আজ বহু দিন পর আমি, লিটন আর মনিরুল নারায়নগঞ্জে একসাথে হয়ছিলাম, দুপুর থেকে বিকাল পর্য্যন্ত অনেক জায়গায় ঘুরলাম, অনেক আড্ডা দিলাম, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কথা বার্তা হল। বিশেষ করে আমাদের ঔষুধ বিক্রির কাহিনী নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, ঔষধ বানিজ্যের ক্ষেত্রে মনিরুল ছিলো ওস্তাদ মানুষ। আমরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে, দরকারে বেদরকারে স্টিল মিলের হাসপাতালের ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ লিখিয়ে নিয়ে সে ঔষধ এ.কে ফার্মেসী তে বিক্রয় করে দিতাম। আর মনিরুল তার গুণাবলী দিয়ে ডাক্তার সাহেব এর কাছ থেকে তার (মনিরুলের) মন মত ঔষধ লিখিয়ে নিতো, আর এ ক্ষেত্রে তার প্রিয় ঔষধ ছিলো গ্রাইসোভিন নামক একটি ক্যাপ্সুল। যেটি চর্ম রোগের ঔষধ ছিলো আর প্রতিটি ক্যাপসুল এর দাম ছিল ৪ টাকা করে। আর অফিস টাইম শেষে হাসপাতালের ইমার্জেন্সী থেকে ঔষধ তোলা ছিল আমাদের নিয়মিত ঘটনা। মরহুম সিদ্দিক কাকা (বন্ধু রাজুর বাবা) আমাদের আকাম বুঝতে পেরে ইমার্জেন্সি তে আমাদের ঔষধ দেয়া বন্ধ করে দেন। সে জায়গায় আমাদের শেষ ভরসা ছিল বড়ুয়া বাবু নামে একজন। তবে ঔষধ বিক্রির অর্জিত টাকা আমরা কখনো বিপথে খরচ করিনি, হোটেল খাজা আজমির, এক টিক্কা হোটেলে (চায়ের দাম এক টাকা ছিল বলে এক টিক্কা হোটেল) নাস্তা, বিড়ি সিগারেট আর মাঝে মাঝে সিনেমা দেখায় এ টাকা ব্যয় হতো।
আমাদের এই গ্রুপ টা হচ্ছে আমাদের কলোনীর মিলন মেলা, প্রাণের স্পন্দন, আমাদের সুখ দু:খ, প্রেম ভালোবাসা, হাসি আনন্দ, মজার সব অভিজ্ঞতা একে অপরের সাথে শেয়ার করার মাধ্যম। তবে এসব শেয়ার করতে গিয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, কোন নেগেটিভ বিষয়ে, বা কারও কোন দুর্বল বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যেন সরাসরি কারো নাম প্রকাশ না পায়, আমরা কারো নাম দিয়ে এমন কিছু প্রকাশ করবনা যাতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিব্রত হয়, আমাদের জুনিয়র সিনিয়র সকলের অনুভূতি ও সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখব। অশ্লীল যেকোন কিছু পোষ্ট করা থেকে বিরত থাকব।
Saturday, March 26, 2016
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
বুঝলি বাবা, এই বড় বড় সরপুঁটি মাছ, কেবল পাতে নিছি আর তখনি ঠা ঠা গুলির আওয়াজ। আহারে সাধের মাছ ফালায় থুইয়া, যে যার জান নিয়া দৌড়। না, এই শালাদের, এই দেশ থেকে না তাড়ালে, এই মজার মাছ খাওয়া যাবেনা। যুদ্ধেই যামু। আর বাড়ি ফিরি নাই। কায়ছার চাচা আমার, যুদ্ধে গেল। এই দেশ স্বাধীন করার জন্য। সামনা/সামনি সে অনেক যুদ্ধ করেছে, পাক সেনাদের সাথে। অসিম সাহসি একজন মানুষ। অনেক গভীর আবেগ নিয়ে, সে মুক্তিযুদ্ধের গল্প করে। অনেক সময় মজা করে বলি, চাচা তুমি মাছ খাওয়ার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলে!? মিট মিট করে হাসে। বড় গভীর সে হাসি। যুদ্ধটা দরকার ছিলোরে বাবা। কি মিল আছে, আমাদের সাথে, ওদের!!?? না সংস্কৃতি, না ভাষা, না আদব কায়দা!!!?? শুধু আমাদের শোষন করেছে। তাই যুদ্ধ করেছি, যা ভাগ শালারা, আমাদের কে, আমাদের মত করে থাকতে দে। চাচার কানের লতিটা নাই। অল্পের জন্য গুলিটা অন্য যায়গায় লাগেনি। আলতো করে ছুঁয়ে গেছে, কানের নিচটাতে। চাচা তুমি কি খুশি, এই দেশ সাধীন করে?? আবারো সেই মিট/মিট করে হাসি!! সাধীন হয়েছে বলেই, আজ এই কথা, আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারছিস। গোলামরা শুধু জি হুজুর, জি হুজুর করে যায়, ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা তাদের নাই। সাধীন দেশ, আমরা সাধিন, এর চেয়ে আনন্দ আর কি আছেরে??? চোখে পানি চলে আসে, কায়সার চাচা যখন দেশ নিয়ে কথা বলে।
বিজ্ঞাপন বাহার
অনুষ্ঠানের বা নাটকের ফাঁকে বিজ্ঞাপন দেখলে আমরা সবাই বিরক্ত হই।অথচ একসময় এই বিজ্ঞাপন ছিল টিভির প্রান।আতিক ভাইকে মাঝে মাঝে দেখা যায় পুরনো দিনের জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন গুলো শেয়ার করতে।দেখলে ইচ্ছা করে সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই।জানি সেটা কোনদিন সম্ভব নয়।
তবে কলোনি তে থাকতে আমার একটা বাজে অভ্যাস ছিল। দোকানে বিভিন্ন পন্যের যে ঝোলানো কাগুজে বিজ্ঞাপন গুলো থাকত,সেগুলো আমি তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিতাম।প্রথমে কেউ দিতে চাইত না।কোম্পানি র অজুহাতে না করে দিত।পরে যখন বোঝাতে পারলাম যে এটা আমার শখ,আস্তে আস্তে দেয়া শুরু করল।যেমন লাইফবয় প্লাসের বিজ্ঞাপন টা ইউনুস ভাই থেকে,লাক্সের টা বেলাল ভাই, পেপস ক্লোভের টা জেক্সের শাহনুর ভাই থেকে, জুহির ডাবুর আমলা কামাল দের দোকান থেকে, জেনিসল টা ইলিয়াস সওদাগর এর দোকান থেকে। এভাবে কলোনি আর কলোনি র বাইরে পরিচিত দোকান থেকে নিতাম।
এই কাগুজে বিজ্ঞাপন এর সাথে কলোনি র সুন্দর আবহের একটা দারুন বিষয় মিশে গিয়েছিল।জেক্সের বুড়া আংকেল এগুলো দিতে চাইতেন না।কিন্তু মাহামুদ আর শাহনুর ভাই দিতেন। বেলাল ভাই আর ইউনুস ভাই কোন কিছু না বলেই দিতেন।
কবি সুভাষ চট্টপধ্যায় লিখেছিলেন-ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত
কবি সুভাষ চট্টপধ্যায় লিখেছিলেন-ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। তাকে শ্রদ্ধা জানাই। কারণ বসন্ত আসার জন্য তিনি কোন ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন নি। বসন্ত তার আপন ইচ্ছায় এসে সময় মতো চলেও যাবে। কিন্ত আজকাল তা হবার উপায় নেই। বসন্ত আসার আগে বুটীক দোকান গুলো হলুদ শাড়লি পসরা সাজাবে। কিশোরী তরুনীরা লাল হলুদ পোষাক পরে চুলে, হাতে গলায় লাল হলুদ ফুলের মালা পরবে তবেই না বসন্ত এসে পৌছাবে। তার আগে বসন্ত আসা চলবে না। একই ভাবে, পহেলা বৈশাখ আসতে হলেও বিরাট আয়োজন। তা নববর্ষ বলে কথা-একটু আয়োজন তো লাগেই। লাল পাড় সাদা শাড়ী, পায়জামা পাঞ্জাবী, পান্তাভাত না হলে বৈশাখ ঠিক জুতসই ভাবে এসে পৌছাতে পারে না। আমরা যারা অর্ধশাতাবব্দী বয়স পেরিয়ে এসেছি তাদের কাছে ব্যাপারগুলো কেমন যেন আরোপিত মনে হয়। এই ইট কাঠের জীবনে, সাফল্য আর অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগীতার প্রকৃত ফুল গাছ চেনার সময় কই? পুরো ব্যাপারটাই বাণিজ্যিক আর বিপনন। তাইতো বুঝে না বুঝে কী ভয়ানক ভুল শেখাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মকে।
স্বাধীনতা দিবসের সেই সময়,এই সময়
