ক্লাস নাইনে উঠার আগে কলনি থেকে খুব একটা বের হতাম না। বড়জোর বাজার কিংবা হাউজিং কলনি। অর্থাৎ পতেঙ্গা এরিয়ার মধ্যে থাকতাম। নাইনে উঠার পর থেকে নিজেকে একটু বড় বড় ভাবা শুরু হয়ে গেছে। তখন পতেঙ্গা এরিয়া আর ভাল লাগেনা। ঈদ আসলে রমজান মাসে ষ্টীল মিল থেকে মার্কেটে বাস দিতো শপিং করার জন্য। মাঝে মাঝে কোন কাজ ছাড়াই বাসে উঠে মার্কেট থেকে ঘুরে আসতাম বন্ধুদের নিয়ে। আর ঈদ আসলে অসম্ভব খুশি লাগতো। কারন ঈদের দিন কিংবা পরের দুইদিন কোন বাধা ধরা নিয়ম ছিলনা। ইচ্ছে মত ঘুরতে পারতাম। বাসায় বাসায় গিয়ে সালাম করতাম।
ঈদ আসলে আরেকটা ব্যাপারে খুশি হতাম হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পরবো বলে। একবার এক ঈদে নামাজ পড়ার পর আমরা কয়েকজন সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে বের হলাম। ১২টা-৩টার শো দেখবো ( বিকালে দল বেঁধে বাসায বাসায় যেতে হবে তাই এই টাইমটা বেছে নিলাম)। ষ্টীল মিল বাজারে আসলাম বাসের জন্য। গন্তব্য সাগরিকা সিনেমা হল। কারন ঈদে তিনটা নতুন সিনেমা রিলিজ হইছে। একটা সাগরিকা, একটা সানাই, আরেকটা বনানীতে। তিনটার মধ্যে সাগরিকার টাই সুন্দর। আমরা ঠিক করলাম আপাতত সাগরিকায় যাবো। যথারীতি বাস আসলো। বাসে উঠেতো চোখ ছানাবড়া। কারন বাসে আগে থেকে বসে আছে আমাদের সকলের প্রিয় মালেক স্যার। উনি আরো বসে আছে পিছনের সিটে। উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে বাসের সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। উনি ডাক দিলেন আর বললেন বেটা সামনে দাঁড়াইয়া থাকি কি করবি আমার পাশে বস। কি আর করা আমতা আমতা করে বসে পড়লাম। বসার পর পরই উনি জিজ্ঞাসা করলো কই যাস? সিনেমা দেখতে? বললাম না স্যার আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে। উনি বললো আমি সব জানি। এই বয়সটা আমি পার করে আসছি না। উনি ভাড়া দিতে চাইলো। বললাম স্যার আপনারটা সহ আমরা দিয়ে দিই।
স্যার স্যারের ভাড়া দিয়ে দিলো কিন্তু আমাদের ভাড়া তখনো দিই নাই। কারন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কোথায় নামবো। স্যারকে দেখে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে ফকির হাট আসলাম। স্যার বললো এখানে নামবি? বললাম না। সাগরিকা পার হয়ে বারিক বিল্ডিং এ আসলাম সানাই সিনেমা হলের সামনে। স্যার আবার বললো এখানে নামবি? বললাম না। বাস তারপরে বনানীর সামনে আসলে স্যার আমার কান ধরে বলে নাম বেটা। স্যারকে বলি আমরা সিনেমা দেখবো নাতো। স্যার সত্যি বিশ্বাস করেছিল আমরা সিনেমা দেখবো না। বাস চলতে লাগলো স্যার টাইগার পাস নামলো। এখন আমরা কোথায় নামবো? নুপুর সিনেমা হল, জলসা এগুলোতে যাবো না। কারন সাগরিকায় যে ছবিটা চলে সেটা এদিকে খুরশিদ মহলে। বাস আবার লালদিঘীর পার যাবে না। তাই নিউ মার্কেট নামতে হবে। তারপর হকার মার্কেট দিয়ে সরাসরি খুরশিদ মহলে। আর দশ মিনিট দেরি হলে টিকিট পেতাম না। অতিরিক্ত বাস ভাড়ার কারনে সিনেমা হলের টিকিট মন মত পেলাম না। তারপরেও ভয়ে ছিলাম স্যারে কোন কিছু বুঝলো কিনা। যাক পরে এ ব্যাপারে স্যারে যখন কিছু বলে নাই তখন নিশ্চিৎ হলাম স্যার কিছু বঝতে পারেন নাই। আজ স্যার নেই কিন্তু স্যারের যেদিনের কথা গুলো এখনো কানে বাজে। আল্লাহ স্যার জান্নাত বাসি করুন।
No comments:
Post a Comment