Sunday, August 23, 2015

বালি ঘড়ি


সেদিন বলেছিলাম আজিজ স্যার এর কথা। রেজা ভাই এর প্রশংসা দেখে লোভ বেড়ে গেলো। ভাইয়ার সম্মানার্থে আমাকে আবার লিখতে বসতে হলো। প্রাইমারির গন্ডি পার না হতেই পরলাম মাহফুজ স্যার এর সামনে। ক্লাস ফাইভ কি সিক্স এ পরি তখন , মাহফুজ স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন, স্যার দেখতে অনেক স্মার্ট , তারচেয়েও স্মার্ট স্যারের হাতে থাকা বেত । স্যার কলম বেত টা খুব যত্ন করে রাখতেন ,এই কলম বেত কে ক্যাটরিনার মত করে নাচিয়ে নাচিয়ে আমাদের রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিতেন, ক্লাসে ঢুকেই বললেন কেউ আমার ক্লাসে কথা বলবে না , যদি কোন কথা থাকে আমাকে বলবে। বালি ঘড়ির একটা চ্যাপ্টার পড়াচ্ছেন, খুব সুন্দর করেই পড়ালেন, ক্লাসেই আমার মুখস্ত হয়ে যায়, স্যার সবাইকে পরের দিন মুখস্ত করে আসতে বলে চলে গেলেন । 

পরদিন ক্লাস শুরু হলো, স্যার হুঙ্কার দিয়ে বললেন ,“যারা পড়া শিখোনি বেঞ্চে কান ধরে উঠে দাড়াও, আমি জিজ্ঞেস করার পর যদি দেখি পারছো না শাস্তির পরিমান কিন্তু দ্বিগুন হবে ”


একে একে আমার অনেক বন্ধু উঠে দাড়ালো , এক পর্যায় আমার ডান পাশে থাকা রাসেল সহ হেভিওয়েট অনেকেই বলে উঠলো ঝামেলা করে লাভ নাই স্যারের বেত দেখে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছি কি দরকার ডাবল শাস্তির ?
সৌরভ আর আমি একজন অন্য জনের দিকে তাকালাম ? দুই জন ভয়ে অস্থির। কথাও বলা যাচ্ছে না। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে । সৌরভ খাতায় লিখে জানতে চাইলো কিরে বেঞ্চে দাড়াবি ? আমি রিপ্লাই দিলাম মাথা খারাপ ইজ্জত থাকবে ? 

রিপক দূর এত প্রেসার নিতে পারবো না দাঁড়িয়ে যাই বলে উঠেও দাড়ালো । এইবার আমার অনেক ভয় লাগছে , যদি স্যারের ভয়ে ভুলে যাই তখন কি হবে? দ্বিগুন শাস্তি কি হতে পারে চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছি । 

স্যারের ক্লাস সবাই চুপ হয়ে আছে , নিঃশ্বাস নেয়ার শব্দ শুনলেও মনে হয় স্যারের বিখ্যাত কলম বেতের স্পর্শ পেতে হবে ,আমাদের ক্যাপ্টেন সৌরভ বালি ঘড়ির সংজ্ঞা ভুলে যায় , সৌরভ আমাকে কানে কানে বলে নমি বালি ঘড়ির শুরুর দিকটা একটু ধরায় দে, আমিও ফিসফিস করে বলছি কিছুক্ষন পর দেখি স্যারের হাত আর আমার কান এর কোলাকুলি হচ্ছে !!! এই খানেই শেষ না আমাকে পড়া ধরলো, পড়া মুখস্ত ছিল এক নিঃশ্বাসে বলে দিয়েছি কিন্তু নিস্তার পাই নাই , আমাকে দশ বার কান ধরে উঠবস করতে হলো , তারপর স্যার বলল আর জীবনে আমার ক্লাসে কথা বলবি ? 


আমার কথা বলার শক্তি ততক্ষনে শেষ, তবুও অনেক কষ্টে মাথা নেড়ে বললাম স্যার কোনদিন বলবো না, এইটুকু না বললে আমার উপর কেয়ামত নাজিল হতো এইটা বড় ভাইদের কাছে আগেই জেনেছিলাম। কপালে ছিল তাই কান ধরলাম। মন টাই খারাপ হয়ে গেলো। 

ক্লাস শেষ হবার পর সৌরভ হো হো করে হাসিতে ফেটে পরে ,সাথে পুরো ক্লাস । একটু চুপ থেকে আমিও অনেকটা না বুঝেই ওদের হাসির মধ্যে ডুবে যাই, হাসি মনে হয় ছোয়াচে একবার কোথাও শুরু হলে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পরে ।
কতদিন হয়ে গেলো আজো ভুলতে পারিনা সেই বালি ঘড়ির কথা , কিছু দিন আগে সৌরভের বাসায় গিয়েছি , আমাকে একটা বালি ঘড়ি দেখিয়ে বলে নমি মনে আছে ? 

আমি বললাম কান ধরে উঠ বস করার কথা ? সৌরভ বলে না তোর কান ধরে উঠ বস করার সময় থর থর করে কাপুনির কথা ।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss