মাঝে মাঝে আমার পুরাতন পোষ্ট বের করে পড়ি। নিচের পোষ্টা তেমনি একটা লেখা। যখন এটা আমার টাইম লাইনে দেই তখন সিএস এম কলোনীর এ পেজটার জন্ম হয়নি। ভাবলাম কলোনীর সবার জন্য আবার পোষ্ট করি-----------------
লুলু পাগলা
এমন কোন কবি-লেখকদের আড্ডা নেই যেখানে তাকে পাওয়া যেতোনা। একমুখ ঘন গ্যাজালো সাদা লম্বা দাড়ি, মাথায় কোঁকডা সাদা চুলের কাশবন।সেখানে থেকে থেকে দু’একটা কালো চুল তখনো অতীতের গৌরবময় স্মৃতি ঘোষণা করছে। নাক মুখ তীক্ষ্ণ ধারালো। গোল চশমার পেছনে সম্মোহন করার মত চোখ। ঠোটে একটা দুষ্ট হাসি ঝুলেই থাকতো। কোন কথা বলার পর প্রাণ খোলা পরিচ্ছন্ন হাসি। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি আমাদের কবি সামশুল আলম ওরফে লুলু ওরফে লুলু পাগলা তার আরেকটা নাম আমরা দিয়ে ছিলাম-ঠাকুর।তবে আমরা কেউ লুলু ভাই আবার কেউ ঠাকুর বলে ডাকি(ঠাকুর বলে ডাকলে তিনি ভীষণ খুশি )।পাগলের হাসি সুন্দর আর সরল।তার হাসি দেখলেই বোঝা যেতো তিনি ঐ শ্রেনির অন্তরগত।বয়স অবশ্যই ৭০-এর উপর হবে।বয়সের ওজনে শরীর সামান্য ধনুক বাঁকা।হাড্ডিসার শরীরে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ে তিনি প্রগৈতিহাসিক যুগের রেলিং সাইকেলে প্যডেল মেরে সারা কুষ্টিয়া ঘুরে বেড়ান।যতবড় আর দামি অনুষ্টানই হউক না কেন আমাদের ঠাকুর লুঙ্গি-সার্ট আর রাবারের সেন্ডেল ছাড়া দ্বিতীয় কোন পোষাক পড়তেন না।দেখা গেল রবীন্দ্র কুঠি বাড়ি বা শহীদ মিনরে অথবা শিল্পকলা একাডেমিতে যথা সময়ে তিনি ঐ পোষাকে স্টেজেউঠে পড়লেন।ঠাকুরের হাতে থাকতো বাজারের থলে ভর্তি রাজ্যের লেখালেখির পান্ডুলিপি ।তবে কোন আড্ডায় তাকে তেমন একটা কবিতা পড়তে শুনতাম না। আড্ডায় যা সাধারনত: হয়--- লেখা পড়া- আলোচনা-সমালোচনা কখনো মন মতো মন্তব্য না হলে আলোচকের উপর আকারে ইংগিতে কথার ঝড় বইয়ে দেয়া, এর কোনটাতেই লুলু ভাই নেই।একবারই শুধু কি একটা বিষয় নিয়ে যেন অধ্যাপক মিজান সাহেবের সাথে জম্মের লাগা লাগেছিল।ব্যতিক্রমি মানুষ অল্পদিনেই অন্তরঙ্গ এবং যথারীতি এক বৃদ্ধের সাথে বন্ধুত্ব। আড্ডা শেষে নিচু গলায় আমার লেখার খুঠি-নাটি ধরে মন্তব্য করতেন উপদেশ দিতেন। কখনো তা শুনতাম আবার কখনও হু হা করে পাশ কাটাতাম। তার লেখায় কখনো মানুষ,কখনো সমাজের অসংগতি আবার কখনো ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনার কথা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠতো।যা এক কথায় ভালই লাগতো।