১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি । আমরা তখন থাকি স্টীল মিলের ই- টাইপে। সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি ব্রিস্টি। ১১ টা নাগাদ তা মূষলধারে। বাসা থেকে পুকুরটা দূরে না খুব। তাই ব্রিস্টি মাথায় নিয়ে পুকুরে দাপাদাপির নেশাটা পেয়ে বসলো। গামছাটা সাটের নীচে লুকিয়ে সোজা পুকুরপাড়।
পুকুরে নেমে দেখি বুলু-বাদল দু'ভাই (আমার বন্ধু/ক্লাসমেট)। তিন জন মিলে বরষন মূখর দুপুরে পুকুরে সে কী মাতামাতি আর দাপাদাপি। এদিকে যোহরের নামাযের ওয়াক্ত ঘনিয়ে এসেছে।মসজিদে হাজিরা না দিলে বাপের কাছ কইফিয়ত দেবার ভয়। আনন্দে ছেদ টেনে তাই তাড়াতাড়ি পাড়ে উঠার আয়োজন
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি----" মনের আনন্দে গান গেয়ে পাড়ে উঠছি,-পিছন থেকে পিঠের উপর এক ঘুসি। পিছন ফিরে তাকাতেই মুখের উপর আরেকটা।
-" ছালা ছোনার বাংলা গা তা হে"
-বলেই আরেটা।
আমি মার খেয়ে একেবারে হতোভম্ব। তবুও ফিরতি একটা দিতে যাব এ সময় এক মুরব্বী এসে থামিয়ে দেয়ে বললো-
-তুমি সোহরাব সাহেবের ছেলে না?
কাদতে কাদতে বললাম -জী
-বাবা, মারামারির দরকার নেই। ও আফ্রিদি সাহেবের ছেলে, পাকিস্তানি,পাঠান। তুমি বাসায় যাও,আমি তোমার আব্বাকে বলবো।
আমাকে কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে তিনি আমাকে হাত ধরে বাসায় পোউছে দিলেন।
রাগে,অপমানে খুব মন খাপ হলো। তবুও পতিশোধের আগুন জিইয়ে রাখলাম মনে।
ডিসেম্ব্রর মাস এলো। এর মধ্যে বুঝে গেছি-মুক্তিযুধ্য,সাধীনতা, বাংলাদেশ--অনেক কিছু।
সম্ভবত ডিসেম্ব্রেরের প্রথম সপ্তা। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে হাটতে হাটতে পুকুর পাড়ে এসে শুনতে পেলাম সিকিউরিটি অফিসার "আফ্রিদি' সাহেব পরিবার পরিজনসহ পাকিস্তানে পালিয়েছে।
মসজিদের পাশের সি- টাইপে থাকতো প্রতাপশালী সেই পাঠান। কলোনীর সবাই যাকে যমের মত ভয় পায়। পরাক্রমশালী এই অফিসারের পালানোর ঘটনা হয়তো সাধীনতার ইংিতবহ -এটা আমার মত পুচকেও বুঝে গেছে ততক্ষণ।
যহোক, ডি - টাইপে থাকতো আমার দু'বছরের সিনিয়র সরোয়ার ভাই। মহা আনন্দে তাকে খবটা দিয়ে দু'জনে যুক্তি করে সি - টাইপে সিকিউরিটি অফিসারের বাসায় গিয়ে তালা ভেঙে গনিমতের মালের মত সোকেস থেকে সব জিনিস নামিয়ে দু'টো পরদার কাপড়ে তা বেধে বাসায় ফিরলাম যুধ্য জয়ের আনন্দে।
আর ফিরার সময় দেয়াল থেকে ফ্রেমে বাধা একটা ফ্যামিলি ছবি নামিয়ে দু'পায়ে তা কচলে এসেছিলাম।
।
-এটা ছিল আমার পুকুর পাড়ে মারের প্রতিশোধ।।
No comments:
Post a Comment