Monday, September 14, 2015

বি.কম পড়ার সময় আমার অন্যতম একটা সাবজেক্ট ছিলো অর্থনীতি


বি.কম পড়ার সময় আমার অন্যতম একটা সাবজেক্ট ছিলো অর্থনীতি, শালার এমন এক সাবজেক্ট, পড়া দূরে থাক, বই দেখলেই বমি আসত, এতো কাঠ খোট্টা একটা বিষয়, ছাতার মাথা কিছুই বুঝিনা, আর বুঝার কথাও না, তখন তো মাথার মধ্যে খালি রোমান্স ঘুরে, এদিকে পরীক্ষা নাকের ডগায়, কিন্ত পরীক্ষায় তো পাশ করতে হবে, কি করা যায় এ টেনশনে আছি, অবশেষে পেলাম আমরা (আমার সাথে বন্ধু Riman Babu ও ছিলো) আমাদের Abdullah Al Mamun অপু ভাইকে পেলাম, উনি তখন চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে মাষ্টার্স করছিলেন, উনার কাছে পরীক্ষার আগে ৪/৫ দিন পড়েছি আমরা দুজন। উনি অনেক সুন্দর করে আমাদের অনেক কিছু বুঝাতে পেরেছিলেন।
অপু ভাই, আমি কখনও ভালো ছাত্র ছিলাম না, তারপরও বি.কম পরীক্ষায় অন্য সব সাবজেক্ট গুলোর মধ্যে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশী নাম্বার পেয়ে পাস করেছিলাম।

" গজল "


তখন নতুন নতুন সিডি প্লেয়ার বের হয়েছে, দেখতেও দারুন লাগে, বিশাল সাইজ, ঘরে চিল্লা চিল্লি করে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে নিউ মার্কেট এর ৪ তলা থেকে মোটামুটি বাঙ্কার টাইপের একটা কিনলাম , ওরে মোর খোদা !! আমারতো খুশিতে পেটের ভাত হজম হচ্ছে না, এমন অবস্থা !! কিন্তু সমস্যা একটা আছে, গান শুনার জন্য সিডি নাই, সব গানের সিডিও বের হয় না, হলেও দোকানে থাকে না, শুধু নিউ মার্কেটে পাওয়া যায়, আর দামও অনেক। প্রতি সিডি তখন ১০০/ ১২০ টাকা থেকে শুরু। যেখানে প্রতি মাসে ৪/৫ টা ক্যাসেটের ফিতা কিনতাম সেখানে এখন একটা সিডি কিনতেই খবর হয়ে যায়। কি আর করা প্লেয়ারের সাথে একটা মিউজিক সিডি দিয়েছিলো ওইটাই ফুল সাউন্ড দিয়ে সারাদিন শুনি, কিন্তু এক মিউজিক কত শুনা যায়!! 

শ্রদ্ধেয় আহমেদ কবির স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক



(লেখাটি লিখেছিলাম ২০১৪ সালের ১৪ মে। খবর পেলাম আজ আমাদের প্রধান শিক্ষক আহমেদ কবীর স্যার মারা গেছেন। লেখাটি হুবহু তুলে দিলাম)
------------------------------------------------------------
(শ্রদ্ধেয় আহমেদ কবির স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক)

