Wednesday, July 6, 2016

হারিয়ে যাওয়া এলোমেলো সময়গুলো


কয়েকদিন ধরে আকাশ যেভাবে অঝোর ধারায় কেঁদেই চলেছে মনে হচ্ছে ঈদের দিনটাকে উজ্জ্বল ঝলমলে রাখতেই আকাশের এই কান্নাকাটি। 

তারপরেও জানিনা কোন গোপন রহস্য, কোন গোপন বার্তা আকাশ মনে লুকিয়ে রেখেছে,কালকের জন্য!!!

কালকের আকাশ যতই উজ্জ্বল আর চমৎকারই থাকুক না ঈদের নামাজ শেষে কিংবা নামাজ না পড়েই নতুন কাপড় পড়ে ফুল সাহেব বাবুটি সেজে সাগরিকা কিংবা বনানী কমপ্লেক্সে ঢু মারা হবে না সেই ছোট্ট বেলাটির মত। কিংবা সবাই মিলে গ্রুপ বেঁধে ঈদের দিনটিতে কলোনীর অলিগলিতে ঘোরাফেরা কিংবা বন্ধু বান্ধবদের বাসায় গিয়ে খালা চাচীদের রান্না করা মজাদার সেমাই খাওয়া হবেনা। ঈদের দিন বেলুন বাঁধা বাশি কিনে সবাই মিলে কি পরিমান যে পে-পো রব তুলতাম তা সত্যিই বর্নণাতীত। আহারে কি মজার দিনই না ছিল। আরো যে কত কি..............

আমাদের সন্তানদের জন্য আফসোসই হয় যখন ভাবি ওরা কত কিই না মিস করছে! ওদের ঈদ মানে নতুন কাপড় পড়ে এই রুম থেকে ওই রুমে দৌড়ানো আর বিকেলে হয়তো বাড়ির ছাদে যাওয়া আর নয়তো বাবা মার সাথে পার্কে কয়েক ঘন্টা ঘুরে আসা।

মাঝে মধ্যে নিজেরই আফসোস হয় যখন আমাদের সময়ের মজা করার গল্পগুলো ওদেরকে বলে পুরোপুরি বোঝাতে পারিনা। টাইম মেশিন থাকলে ভাল হত, সময়টাকে রিওয়ান্ড করে বৌ ছেলে মেয়েসহ ফ্যামিলির অন্য সবাইকে নিয়ে চলে যেতাম সেই সময়গুলোতে। পূর্বের সময়ে যেয়ে কিছু করতে না পারতাম কিন্তু দেখেতো চোখ জুড়াতো!!!

কাল ঈদ উল ফিতর।


কাল ঈদ উল ফিতর।
সবাইকে ঈদ মোবারক। ।

এবার ঈদের লবা ছুটিতে অনেক বাংলাদেশী দেশের বাইরে গিয়েছে ঈদ উদযাপন (?) করতে। উন্নয়নের ঠেলায় গতি আমাদের এখন উলটো দিকে। আগে ঈদে গ্রামে যেতাম নাড়ীর টানে। 

মা-বাবা,দাদা-দাদী,আত্মীয়-সবজন, গরীব - দুখী পাড়া প্রতিবাশী সবাইকে নিয়ে ঈদের দিনটি ছিল কত না মধুর !! 
আর এখন --------??
সেই পুরনো কথা : বেগ - আবেগে সন্ধি হবে না কখনো ।

ঈদ মোবারক !! ঈদ মোবারক !!

পুনশ্চ : আমার কিছু নিকট আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব গিয়েছে দেশের বাইরে ঈদ করতে। তাদেরকে আমার করুণা করতে, হেদায়েত করতে ইছছা করে।

আগে ঈদে পাঞ্জাবি কিনতাম কোতোয়ালি মোড়ের খাদিঘর নামক এক দোকান থেকে


আগে ঈদে পাঞ্জাবি কিনতাম কোতোয়ালি মোড়ের খাদিঘর নামক এক দোকান থেকে, ১৫০/২০০ টাকায় মোটামুটি মানের ভালো পাঞ্জাবী পাওয়া যেতো। "আড়ং " থেকে প্রথম পাঞ্জাবি কিনি সম্ভবত ৯৯ সালে, ৬০০ টাকা ছিল সে পাঞ্জাবি র মূল্য। আড়ং থেকে পাঞ্জাবী কিনেছি এটাই ছিল সেদিন ঈদের প্রধান আনন্দ। এরপরে তো চাকুরী তে ঢুকে গেলাম, তারপর নিজে কিনে বা উপহারের মাধ্যমে প্রচুর পাঞ্জাবী কালেকশনে যোগ হয়েছে, এর মধ্যে বেশ কিছু আছে দামী ব্রান্ডের। এইতো এই ঈদে তিনটি পাঞ্জাবী যোগাড় হয়েছে, একটি আড়ং থেকে নিজে কিনলাম, বাকী দু টি আমার দু জন অফিসিয়াল ক্লায়েন্ট গিফট করেছেন। তার মাঝে একটি দেশিয় খুব দামী brand. এর আরেকটি ইনডিয়ার খুব ভালো মানের দামী পাঞ্জাবি।

তা স্বত্তেও সেই ৯৯ সালে বহু কষ্টে ৬০০ টাকা যোগাড় করে জীবনে প্রথম "আড়ং" থেকে পাঞ্জাবী কিনার আনন্দ আর কোন কিছুর সাথে তুলনা হয়না।

সেই সময় ঈদের মজা শুরু হত চাঁদ রাত থেকেই


সেই সময় ঈদের মজা শুরু হত চাঁদ রাত থেকেই। ইফতারির চেয়ে কখন C-টাইপের মাঠে হাজির হব তার টেনশন বেশী থাকত। চাঁদ দেখার চেয়ে লুকোচুরি, গোল্লাছুট খেলতাম বেশী। চাঁদ দেখলে বড়দের সাথে আমরাও হইহই করে উঠতাম।

ফুল, পাতবাহার চুরিতে আমি ছিলাম ওস্তাদ। অফিসার্স ক্লাব, শেলী ভাইদের বাগান ছিল টার্গেট। রঙিন পাতা বাহারের ডাল বোতলে করে ড্রইং রুমে রাখতাম।

তখন আতশ বাজি পোড়ানতে এত বিধীনিষেদ ছিলনা। নানা রকম বাজি ফুটাতাম আর চন্দন চাচার দাবরানি খেতাম। একবার উনাদের দোতলার দরজার সামনে সিড়ীতে টাইম বোমা ফিট করে নিচে নেমে কনা/স্বর্ণা আপার সামনে পরলাম। ধরা খাওয়ার ভয়ে বুক দুর দুর করছে। আপা বললেন, এই কাকলিকে একটু ডেকে দাওতো। আমি পালাতেও পারছিনা। আবার তিন তলায় উঠলাম। ভয় পাচ্ছি বোম যদি ফুটে পুরা ধরা। কয়েক বার কলিং বেল চাপলাম। দরজা খুলতে দেরি হচ্ছিল। ইতি মধ্যে বোমা বুম…। কিছুক্ষন পর কাকলি আপা দরজা খুললেন। বললেন, কে বোমা ফাটাইছে? আমি বললাম, আমি না, আপা আপনাকে নিচে ডাকে…..বলে ভো দৌড়।

ঈদের দিন আমাদের বয়সিরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বেড়াতাম। বিশাল গ্রূপ ছিল কিনা! প্রথমে নিজ গ্রূপের সদস্যদের বাসায় তারপর অন্যদের।শরিফা আপা বিয়ের পর নেভী ২ নং কলনী চলে গেলে চইকা কলনী থেকে হেটে বন্ধুদের নিয়ে হাজির হতাম।

ঘর সাজানোর রেওয়াজ ছিল। রঙ্গিন কাগজ, বেলুন দিয়ে ঘর সাজাতাম। কার বাসা কত সুন্দর সাজান হয় তার প্রতিযোগিতা চলত। রঙ্গিন কাগজের চেইন ড্রয়িং রূমের চারপাশ থেকে এনে ফ্যানের সাথে লাগান হত।

১/২ টাকা দামি ঈদকার্ড গুলোর কথা মনে পরে। সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, বয়নিক ওমেন এর ছবি ওয়ালা কার্ড দেয়া নেয়া চলত। কখন কোন বন্ধুর সাথে আড়ি নিলে তার সাথে ভাব করার জন্য এই কার্ড বেশ কাজে লাগত।

ঈদের দিন ভোরে আবাহনি-মোহামেডান খেলা কে কবে চালু করছিল মনে নাই। ছোট হওয়াতে আমাদের জায়গা ছিল দর্শক গেলারি (বড় শুকনা ড্রেনের পাশে) ।

বকশিস বলতে আব্বার দেয়া নতুন ১/২ টাকা।

আজ বিকেল থেকেই নুসফিকার ঈদের প্রস্তুতি শুরু


আজ বিকেল থেকেই নুসফিকার ঈদের প্রস্তুতি শুরু , একটা নতুন জামা পড়া হাতে মেহেদি লাগানো পুরো বাড়ীর এ ঘর থেকে ঐ ঘরে যাওয়া । এক কথায় ঈদের আনন্দটাই তাদের জন্যেই । তবে কলোণীর সেই ঈদের মজা কি কখনো ফিরে আসবে ? আমাদের ছোট সময়কার ঈদের নতুন জামা গুলো যন্ত সহকারে আলমারীতে রেখে দিতাম , যাতে ঈদের আগে কেউ দেখতে না পায় । অতচ এখনকার ছেলে- মেয়েরা সবাই সবাইকে দেখানো নিয়ে ব্যাস্ত এবং কার জামা বেশি সুন্দর ও কে বেশি জামা পেয়েছে তা নিয়ে গবেষনা করা । নুসফিকা তার জামা গুলো পেয়ে অনেক খুশি ।
@ঈদ মোবারক@
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা !!!