Tomorrow is a big match PAKISTAN VS BANGLADESH ICC T20 WC..Keeping that in mind an old write up is posted here.
উড়াতে চাই টেস্ট জয়ের পতাকা; লর্ডসে (LORDS) কিংবা এমসিজিতে (MCG) :
স্বাধীনতার পর পর আবাহনী ক্লাব যখন বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ধারার প্রবর্তন ক’রে খেলাটিতে প্রানের সঞ্চার করেছিল তখন থেকেই খেলাধূলার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি। বাবার চাকুরী সূত্রে কলোনী জীবনে বড় হয়েছি। বাসার পাশেই ছিল অফিসার্স ক্লাব। সেখানে ছিল ইনডোর আউটডোর নানা রকম খেলার সুবিধা। তাছাড়া চট্টগ্রামের প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগেরও একটা টীম ছিল আমাদের। লোকাল প্লেয়ার ছাড়াও ঢাকা আবাহনীর সালাউদ্দিন, টুটুল, চুন্নু এরা খেলতে যেত স্টীল মিলের ফুটবল টিমের পক্ষে। অফিসার্স ক্লাবের পাশের রেস্ট হাউসে তাদের থাকার ব্যবস্থা। আমরা ক’জন কিশোর বন্ধু ওদের আশ পাশে ঘুরঘুর করতাম দিনমান। তখন অটোগ্রাফের কথা মনে আসতো না তবে এত কাছ থেকে অতোবড় প্লেয়ারদের দেখতে পাওয়ার থ্রিল অনুভব করতাম প্রচন্ডভাবে।
ঢাকায় প্রথম বিভাগ লীগের বড় বড় ম্যাচগুলো বিশেষ করে আবাহনী – মহামেডানের ম্যাচ দেখতে কলোনীর ক’জন বন্ধু মিলে চলে আসতাম ঢাকায়। শুধু আমরা কেন? এলাকার যে সেলুনে চুল কাটাতাম সেখানকার একটা ছেলে- বাবুল শীল, সেও আসতো আমাদের সাথে। চুল কেটে যে ক’টি টাকা উপার্জন করতো তার একটা বড় অংশই বরাদ্দ থাকতো ঢাকায় এসে খেলা দেখার জন্য। ঢাকা স্টেডিয়মে তখন প্রচুর দর্শক হতো। টিকেট পাওয়া নিয়ে মারামারি, হাতা-হাতি
হতো। দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটের আলোয় খেলা দেখার বিষয়টা ছিল দারুন উপভোগের। প্রিয় টীমের জয় পরাজয়ে আনন্দ-বেদনার কাব্য রচিত হত দর্শক হৃদয়ে। নব্বই দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত সেই ফুটবল ক্রেজ বাংলাদেশে বিরাজমান ছিল। তারপর ধীরে ধীরে ক্রিকেটের উথ্থান আর ফুটবলের পতন।
এমসিসি’ই বাংলাদেশে ক্রিকেটের প্রেরণাদায়ক সংস্থা। তারপর ডেকান ব্লুজ, পিআইএ, ওয়েষ্ট বেঙ্গল ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন, শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলসহ অনেকেই আমাদের ক্রিকেট চর্চায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল। মনে আছে শ্রীলঙ্কা তখনও টেষ্ট স্টেটাস পায়নি। রানাসিংহ এর নেতৃত্বে আসা সেই টীমের কাছেই আমরা তিন দিনের আনঅফিসিয়াল টেষ্ট ম্যাচটি হেরেছিলাম ইনিংস এর ব্যবধানে।
সম্ভবত আশি সালের কথা। পাকিস্তান ক্রিকেট টীম তখন ভারত সফর করছিল তাদের মধ্যকার অনেক দিনের ক্রিকেট বান্ধ্যত্ত্ব ঘুচিয়ে। এই সফরের ফাঁকে বিসিবি’র তৎপরতায় সংক্ষিপ্ত সফরে তারা একটা ম্যাচ খেলেছিল চট্টগ্রামে। যদিও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের বিতর্কিত আচরণ আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিলে খেলাটি মাঝ পথে পন্ড হয়েছিল। গোন্ডগোল থামাতে পুলিশকে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়েছিল। আর আমি সে গোলমালের ভিতর পড়ে গ্যালারীর প্যান্ডেলের বাঁশ বেয়ে নামতে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ক’দিন বিছানায় কটিয়ে ছিলাম।