কলোনি তে স্বাধীনতা দিবস মানে ২৬ মার্চ এর দিন মানে ছিল খুব সকালে স্কুল মাঠে এক হওয়া,লাইন ধরে মেইন অফিসের সামনে যাওয়া, ফুল দেয়া,জিলাপি নিয়ে বাসায় ফেরা।তারপর দূর থেকে দেশাত্মবোধক গান মাইকে ভেসে আসা।সেটা সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা কিংবা শাহনাজ রহমত উল্লাহ এর হতে পারে। সারাদিন কলোনি তে উৎসব ভাব বিরাজ করত। কেউ মেলায় যেত,কেউ বা পতেংগা বিচে দল বেধে।টিভিতে দেখানো হত অনেক যত্ন করে বানানো মুক্তিযুদ্ধ এর নাটক। এসব দেখে নিজের মধ্যে কিছুটা দেশের প্রতি ভালবাসা অনূভুত হত।মনে পড়ে একবার,আমি স্বাধীনতা দিবসের র্যালির পিছনে হাটছি,রিনি জানালা দিয়ে বলছে," জনি চলে আসো,আজকে জিলাপি দিবে না"।
আর এখন স্বাধীনতা দিবস পেয়েছে পোষাকি রুপ।স্কুল গুলো বাচ্চাদের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে,সেখানে নির্দিষ্ট রং এর পোষাক পড়ে যাওয়া।কনসার্ট এর আয়োজন হয়। ফ্যাশন হাউজ গুলো দেশপ্রেমের নামে ব্যবসা করতে চায়।টিভি চ্যানেল গুলো স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নানা কিছুর আয়োজন করে।সব খানেই লোক দেখানো বিষয় টা বড় হয়ে দাড়ায়,প্রাণের ছোয়া খুবই কম।
রেজা ভাই ও সিগারেট
যখন থেকে বুজতে শিখেছি ধুম পানে বিষপান তখন থেকেই দেখেছি আমার পছন্দের সব বড় ভাই গুলা এই নেশাতে আশক্ত। খুব খারাপ লাগতো, শুধু ভাবতাম কেনো উনারা এই খারাপ কাজটা করে?
রেজা ভাই, বাবাকে খুব সন্মান করতেন, একদিন বাবা আর আমি সিঁড়ি বেয়ে নামছি, বাজারে যাব, রেজা ভাই সিড়ির চিপায় দারিয়ে.... ফুঁকছিল আর খুব সম্ভব জসীম ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল, তো টান টা যেই দিয়েছে ঠিক তখনি বাবা আর আমি উনার সামনে, উনি জাস্ট মুখটা ফুলিয়ে সোজা হয়ে পাথরের মতো দারিয়ে থাকলেন, বাবা বুজতে পেরে তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেন। আমিতো অবাক, কিরে, ভাই আজকে বাবাকে সালাম দিলনা আর বাবাও কিছু বললোনা? এমন ভাব যেন কেউ কাউকে চিনে না, মাথার মধ্যে শুধু???? ঘুরতে লাগলো, বাবাকে বললাম ওখানেতো রেজা ভাই ছিল, বাবা বললো তো? তুমি কথা বললে না যে? বাবা হেসে বললেন আমি কথা বললে সে আরও লজ্জা পেতো, আমি বললাম কেন? উনি বললেন তুই বুজবি না বড় হলে বুজবি, তার কিছুদিন পর বাশায় সব বড় ভাইদের আড্ডায় ব্যাপারটা বুজলাম।
রিনিসহ যারা আমাকে চিনতে পার না তাদের জন্য
রিনিসহ যারা আমাকে চিনতে পার না তাদের জন্য
আমি এত্ত বুড়া, এত্ত বুড়া,, এত্ত বুড়া যে----
নতুন করে পরিচয় দিতে হয়।
তবু ভালো লাগে ভাবতে---
" ---আমি তোমাদেরই লোক "
" ---আমরা আমরাইতো "
বলছি শোন--
৭২ সালে ' ইস্পাত কারখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ' যখন যাত্রা শুরু করে তখন আমি কলেজিয়েট স্কুল থেকে TC নিয়ে ঐ স্কুলে ভরতি হই।
৭৫ সালে স্কুলের ১ম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে SSC পাশ করি।
হাফিজা,লিয়াকত,হালিম,সাদিয়া, সুফিয়া আর হোরায়্ররা- আমরা সাত ভাই বোন। আশা করি অনেকেই এখন চিনতে পারবে।
আমরা প্রথমে ই- টাইপে ছিলাম পরে সম্ভবত C-4/B তে থাকতাম।
৯০ তে আব্বা অবসরে যান।
আর কয়েক বছর পর আমারও যাবার সময় চলে আসবে।
জীবনটা এতো ছোট কেন?
Subscribe to:
Posts (Atom)
No one has commented yet. Be the first!