Tuesday, March 15, 2016

মানুষের মজ্জাগত স্বভাব হচ্ছে সস্তায় ভাল মাল কিনে ফেলা


মানুষের মজ্জাগত স্বভাব হচ্ছে সস্তায় ভাল মাল কিনে ফেলা, বরং বলা উচিত কিনেফেলার চেস্টা করা। পশ্চিমা দেশগুলোতে অহরহ লেগে থাকে ‘সেল’। দশ টাকার মাল পাঁচ টাকায় ফ্যাশন একটু পুরানো হলো কি সেটার দাম কমেগেল। আমার ধারনা-বিদেশে থেকে যারা জামা কাপড় ও অন্যান্য জিনিস আনে-তা বেশির ভাগই ‘সেল মার্কা দোকান থেকে’। এবার মুল ঘটনায় আসি। তাপসের চাচা-নারায়নগঞ্জ থেকে বেড়াতে এসে যাওয়ার সময়-তাপস কে জুতা কেনার জন্য 500টাকা দিয়ে গেল। অনুপ, তাপসকে বুদ্ধি দিল রিয়াজ উদ্দিন বাজারের ভিতরে রিডাকশনের দোকান থেকে ভাল জুতা অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। 

কিন্ত অনুপ এর শর্ত হলো-চিম্বুক রেস্তরায় বিরানী ও ফিন্নি খাওয়াতে হবে। আর কিছু টাকা রাখা হবে সিনামা দেখার জন্য। তাপস জুতা পছন্দ করে ফেলল- দামটা নাগালের মধ্যে। আরেকটা জুতা তাপসের পছন্দ হয়েছিল-তার দাম এর থেকে বেশী। অনুপ বললো-আগেরটাই বেশি ভাল হবে। আসলে অনুপ হিসাব করে দেখেছে-তাপস যদি বেশী দামেরটা কেনে তাহলে রেষ্টুরেন্ট ও সিনামার জন্য তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। রেষ্টুরেন্টে গিয়ে-তাপস জুতা বের করল দেখা গেলো একটা জুতা কালো অন্যটা হালকা খয়েরি। তাপস অবাক হয়ে অনুপ কে জিজ্ঞাস করল এ জুতা পড়ব কি করে? অনুপ বলল কোন অসুবিধা হবে না, কালোটাকে একটু ব্রাউন কালি দিয়ে আর খয়েরিটাকে একটু কালো কালি দিয়ে পালিশ করে নিস, ব্যালেন্স হয়ে যাবে। তাপস অবশ্য সে কথায় ভড়সা পেল না। আবার গেলাম বদলাতে। দোকানের লোকের রক্ত চক্ষুকে কোন মতে সহ্য করে কোন মতে বের হয়ে এলাম। তাপস বাসায় গিয়া আবিস্কার করল-বাম পায়ের জুতা মনে হচ্ছে এক সাইজ ছোট। জুতা পায়ে হাটতে গেলে ব্যাথা লাগে। 


কাউকে কিছু না বলে তাপস জুতা জোড়া ঘরের এক কোনে রেখে দিল। কিন্ত দুই এক দিনের মধ্যে বাসায় জানা-জানি হয়েগেল। তাপস প্রথমে না বুঝার ভান করল। কিন্ত লাভ হলো না। কেস চলেগেল সি আই ডির হাতে অর্থাৎ খালাম্মার হাতে। আমাদের এফ টাইপের সবচেয়ে বুদ্ধিমতি মহিলা ছিলেন-খালাম্মা যেটা আমার বন্ধু-বান্ধব কিছুটা জানে। তিনি সেই হাফ রেটে কেনা জুতা দিয়ে-ফুল কোর্স ধোলাই দিয়ে-পেট থেকে বেড় করে ফেলেন আসল কথা। তারপর তাপসের উপর হুকুম জারি করলেন-ঐ জুতা পড়ে তাপস এফ টাইপের লম্বা বরান্দায় পাঁচবার আসবে আর যাবে। আমার আর অনুপের কলিজায় পানি নাই। প্রথম বার তাপস বলল-তার কোন ব্যাথা লাগে না। 

কিন্ত দ্বিতীয় বার হাটার সময় জালু কাকা বলল-কিরে তাপস তুই জিকির করছিস কেন? আসল কথা হলো বাম পা ফেলার আগে ব্যাথার আশংকায় তাপস উপর ওয়ালার নাম নেয় ‘‘আহা”। তার পর পাটা ফেলেই ব্যাথায় মৃদু আর্তনাথ করে বলে ‘উহ্’। সেটাই শোনায় জিকিরের মত আর কি। তার পরের ঘটনা লিখার মত নয়। তবে তার পরেও আমি বুজেছি-সস্তার মালই ভাল। কারণ একটা ঘটনা বললেই পরিস্কার হয়ে যাবে। ঢাকায় এখন ‘চেইন শপের ছড়াছড়ি’। ট্রলিতে ঠেলে বিদেশী কায়দায় কেনাকাটা। দাম দিয়ে বিশুদ্ধ মাল কিনতে তেমন আপত্তি থাকার কথা না। কিন্ত সেদিন ঐ রকম একটা দোকানের মালিক আর কর্মচারীর মধ্যে বাক্যালাপ আমার কানে এসেছিলো (আমি যে সেখানে ছিলাম সেটা তারা টের পায়নি)। 

দুর্ভাগ্যক্রমে-
আরে কী ব্যাপার পটলের এত চাহিদা, অথচ আমাদের শপে পোটল নেই কেন?
-স্যার সাপ্লাই আসেনি।
-লোকার মার্কেট থেকে নিয়ে নাও।
-কি বলেন স্যার! ওতে তো কিটনাশক থাকে। আমাদের স্টান্ডার নষ্ট হবে।
-আরে রাখ, আগে বেচে নাও তারপর ঐ সব দেখা যাবে।
সেইজন্য বলি বেশি দাম দিয়ে ঠকার চেয়ে রাস্তার পাশ্বের-‘‘লাগারে কাদিরা, দো দো আনার” মালই ভাল।

No comments:

Post a Comment