সেই ক্রিকেটে আমরা আজ ইংলিশদের হারিয়ে ওয়ার্ল্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। কি আনন্দ, কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে আমার বাসায় পুচকে ছোকড়াটা পর্যন্ত আনন্দে উদ্বেল। অনেকদিন পরে জাতি হিসাবে আমরা একটা উপলক্ষ পেয়েছি – উদযাপনের।
ছোট বেলা থেকেই প্রতিদিন চার-পাঁচটা পত্রিকা পড়া আমার অভ্যাস। শুরুটা করি খেলার পাতা
দিয়ে। তারপর আসি প্রথম পাতার অন্য খবরে। চেক লিষ্টের মত প্রথমে দেখে নেই কোন্
কোন্ চ্যানেলে কি কি খেলার সরাসরি সম্প্রচার। তরপর দিনের প্রোগ্রামটা রচনা করি
সেভাবে যাতে গুরুত্বপূর্ণ কোন খেলা মিস না করি। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বয়সে এসব ঠিক
না। ঘর থেকেও বাধা আসে। তখন বুদ্ধি বের করি কিভাবে সবাইকে সম্পৃক্ত করে খেলাটা
উপভোগ করা যায়। ছেলেরাও অনেকটা আমারই মত। কখনও কখনও রাত জেগে ওদের সাথেই
উপভোগ করি ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, বাস্কেটবল। সেই বায়োস্কোপের নেশার মতই; খেলা
দেখার নেশাটা যেন কিছুতেই কাটে না।
কথা বলছিলাম ক্রিকেট নিয়ে। বাংলাদেশ অনেক সাধনা করে টেস্ট স্টেটাস পেয়েছে। দুর্গম এ
পথ চলায় মাঝে-মধ্যে হোচট খেলেও থেমে যায়নি। দলের সাম্প্রতিক পারফরমেসে মনে হয়
টীমটা এখন অনেকটাই ধাতস্থ হয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং এ মোটামুটি একটা ব্যালেন্স এসেছে।
ফিল্ডিং এ উন্নতি করতে হবে আরো। ব্রাডম্যান, লিলি, সোবার্স, রিচার্ডস, লারা,
গাভাস্কার, বথাম, বর্ডার, ইমরান, হ্যাডলি, সদ্য অবসর নেয়া লিজেন্ড টেন্ডুলকার সবাই
এখন অতীত। তবে এর মধ্যেই কত পরিবর্তন হল ক্রিকেটে। ক্যারী প্যাকার থেকে যে
বিবর্তনের শুরু তা ক্রমাগত পরিবর্তনের ধারায় বহমান। টেস্ট ছাড়াও ওডিআই, টি২০, সিক্স
এ সাইড, সিঙ্গেল ইউকেট- একটি খেলায় কত ফরম্যাট উদ্ভাবিত হল এই সাম্প্রতিক
সময়েই।
সরা দিনের অলস খেলাটিকে গতিশীল করতে, আকর্ষনীয় করতে প্রতিনিয়ত নিয়ম কানুনে
পরিবর্তন আসছে। তার ভিতর আবার বাণিজ্যিকিকরণ, কাড়ি কাড়ি পয়সা আর যশ কামানোর
হাতছানি। ক্রিকেট কুটনীতি, বেটিং, ফিক্সিং– নানা কিছু ক্রিকেট খেলোয়াড়দের বিতর্কিত
করলেও মানুষের কাছে খেলাটিকে করেছে মহিমান্বিত। ক্রিকেট তাই এত আনন্দের, এত
গৌরবের।
কত বিচিত্র স্বপ্ন থাকে মানুষের। টাইগাররা আমাদের স্বপ্নের মুকুটে আজ একটি পালক
জুড়ে দিয়ে সমগ্র জাতিকে স্বপ্ন বিলাসী করে তুলেছে। আমি এখন স্বপ্ন দেখি লর্ডসে কিংবা
এমসিজিতে টেষ্ট জয় করে সৌরভের মত জার্সি নয়, সাকিব – তামিমরা উড়াবে লাল সবুজের
পতাকা। আর সেই বিজয়ের দিনে আমি যেন মাঠে থেকেই দেখতে পারি বিজয়ের বাধভাঙ্গা
উল্লাস, শুনতে পারি বাঘের গর্জন।
জীবদ্দশায় সে স্বপ্ন পূরণ হবেতো ?
No comments:
Post a Comment