Saturday, September 5, 2015

বিব্রত.......


মাঝেমাঝে পেপারে দেখি অমুক বিচারক বিচার পরিচালনায় বিব্রত বোধ করেছেন। তখন ভাবি বিচারক রা কিভাবে বিব্রত হোন।আমরা সাধারণ মানুষ বিব্রত হলে চেহারায় একটা কাচুমাচু ভাব থাকে, বিচারক দের ও কি তেমন হয়। থাক বাদ দেই এসব, বিচারক নিয়ে কথা না বলাই ভালো, কখন আবার আদালত অবমাননা কেসে পরি ঠি ক নাই, বরং নিজের কথা বলি।

নাইনে পড়ি, রোমিও রোগ ধরে ফেলেছে, উড়ু উড়ু ভাব,একদিন স্কুলে যাবার সময় আমাদের MD Younus খুব খাতির করে একটা পান খেতে দিলো, খাওয়ার দশ মিনিট পরে স্কুলের স্টেজের সামনে বমি করা শুরু করলাম (হারামজাদা পানে জরদা দিছিলো)ঠিক তখনি মেয়েদের শিফটের টিফিন ব্রেক শুরু (মেয়েদের ক্লাস তখন নিচ তলায় হোত) আমার এ অবস্থায় সবাই আতংকি, একজন বিব্রত আর আমি চিন্তিত এটা ভেবে যে আমি কি জীবিত না মৃত আর ওদিকে ইউনুস হারামজাদা উল্লসিত (আচ্ছা Moin Khan টলি ভাই ইউনুসের বিরুদ্ধে কি এ ব্যাপারে এটেম্পট টু মার্ডার কেস করা যাবে?)

বড় মাঠে ফুটবল ম্যাচ, আমি গোলকিপার, দুর্দান্ত কয়েকটি গোল সেভ করলাম, না আর পারলাম না, উহু আমি গোল সেভের কথা বলছিনা, বলছি আমার প্যান্ট রক্ষা করতে পারিনি, একটি গোল সেভ করতে গিয়ে জায়গা বরাবর প্যান্ট চিচিংফাঁক , ভাগ্য ভালো ভিতরে সেকেন্ড পারট ছিলো, এবং জার্সি লম্বা ছিলো। না হলে বিব্রতভাব চলতেই থাকতো, যে কারনেই হোক শেষ পয্য'ন্ত ৫ গোল খেয়েছিলাম, এবারে আমি বলতে গিয়ে আসলেই বিব্রত বোধ করছি, কারন আমার টিমের প্রধান বা মালিক ছিলো সুদি কাশেমের পোলা কোরবান আলি।

দু দিন জরে ভুগে খুব দুর্বল হয়ে গেছি, বিকালে আস্তে আস্তে হেটে সি টাইপ মাঠে যাচ্ছি খেলা দেখার জন্য, দেখি জুলিয়েট সখি পরিবেষ্টিত হয়ে মাঠের পাশে হেটে বেরাচ্ছে, আমি ড্রেন পার হয়ে মাঠে যাওয়ার পথে ধুপ শব্দ, মানে আমি ড্রেনে নিপাতিত, কারে বুঝাই যে আমি জুলিয়েট দেখে দুর্বলতায় নয়, জরের দুর্বলতা র কারনে ড্রেনে পড়েছি। ওদিকে সখি গন আমার পতনে পুলকিত, নাইকা (টলি ভাইয়ের দেয়া উপাধি) বিব্রত, মাঠের পোলাপাইন খেলা বন্ধ করে খুবি বিনোদিত, আর আমি তখনো ড্রেনে চুবিতো মানে ড্রেনে চু বা খাচ্ছি।

রোমান্স এখন আউট ডোরে চলছে, মানে কলোনির বাইরে খুব মাঞ্জা মেরে সবচেয়ে ভাল শার্ট প্যান্ট পড়েছি, কিন্তু কাউ য়ার সহ্য হলোনা, আমার উপর কাউয়ার বজ্য' নিক্ষেপ। আজো আমার মাঝে প্রশ্ন জাগে সেদিন কে সবচেয়ে বিব্রত হয়েছিলো, আমি নাকি ওই কাউয়া।

