতে , বেচারা রা আমাদের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্য কত আদর আপ্যায়ন করে যেতো , কত বড় ভাই দের দেখেছি নির্দিষ্ট জায়গাতে এসে আর যেতে পারছে না , কারো চোখে বালি পরেছে কারো স্যান্ডেল ছিড়ে যাচ্ছে grin emoticon
কলোনীর নারকেল গাছ গুলোতে সুজা নামের এক লোক উঠলেই আমরা সুজি বলে ক্ষেপাতাম ? গাছ থেকেই দা/ছুড়ি ছুড়ে মারতো ?
এইবার দেখলাম আমাদের বোকা বানিয়ে আরেকটা গ্রুপ বলছে "আইছে রে"
কম্বলের নিচে থাকতে থাকতে চুল গুলো কেমন বসে গেছে একটু স্পাইক করে আসি বলে ওয়াসরুমে গেলাম

নমি তুই কোন ভাবেই শুভ ভাই ( ৯৬ ব্যাচ) রে কপি করতে পারবি না , টিপু ভাই এর মতো চশমা পরছিস হাহাহাহা কোথায় শুভ ভাই/ টিপু ভাই আর কই তুই frown emoticon তুই বরং বান্দর রে ফলো কর বলেই চলল জাহাঙ্গির
শুভ ভাই রে আমি কোন দিক স্পাইক করতে দেখি নাই রে জাহাঙ্গির , আল্লাহর এই বান্দা একবার মুখ খুললে আর বন্ধ হয় না আর পেটে কিছুই থাকে না জাহাঙ্গির ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে ওর বাচ্চা হতে ১০ মাস লাগতো না আমি কনফার্ম tongue emoticon

হঠাত করে লাইট গুলো অফ হয়ে গেলো ঢাকা আমাদের বিদায় জানানোর জন্য কি লোড শেডিং করে দেখালো ? লোড শেডিং কি আমাদের ম্যামরি তে কখনোই ছিল না , যদিও বছর / পর কোন কারনে কোন দুর্ঘটনায় ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায় আমাদের আর কে ঠ্যাকায়? পড়াশুনা সব বন্ধ সবাই ঘর থেকে বেড় হয়ে আড্ডা মারতো কেউ কিছু বলতো না পরের দিন স্কুলেও পড়া ধরতো না যা এখন প্রায় রুপকথার গল্প কথা বলতে বলতে ট্রেন চলে এলো আমরা যথারিতি উঠলাম উঠে আবার আড্ডা চলতেই থাকলো ,কেউ একটু ঘুমিয়ে পরলেই রিপক সিট ছেড়ে উঠে দোস্ত তুই ঘুমিয়ে গেছোস , ঘুমানো কইলাম যাইবো না , রি ইউনিয়নের বাতাশ বলে কথা ,মামা আমরা ঘুম ঢাকায় ঢাকনা দিয়ে আসছি যে ঘুমাইবো তার গায়ে পানি পরবো , শীতের রাতে ঠান্ডা পানি গায়ে পরলে কেমন লাগে বুইঝা চোখ বন্ধ করিস বলে frown emoticon

রি ইউনিয়ন এর ইভেন্ট শুরু হবে হবে করছে তখনো আমরা চিটাগং পোছাতে পারি নাই ইমরুল ফোন করে জিজ্ঞেস করলো আর কত সময় লাগবে ? আমাদের ্যালি শুরু করতে হবে? আমি তোদের জন্য বড় জোর আর ২০/২৫ মিনিট আটকাতে পারবো এর বেশি কোন ভাবেই পারবো না

আমার আফসোস আর দেখে কে? ইশ মজার একটা বড় আইটেম মিস হয়ে যাবে? আমাদের আরো দুই ঘন্টা লাগবে তোরা ্যালি শুরু কর আমরা পরে জোয়েন করবো