তখন ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুলের নাম চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অনেকে ইংরেজিতে বলে চিটাগং ষ্টীল মিলস হাই স্কুল। আমরা সংক্ষেপে বলতাম চইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। একই স্কুলের কত নাম। একই অঙ্গে কত রুপ। তখন সবেমাত্র স্কুল পালানো বিদ্যা শিখেছি। এ যে কি এক মধু তা যারা স্কুল পালায়নি তারা কোনদিনই বুঝবে না। কলোনির ভেতর স্কুল আর কলোনির সবাই সবাইকে চিনে তাই এখানে স্কুল পালানো দুরূহ ব্যাপার। সুখের ব্যাপার সেসময় কলোনির চারপাশের দেয়াল ভাঙ্গা ছিল (জলোচ্ছ্বাসের কারনে)। এই কারনে স্কুল পালানো কিঞ্চিৎ সহজ হয়েছিলো। স্কুলের পিছনেই কবরস্থান, সাথেই খালপাড়ের রাস্তা ধরে সোজা কর্ণফুলীর তীর। তখন নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে এত মাথাব্যথা ছিলোনা কারো। মানুষ অনেক সহজ ছিল। একে অপরকে বিশ্বাসও করতো।হয়তো তাই কর্ণফুলীর পাড়ের জেটিগুলাতে কাঁটাতার বা ইস্পাতের বেড়া দেয়া ছিলোনা এখন যেমন আছে। আমরা অনায়াসে জেটিতে ঘুরে বেড়াতাম, দেশি বিদেশি বড় জাহাজগুলো দেখতাম আর জাহাজের কাঊকে করুণ মুখে আঙ্কেল ডেকে জাহাজ দেখার ইচ্ছা পোষণ করল জাহাজও ঘুরে দেখা যেত। আর একটু দূরের পথে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু হাঁটতে ইচ্ছা করছে না এমন হলে ছিল ট্রেন। নদীর পাড় ধরে রেল লাইন। সেই লাইন যে কোথায় কোন দূর দেশে গিয়েছে আমরা কেউ জানতাম না, এ যেন পোলার এক্সপ্রেসের রেল লাইনটার মত। হাত দেখালে সেই লাইনে চলা মন্দ গতির মালবাহী ট্রেনটা থামত। ড্রাইভার রুক্ষ স্বরে জানতে চাইতো "কি হইছে রে?"। আবার সেই করুণ মুখে আঙ্কেল পদ্ধতি। ড্রাইভার আঙ্কেল বিরক্ত হয়ে বলত "উপরে উঠ"। যেখানে নামতে ইচ্ছা হতো আঙ্কেল ডেকে নেমে যেতাম। ট্রেন চলে যেত দূর দেশে।

ফান্ড কালেকশন



সেদিন বলেছিলাম নিরাবেগ বাস্তবতার কথা বলব না। বলতে চাইনি। গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে দেখবেন লেখা থাকে "objects in the mirror are closer than they appear." যে সময়টা আমরা পার করে এসেছি দৃশ্যত তা অনেক দিন আগের মনে হলেও খুব বেশি আগের কিন্তু নয়। আজ অনেকের পোস্টে দেখলাম হতাশ হয়ে যাবার একটা হাওয়া বইছে। তাদেরকেই বলছি পেছনে তাকান। স্টিলমিলের মানুষ হতাশ হয়না। দরিয়া পাড়ের মানুষ হার মানেনা। 

৯১ এর ঝড়ের সময় আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম। ঝড়ের পরদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি পুরো পতেঙ্গা ঘুরেছিলাম। বন্দরটিলা থেকে একদম এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। কাটগর ধুমপাড়ার কাছে দুপুরে একজনকে দেখেছিলাম নিজের ভেসে যাওয়া ভিটার সামনে দাড়িয়ে হাউমাউ করছে। সন্ধ্যায় ফেরার সময় দেখি চারটি খুঁটি পুঁতে মাথার উপর চাল দেয়া হয়ে গেছে, চালার নিচে চুলায় আগুন জ্বলছে। আমি জানি সব হারিয়েও এই অঞ্চলের মানুষ ছোট্ট কুপির আগুনের মত একটু আশা বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের কিছুই হারায়নি। আমরা কেন হতাশ হব? অন্তত আমি হতাশ না। কেন হতাশ না বলি-- আমাদের মধ্যে একজনের বাচ্চা অসুস্থ, ঈদের দিন বাচ্চার বাবা মা বাচ্চা নিয়ে ইন্ডিয়া রওনা হবে ট্রিটমেন্টের জন্য। বেশ খরচের ব্যাপার তাই ফান্ড কালেকশনের সময় তার নামে কম করে ধরা হয়েছে। পরশু সে ফোন করে আমার সাথে রাগারাগি , কম কেন ধরা হলো। আপনারা বলেন আমি কেন হতাশ হব?

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss