Saturday, October 24, 2015

আড্ডা



সেই দুপুর দুইটাতে বাসা থেকে বেড় হলাম। বুবুর সাথে দেখা হবে একটু বেশি এক্সাইটেড ছিলাম। আতিক ভাই ফোন করল।
কিরে হারামজাদা আজ কে যদি অফিসের দোহাই দেস তোরে কইলাম ঢাকা শহর থেকে বাহির কইরা দিমু। তোরে ঢাকা থেকে বাহির করে দিলে চিটাগাং এর সবাই কাইট্টালাইবো ?
জ্বি ভাইয়া , আমি অলরেডি বাসা থেকে বেড় হয়ে গেছি?
এত তাড়াতাড়ি বাহির হইছোস কেন ? নাকি ঘর থেকে বেড় করে দিছে ?আরে হারামজাদা এত তাড়াতাড়ি বেড় হইছিস তোরে লাঞ্চ করাইবো কে ? মাগনা পাইলে তোরা আবার আলকাতরাও চাবাইয়া খাস ?
ভাই আমি ভেজিটেরিয়ান
বাচাইলি, তোর ভাবিরে কমু কিছু ঘাস কাইটা আনতে ?
ঘাস দিয়ে স্যান্ডউইচ বানায় আনতে বইলেন

আমি সময় মতোই পৌছালাম। কেউ আসে নাই। পাঞ্জাবি পরা দারুন স্মার্ট একজন বসে আছেন একটু মিলিয়ে দেখলাম উনি রেজা ভাই না। তাহলে অন্য কেউ হতে পারে। একটু পর সেই ভদ্রলোক আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকল । আরে ভাই আমাকেই ডাকছে কনফার্ম হলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করলো , তুমি নমি?
আমি কখনোই পপুলার কেউ ছিলাম না কিন্তু এই নাম খুব কমোন ছিল না বলে মোটামুটি কনফার্ম উনি আমাকে চিনতে পেরেছেন। দেখতে যেমন স্মার্ট ,কথায় কাজে মননেও তাই । পরিচিত হলাম। উনি আমাদের রফিক ভাই। তারপর একে একে আসলো আপেল , নাসের । আপেল নাসের কে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। ছেলে দুইটা অনেক হেল্প ফুল। অনেক চেষ্টা করেও আপেল/ নাসের হওয়া যায় না । এরা ইউনিক। অনেক ভালোবাসা থাকলো এদের প্রতি । তারপর আসলো বিউটি কুইন রনি আপু , এত সাজুগুজুর দরকার ছিল না রনি আপু এমনিতেই দুর্দান্ত । তারপর আমাদের আতিক ভাই ভাবি ও জাবেদ ভাই আসলো।
আতিক ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন নইম্মা তোর ভাবি
আল্লাহ রে আল্লাহ এইডা ভাবি হইলে কাল কে যেইডার লগে পরিচয় করায় দিলেন ঐডা কেডায় ?
হারামজাদা আগুন লাগাইস না।
রেজা ভাই আসলো। এসেই ঈদ মোবারক শুরু করলো

জাবেদ ভাই কে দেখে অনেক ভালো লাগলো , শত হলেও তো আমরা একি পথের পথিক আবিয়াত্তা

আমরা দুই জন দুইজনের কষ্ট বুঝবো । আহ বেচারা কষ্টে দুঃখে কথা বলাই কমিয়ে দিয়েছে । জাবেদ ভাই এর সব কথা যেন বলার দায়িত্ব নিয়েছে শায়লা। এই মেয়ে যতক্ষন ছিল বক বক করেই গেছে । বুবু এসেই আসর গরম করে দিলো। হুদা কথায় কতক্ষন হাসা যায়


