Monday, September 14, 2015

শ্রদ্ধেয় আহমেদ কবির স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক



(লেখাটি লিখেছিলাম ২০১৪ সালের ১৪ মে। খবর পেলাম আজ আমাদের প্রধান শিক্ষক আহমেদ কবীর স্যার মারা গেছেন। লেখাটি হুবহু তুলে দিলাম)
------------------------------------------------------------
(শ্রদ্ধেয় আহমেদ কবির স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক)

তখন ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুলের নাম চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অনেকে ইংরেজিতে বলে চিটাগং ষ্টীল মিলস হাই স্কুল। আমরা সংক্ষেপে বলতাম চইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। একই স্কুলের কত নাম। একই অঙ্গে কত রুপ। তখন সবেমাত্র স্কুল পালানো বিদ্যা শিখেছি। এ যে কি এক মধু তা যারা স্কুল পালায়নি তারা কোনদিনই বুঝবে না। কলোনির ভেতর স্কুল আর কলোনির সবাই সবাইকে চিনে তাই এখানে স্কুল পালানো দুরূহ ব্যাপার। সুখের ব্যাপার সেসময় কলোনির চারপাশের দেয়াল ভাঙ্গা ছিল (জলোচ্ছ্বাসের কারনে)। এই কারনে স্কুল পালানো কিঞ্চিৎ সহজ হয়েছিলো। স্কুলের পিছনেই কবরস্থান, সাথেই খালপাড়ের রাস্তা ধরে সোজা কর্ণফুলীর তীর। তখন নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে এত মাথাব্যথা ছিলোনা কারো। মানুষ অনেক সহজ ছিল। একে অপরকে বিশ্বাসও করতো।হয়তো তাই কর্ণফুলীর পাড়ের জেটিগুলাতে কাঁটাতার বা ইস্পাতের বেড়া দেয়া ছিলোনা এখন যেমন আছে। আমরা অনায়াসে জেটিতে ঘুরে বেড়াতাম, দেশি বিদেশি বড় জাহাজগুলো দেখতাম আর জাহাজের কাঊকে করুণ মুখে আঙ্কেল ডেকে জাহাজ দেখার ইচ্ছা পোষণ করল জাহাজও ঘুরে দেখা যেত। আর একটু দূরের পথে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু হাঁটতে ইচ্ছা করছে না এমন হলে ছিল ট্রেন। নদীর পাড় ধরে রেল লাইন। সেই লাইন যে কোথায় কোন দূর দেশে গিয়েছে আমরা কেউ জানতাম না, এ যেন পোলার এক্সপ্রেসের রেল লাইনটার মত। হাত দেখালে সেই লাইনে চলা মন্দ গতির মালবাহী ট্রেনটা থামত। ড্রাইভার রুক্ষ স্বরে জানতে চাইতো "কি হইছে রে?"। আবার সেই করুণ মুখে আঙ্কেল পদ্ধতি। ড্রাইভার আঙ্কেল বিরক্ত হয়ে বলত "উপরে উঠ"। যেখানে নামতে ইচ্ছা হতো আঙ্কেল ডেকে নেমে যেতাম। ট্রেন চলে যেত দূর দেশে।


আগেই বলেছি স্কুলের পিছনে কবরস্থান। কবরস্থানে ব্যাপক ঝোপঝাড়। তখন সবেমাত্র টুয়েন্টি নাইন বিদ্যা অর্জন করেছি। চর্চার অভাবে তুখোড় হতে পারছিনা। কবরস্থানের ঝোপ একটু পরিস্কার করে জঙ্গল বাড়ি বানানো হল। প্রতিদিন টিফিনের পর বায়ান্ন তাস নিয়ে ঝোপের ভিতর ঢুকে পড়ি। সেকি খেলা আমাদের। বাইরের কেউ জানতেই পারেনা যে কবরস্থানে তাসের ওয়ার্ল্ড কাপ চলছে। আমরা চারজন খেলোয়াড় আর দর্শক বলতে কবরের মুর্দারা। একদিন এমনই এক ওয়ার্ল্ড কাপ চলছে। ওদিকে সিক্সথ পিরিয়ড ছিল হেডস্যারের (আহমেদ কবির স্যার)। বিশাল পেটের কারনে হেডস্যার "পেট কবির" নামে পরিচিত ছিল। এই পিরিয়ড নিয়ে আমাদের কোন টেনশন নাই কারন স্যার রোলকল করেনা। সেদিন কি হল কে জানে। কে যেন (কে ছিল মনে পড়ছেনা) হিসু করার নাম দিয়ে বের হয়ে আমাদের খবর দিল স্যার রোলকলের খাতা আনতে পাঠিয়েছে। আমরা আঁতকে উঠলাম। এখন চারজন একসাথে ক্লাসে ঢুকি কি করে? আমরা এত ঝামেলাতে গেলাম না। ক্লাসরুমের জানালার নিচে ওঁত পেতে বসে রইলাম আর আমাদের রোল কল হলে জানালার বাইরে থেকেই "প্রেজেন্ট স্যার" দিতে লাগলাম। পরে একবার এই স্যারের পাইকারি বেত্রাঘাতের আওতায় পড়েছিলাম। কি দোষ কি অপরাধ কিছুই জানিনা বিনা মেঘে বজ্রপাত। আমার লেগেছিল ঘাড়ে। অনেকে বলে আমার ঘাড়ের রগ নাকি একটু ত্যাড়া। আমার ধারনা এটাতে ওই বেত্রাঘাতের ভূমিকা আছে।

No comments:

Post a Comment