Monday, September 14, 2015

ফান্ড কালেকশন



সেদিন বলেছিলাম নিরাবেগ বাস্তবতার কথা বলব না। বলতে চাইনি। গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে দেখবেন লেখা থাকে "objects in the mirror are closer than they appear." যে সময়টা আমরা পার করে এসেছি দৃশ্যত তা অনেক দিন আগের মনে হলেও খুব বেশি আগের কিন্তু নয়। আজ অনেকের পোস্টে দেখলাম হতাশ হয়ে যাবার একটা হাওয়া বইছে। তাদেরকেই বলছি পেছনে তাকান। স্টিলমিলের মানুষ হতাশ হয়না। দরিয়া পাড়ের মানুষ হার মানেনা। 

৯১ এর ঝড়ের সময় আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম। ঝড়ের পরদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি পুরো পতেঙ্গা ঘুরেছিলাম। বন্দরটিলা থেকে একদম এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। কাটগর ধুমপাড়ার কাছে দুপুরে একজনকে দেখেছিলাম নিজের ভেসে যাওয়া ভিটার সামনে দাড়িয়ে হাউমাউ করছে। সন্ধ্যায় ফেরার সময় দেখি চারটি খুঁটি পুঁতে মাথার উপর চাল দেয়া হয়ে গেছে, চালার নিচে চুলায় আগুন জ্বলছে। আমি জানি সব হারিয়েও এই অঞ্চলের মানুষ ছোট্ট কুপির আগুনের মত একটু আশা বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের কিছুই হারায়নি। আমরা কেন হতাশ হব? অন্তত আমি হতাশ না। কেন হতাশ না বলি-- আমাদের মধ্যে একজনের বাচ্চা অসুস্থ, ঈদের দিন বাচ্চার বাবা মা বাচ্চা নিয়ে ইন্ডিয়া রওনা হবে ট্রিটমেন্টের জন্য। বেশ খরচের ব্যাপার তাই ফান্ড কালেকশনের সময় তার নামে কম করে ধরা হয়েছে। পরশু সে ফোন করে আমার সাথে রাগারাগি , কম কেন ধরা হলো। আপনারা বলেন আমি কেন হতাশ হব?


কলোনির আনাচে কানাচে ছোট ছোট কচু, কলমী , ঢেকি শাক জন্মে থাকতো আপনাদের মনে আছে? আমরা মাঝে মাঝে খেলার ছলে শাক তুলে আনতাম। আম্মা গজগজ করতে করতে সেই শাক রেঁধে দিত, আমরা মজা করে তুলে আনা শাক খেতাম দুপুরে। আহা কি অমৃত। স্টিলমিল তখন বন্ধ হয় হয় অবস্থা। বাবাদের চার পাঁচ মাসের বেতন বাকি পড়েছে। সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে বাবা চাচাদের। কলোনির মানুষ কোনকালেই খুব ধনবান ছিলনা। তবে সচ্ছল ছিল। বাজারের দোকানদারেরা সমাদর করেই বাকীতে মালামাল দিত সারাবছর। সেই দুঃসময়ে দোকানের লোকজন বাকি দেয়া বন্ধ করে দিল। একেকটা পরিবারের কি অবস্থা হয়েছিল খুব কাছে থেকে আমি দেখেছি। যে কচু, কলমী , ঢেকি শাক সখ করে তুলে খাওয়া হত অভাবে সেই শাক সিদ্ধ করেই দিনের পর দিন খেতে হয়েছে অনেক পরিবারের। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন সে সময় হতাশায় কেউ ভেঙ্গে পরেছিলেন? 

এখনো যদি ফান্ড কালেকশন নিয়ে হতাশায় থেকে থাকেন তাহলে বলব একবার আয়নার সামনে দাড়ান আর ভাবুন আপনি কলোনির সন্তান। আমরা দুঃসময়কে পায়ে মাড়িয়ে এসেছি, দুঃসময় কোনদিন আমাদেরকে পায়ের নিচে রাখতে পারেনি।

No comments:

Post a Comment