আমরা নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে জোয়েন করলাম , আমাদের দেখেই ইমরুল ঝাপিয়ে পরলো ?
তোদের এই অবস্থা কেন ? আয়নায় দেখ কেমন দেখাচ্ছে?
আরে ভাই ১২ ঘন্টা জার্নি করে আমার চেহারা কি সোলেমান খানের মতো দেখাবে নাকি?
যা তোরা হোটেলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয় ২০ মিনিটের মধ্যে ফিরবি
আর নে ধর রি ইউনিয়নের টিশার্ট এইটা পরে নিস
উফ রি ইউনিয়নের টিশার্ট হাত বুলাতেই কেমন জানি আনমোনা হয়ে গেলাম কি জানি আছে এই টিশার্টে ? আমার ষ্টিল মিল আমার স্কুল আমার ফ্রেন্ড আমার ...... সব কিছু
এত ঢং করিস না ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে এমনিতে দেখতে বান্দরের মতো তার উপর ১২ ঘন্টা জার্নি করে হইছোস খচ্চর এই চেহারা নিয়ে কাব্য চর্চা করে - জাহাঙ্গির বলেই যাচ্ছে
আমরা সব একি টিশার্ট পরে জোয়েন করলাম রি ইউনিয়নে লাঞ্চ করলাম প্রোগ্রাম জমে উঠছে পচাতে শুরু করছি আবার সমানে পচতে শুরু করেছি রাজিব এর কথা টা খুব মনে পরছে ষ্টিলার রা সব একি প্যাটার্নে তৈরি আমি যেভাবে কথা বলি গ্রুপের জনি ( নিয়াজ মোর্শেদ ) একি ভাবে স্মৃতিচারন করে অন্যরাও কাছা কাছি টাইপের আমি যেভাবে পচাই আমারে কিভাবে যেন একি ভাবে একি গল্পে হাস্যকর করে দেয় বুঝতেই পারিনা

লাঞ্চের পর আমাদের প্রোগ্রাম শুরু হলো আমাদের রায়হান পারফর্ম করলো রায়হানের পারফর্মের সময় সব ফ্রেন্ড রা টিশার্টে সাইন করে দিচ্ছে কেউ কলোনি তে থাকার সময় বাতাসে রটে যাওয়া ডায়লোগ লিখে দিচ্ছে আমার ক্যাপ টাও রক্ষা পেলো না আমি ভাবছি এই রিইউনিয়ন এক সময় স্মৃতি হয়ে যাবে ্তখন টিশার্ট টা আমাকে সেই গল্প মনে করিয়ে দিবে ভাবতে ভাবতে স্ট্যাজ থেকে আমারে ডেকে পাঠালো আমি কাজ শেষ করে আবার ফিরে আসতে একটা ছোট বাচ্চা আমার ক্যাপ টা চেয়ে বসলো

আহ এই ক্যাপ টা চেয়ে বসলো ? ক্যাপের মায়ার চেয়ে বাচ্চা টার চোখের চাহনি আমাকে বেশি স্পর্শ করলো ক্যাপ টা বাচ্চা টারে দিয়ে চলে এলাম এইবার আরেকটা ছেলে আমার টিশার্ট টা চাইলো , ক্লাস সেভেন কি এইট এর স্টুডেন্ট হতে পারে ছেলেটা কি জানি টিশার্ট টা পরে হয়তো রায়হান /জাহাঙ্গির কিংবা সৌরভ হয়ে সৌরভ ছড়ানোর জন্য আমার কাছে এসেছে টিশার্ট না দিয়ে চলে আসতে পারতাম কিন্তু এইটা আমাকে সারা জীবন অনুশোচনার বেড়াজালে আটকে দিতো দুইটা বাচ্চা কেই দেখলাম টিশার্ট/ক্যাপ পেয়ে এক তৃপ্তির হাসিতে ভেসে যাচ্ছে এত দিনে আমার ক্যাপ/ টিশার্ট বাচ্চা গুলো হয়তো নষ্ট করে ফেলেছে, তাতে কি টিশার্ট/ক্যাপ বাচ্চা গুলো্রে দিয়ে যে আনন্দ পেয়েছি তাই হয়তো আবার নতুন করে স্পন্দিত হতে শুরু করেছেষ্টিলার দের পালস একবার আন্দোলিত হতে শুরু করলে চারিদিক কেপে উঠে, বেচে থাকলে আগামি ২৯ জানুয়ারির আড্ডাতে আবার সেই রি ইউনিয়ন ফিরে পাবো ফিরে পাবো আমার কলোনি, আমার স্কুল,আমার পুকুর পাড় , হয়তো আরেকটি টিশার্ট...


No comments:

Post a Comment