আতিক ভাই বুঝেই বার্গার পেষ্টি আমার জন্য ঘাস ওয়ালা (ভেজিটেবল ) স্যান্ডউইচ এর অর্ডার দিলেন।
আইজ আমি সব খামু মুহাহহাহহহহহাআআআ বলে বিসমিল্লাহ করলেন
বুবু আর খাইয়েন না । আপনার হাই প্রেশার
এরই নইম্মা প্রেশার বাইড়লে সুরুজ্জা সারা রাইত জাগি সেবা করবো , তোগো ফুরুষ মানুষ দি কাম করাইতে যে কি আরাম এইডা তুই বুইজতি নো। ঐ শায়লা নোট করি রাখ সপ্তাহে দুই চার দিন জামাইরে দি সারা বাড়ি ফরিষ্কার করাবি .
রেজা ভাই একটু উঠে ভাবির সাথে কথা বলতে গেলো, আহ বেচারার দিকে তাকিয়ে মনে হলো বুবু মতো ভাবিও সারা সপ্তাহের কাজ আজকে রেজা ভাইরে দিয়ে করাইছে


রিপন ভাই আসলো, এত হাঁসি খুশি মানুষ আমি সারা জীবনে খুব কম দেখেছি। উনি এসেও রেজা ভাই এর ছোট বেলার গল্প বলা শুরু করেছে। রেজা ভাই এর লুঙ্গি বিষয়ক গল্প বলতে হলে আমাকে এডমিনের পার্মিশন নেওয়া লাগবে নয়তো কেলেংকারি লেগে যেতে পারে ।
ঐ নইম্মা তুই তোর ভাবির কাছ থেকে দূরে সরে বস, তুই সুমন্নার ভাই তরে বিশ্বাস নাই
জ্বি ভাইজান । ভাবিদের সাথে আড্ডার মজাই আলাদা এইটা আপনি বুঝবেন না। ভাবি আসলেই দারুন , আমাদের আড্ডায় মজা পাচ্ছেন , রাগ করছেন না। আতিক ভাই এর বাচ্চা টা বেশি লক্ষি । আলেমের ঘরে জালেম হয় কথা টা একদম পারফেক্ট। আতিক ভাই এর ঠিক অপজিট ওনার বাবু । শায়লার বাবু আমার শায়লার চেয়েও একডিগ্রি বেশি তাহলে এই খানে ফর্মুলা মিল্লো না কেন? একটু ক্যাল্কুলেশান করে দেখলাম শায়লার হাসব্যান্ড আবার অতিমাত্রায় জেন্টেল ওনার বাবু আরো জেন্টেল হলে হিসাব মিলবে না


আড্ডায় অনেক সময় খেয়ে নিলো। ফেব্রুয়ারি তে আমাদের সত্যিকারের আড্ডার দিন ক্ষন চুড়ান্ত করতেই আমরা এক হলাম তার ভেন্যু নিয়ে বিশাল লেকচার হলো। আমি একটু বেকে বসলাম। আমার কাছে আমার কলোনি আমার প্রান, আমার হার্ট আমার স্কুল , এইখানে আমি আমার হক স্যার পেয়েছি , পেয়েছি মহসিন স্যার, আনোয়ার স্যার , মাহফুজ স্যার এর শাস্তি, এইখানে আমি জসিম ভাই নাজমুল ভাই কমু ভাই দের ভালোবাসা পেয়েছি, এই কলোনির পুকুরপাড় আমি কি করে ভুলে যাই ? এইখানে বড় ভাই দের প্রেম হতে দেখেছি , ছ্যাকা খেতে দেখেছি এক একটা ঘটনা আমার ডায়েরির এক একটা পাতায় লিখা আছে।
রেজা ভাই এর লজিক হচ্ছে তুই আমারে সি টাইপের মাঠ এনে দে, আমারে পুকুর পার দে , আমার মোল্লা রে এনে দে , এইখানে নারকেল গাছ ছিল সেই খানে আমাদের আড্ডার সময় টা ফিরিয়ে দে । সব মিলিয়েই আমার কলোনি , সব কিছু মিলিয়েই আমি ।
আমি বললাম রেজা ভাই কলোনি হচ্ছে হার্ট , নারকেল গাছ হলো কিডনি , ( কিডনির কাজ শরীরের অপ্রয়োজনীয় লিকুয়েড বেড় করে দেয়া। এই খানে তার রিহার্সেল কম হতো না

) হার্ট ব্লাড সার্কুলেশন করে বডি কে ধরে রাখে, ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক হলে কিডনি ভালো থাকে আপনার অক্সিজেন এর লেবেল ঠিক থাকবে ব্লা ব্লা ......
তারপর রেজা ভাই বললেন দেখ সিকুউরিটির অবস্থা তো বুঝতে হবে। এত মেয়ে থাকবে তোর বোন রা যাবে ভাগ্নি যাবে,এদের সিকিউরিটি /টয়লেট সব কিছু মাথায় রাখতে হবে।
লজিক সব দিক থেকে আসছিল। যাই হোক রেজা ভাই এর সাথে অনেক বড় সময় ডিবেট হলো। ষ্টিলারদের ডিবেট হয় প্রানবন্ত । আমাদের টাও তাই হলো। জুনিয়র বলে আমাকে উড়িয়ে দেয় নাই । আবার কলোনি কে ছোট করেও দেখে নাই । দুই জন দুই জন কে রিয়েলিটি বুঝাচ্ছিল । রেজা ভাই এর সাথে কথা বলতে আমার দারুন লাগছিল। মনে হচ্ছিল ডিবেট টা চলুক আরো কিছুক্ষন


নইম্মা তুই বেশি কথা কস একটু এদিক আয় , আমারে একটু হার্ড ড্রিঙ্কস খাওয়াবি ?
আতিক ভাই ভাবি আছে এখন হার্ড ড্রিঙ্কস ?
আরে আমি ডরাই নাকি । শুধু গ্লাসে করে এনে দিবি। ওভেন ফ্রেস এর সুইসাইড জোনে যাচ্ছি তুই নিয়ে আয়।
কি আর করা নিয়ে এলাম । আতিক ভাই এক চুমুকে শেষ করেন ভাবি আপনারে খুজতেছে
মুহহহাহহাআআআআআআ..... এরে নইম্মা তুই আমারে কি খাওয়াই দিলি । আমি তো চোখে কিছু দেখতেছিনা
কি বলেন বস ?
আমারে একটু ধর কেমন জানি লাগতেছে
আমি আর জাবেদ ভাই মিলে খাওয়াইলাম ডাবের পানি উনি এতেই মাতলামি করতেছে ? এতো দেখি পুরান পাপি। আমাদের চেয়েও দুই ডিগ্রি বেশি
তুই আমারে হার্ড ড্রিংকস কি শেখাস ? হারামজাদা
তুমি হার্ড ড্রিংস কি জানো ? ভাবি চোখ বড় করে ফেললেন
আরে না এই হারামজাদা গুলি মসকারি করতেছে বুঝো না কেন ?
কি করে ওরা ওদের মতো লক্ষি আর আছে নাকি
আমারে নিয়ে কবিতা লিখে
“নাম আমার আতিক
ঘড়ি চলে টিক টিক
Some One special is my এন্টিবায়েটিক”
আর লিখতে দেই নাই , কবিতা কোন দিকে ছুটে যায় বলা তো যায় না
কফি এলো। বুবু হুঙ্কার দিলো শুধু কফিতে কাম হইতো নো । আর কফির লগে টফিও লাইগবো,আমাদের আড্ডা শেষ হতেই চায় না সন্ধ্যা হয়ে এলো, আজ সময়ের জন্য শেষ করে দিতে হলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পালা শুরু হলো । ডিসিশন হলো খুব শিজ্ঞির আবার আরেকটু বড় পরিসরে আড্ডা হবে। আড্ডার এজেন্ডা জাবেদ ভাই এর বিয়ে , এই আড্ডা চলতেই থাকবে ।

No comments:

Post a Comment