রোমান্স এবার ইনডোর এ, সিড়ি তে অগভীর ---- আমি আবারো বলছি "অগভীর "রোমান্স চলছে, আহ কি পবিত্র রোমান্স, ক্ষানিক বাদেই হাতেনাতে নাইকার মাতা কতৃক কট এন্ড বোল্ড, বিব্রত আমার পবিত্র রোমান্স।
রোমান্স এবার টেলিফোনে, Riman Babu র বাসা থেকে প্রতিদিন সকাল দশটায় নাইকার কাছে ফোন করি, নাইকার বাসায় ফোন না থাকায় তার বান্ধবী র বাসায় মেয়েলি কন্ঠে ফোন করে নাইকা কে এনে দেয় বন্ধু রিমান,এমনি একদিন জটিল টেলি রোমান্স চলছে, কঠিন সব রোমান্টিক ডায়ালগ সাপ্লাই দিচ্ছি, হটাত অপর প্রান্ত থেকে মহিলা গলার আওয়াজ "এ্যারে তুমি কে" অর্থাৎ নাইকার বান্ধবী র মা এর হাতে ধরা। সেদিন বোধ হয় সবচেয়ে বিব্রত হয়েছিলো রিমান দের বাসার টেলিফোন সেট টি।

যাক আমার আজকের এ লেখায় কেউ বিব্রত হয়ে থাকলে সত্যিই আমি আজ বিব্রত বোধ করব।
তবে সত্যিকার বিব্র‍ত হয়েছিলাম আমরা আমরা সাধারণ কলোনি বাসি ও সাধারণ চাকুরী জীবী রা সেদিন, যেদিন কিছু লুটেরাদের কারনে আমাদের স্টিল মিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।কারন ওই দিন আমাদের কস্ট পাওয়ার, দু:খ বোধ করার বোধ টি ও নস্ট হয়ে গিয়েছিলো, বিব্রত বোধ করা ছাড়া আর কোন পথ ছিলোনা আমাদের।।
with. Chand Sultana

হারানো স্বর্গ



প্রাচীন গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে আটলান্টিস নামে একটি নগর ছিল। বলা হয়ে থাকে নগরটি সমৃদ্ধিতে, সুখে আর স্বাচ্ছন্দে অতুলনীয় ছিল। এও বলা হয় যে আটলান্টিস ছিল স্বর্গের মত। পরে কোন একসময় আটলান্টিস পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। গ্রিক পৌরাণিকে আটলান্টিসকে হারানো স্বর্গ বলা হয়েছে। 

আজ সারাদিন বসে পেজের লেখাগুলো পড়লাম। কত স্মৃতি আর কত কাহিনি। কলোনির বিখ্যাত স্পটগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল লেখা পড়তে পড়তে। খালপাড়, গার্ড ব্যারাক, বুইজ্জার বাগান, টাঙ্কির তলা, বড়মাঠ, স্কুলের স্টেজ, জেকস, ইউনুস ভাইয়ের দোকান আর স্কুলের পিছনের সেই দরজাহীন বারান্দাটা (আমরা বলতাম ভুতের বারান্দা), আরো কত গুপ্ত আস্তানা। আমরা সুখে ছিলাম। নির্দ্বিধায় বলতে পারি আটলান্টিসের চেয়ে স্টিলমিল কলোনিতে সুখ বেশি ছিল। আটলান্টিসের মত আমাদের কলোনিও চিরতরে হারিয়ে গেছে। হারানো স্বর্গ যদি বলতেই হয় আমাদের কলোনিকেই বলতে হবে। ইতিহাসের লস্ট প্যারাডাইস আটলান্টিস নয়, স্টিলমিল কলোনি।

(আমি কলোনির পরিচিত মুখ নই। কলোনির অনেকেই আমাকে চিনবে না। এতদিন পর হয়ত কেউই আর চিনবে না। মানুষের মুখ ভুলে যাবার জন্য ১৫ বছর অনেক লম্বা সময়।)

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss