ক্যাঁচ করে রিকশাটি বিজয় স্মরনী সিগনালে ব্রেক কষল। আর তখনই, নিপুর চিৎকার , দেখো দেখো -কদম ফুল। আমাকে কিনে দাওনা িএকটা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কদম ফুল বিক্রি করছে এ সিগন্যালে।ফয়সল পুরোপুরি বিরক্ত নিপুর এমন ছেলেমানুষি কাজ দেখে, কদম ফুল তো কি েহয়েছে, তার জন্য চেচিয়ে রাস্তা মাথায় তুলার তো কোন মানে হয়না। বিরক্ত নিয়ে ফয়সল বলল, আরেকটু সামনে যাই সেখানে কুমড়ো ফুল পাওয়া যাবে, দেখতেও সুন্দর আবার বড়া বানিয়েও খাওয়া যাবে আর কদম ফুল হচ্ছে বাদুড়ের খাদ্য, আমরাতো আর বাদুড় না।নিপু পুরোপুরি বেকুব হয়ে গেলো ফয়সালের এ ধরনের বেরসিক কথা বার্তায়। নিপু ভাবলো এই ফয়সল নামক গাধা পন্ডিত টাকে বিয়ে করে বিরাট ভুল হয়েছে। ভুল দুই প্রকার। পুটি মাছ সাইজের ভুল এবং আর তিমি মাছ টাইপ ভুল। ফয়সল কে বিয়ে করে সে তিমি মাছ ধরনের ভুল করেছে।
নিপু ভারী কাঁচের চশমা পড়া ফয়সলকে বললো – “তুমি রিক্সা থেকে নামো । সামান্য বাকী টুকু রাস্তা আমি নিজেই যেতে পারবো। এ রকম তিমি মাছ টাইপ গাধা পন্ডিতের সাথে এক রিকশায় যাওয়া অসম্ভব।
তোমাকে এই টেনিস বল টাইপ কদম ফুল কিনে দেইনি বলে আমাকে এতোগুলা কথা বলতে পারলে, বিষণ্ণ স্বরে বলল ফয়সল।
সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। রিক্সা চলতে শুরু করেছে।
নিপু ভারী অবাক এবং হতাশ ভাবে জিজ্ঞেস করলো- “তুমি কী সত্যি সত্যি আমাকে কদম ফুল কিনা দিবা না ?”
ফয়সল একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বললো- “না। কদম ফুল এমন কোন বিশেষ কিছু না। টেনিল বল সাইজের একটা ফুল। এইটা দেখে এতো প্রেমে নুয়ে পড়ার কোনো মানে নাই। সামনে ফুলের দোকান আছে। কয়েকটা গোলাপি গোলাপ কিনে দিচ্ছি।”
নিপু মাথা নীচু করে বিয়ের আংটি টা দেখছে আর ভাবছে এই গাধা মার্কা রসকষ হীন তিমি পন্ডিতের সাথে বাকীটা জীবন কাটাতে হবে, ভাবতেই নিপুর চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। রিকশা সংসদ ভবনের কাছাকাছি, হঠাৎ ফয়সল চেচিয়ে উঠলো, বললো এইরিকশা থামো। রিকশাওয়ালা ভয়ে আতংকে ব্রেক চাপলো।
ফয়সাল নিপুর হাত ধরে রিক্সা থেকে তাঁকে নামিয়ে নিলো। রিক্সা ড্রাইভারকে বললো – ভাই ব্রেকটা চেপে রাখেন।
ফয়সল রিক্সার সিটের উপর দাঁড়িয়ে গেলো। তার মাথার উপরই একটি কদম গাছ ,সেখানে ডালে দুটো কদম ফুল ঝুলছে । ফুল দুটি ছিড়ে রিক্সার সিট থেকে নেমে নিপুর হাতে দিয়ে বললো- ”প্রিয় মানুষটিকে নিজের হাতে গাছ থেকে ফুল পেড়ে দিতে হয়, কিনে ফুল দিলে ফুল ও ভালোবাসার পবিত্রতা নষ্ট হয়।”
বৃষ্টির ছাট বাড়ছে, নিপু িবৃষ্টি ভেজা ফুল হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে, সে নিজেও ভিজে গিয়েছে। বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি একাকার হয়ে গেছে।
আর ফয়সল ভাবছে,এই মেয়ে- এতো সুন্দর করে রাগে কেনো ? এই মেয়ে – এতো সুন্দর করে কাঁদে কেনো ?
No one has commented yet. Be the first!