এভাবে আমাদের মিশন চলছে। তবে বেশী অপারেশন হতো কারো বাসা খালি থাকলে। হয়তো আমাদের মধ্যে কারো বাসার সবাই বাড়ী গেছে ,আমাদের একজন সোনার চাঁন বাসার পাহারায় আছে।সংবাদ পেয়ে আমরা দলে-বলে তার বাসা পাহারায় বসে গেলাম । এ পাহারা সে চাক বা না চাক, তাতে আমদের কিচ্ছু যায় আসে না। এর রকমই এক ঘটনায় মোজাম্মেলের(ডা: মোজাম্মেল) বাসা ফাঁকা । আমরা সবাই মিলে কঠিন পাহারা দেই। দু’দিন বাদে হঠাৎ সকাল সকাল মোজাম্মেল আমাদের বাসার নিচ থেকে করুণ স্বরে ডাকছে।(তখন আমরা C-3 –তে থাকি)। নিচে নেমে এলাম। সে শুকনো গলায় নিচু স্বরে বললো---“শালা বাপ্পি—হারুইন্যা(মারগেছে আল্লাহ্ তাকে মাফ করুন) আরো শালারা মিলা হুজুরের মুরগী জবহ করেছে। এখনতো ভাই ধরা খামু আমি”।
---------ওরা কোথায়?
-------সব শালারে ঘরে তালা মাইর্যা রাখছি।
------ঠিক আছে চল। বলে ওর বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। এমন পাকা চোর মোজাম্মেল তার ঘাবরানোর কারন হলো,এ কেতো হুজুরের মুরগী তার উপর হুজুরের বাসা মোজাম্মেলদের বাসার নিচে।বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখি সারা সিঁড়িতে চাউল ছিটানো। এই চাউল ছিটানোর বাহার দেখে বুঝতে বাকি থাকলো না এ সবই মুরগীকে ফাঁদে ফেলার কৌশল। ৩/৪টা একটু বয়সি মুরগীর বাচ্চা চিউ চিউ করছে। মোজাম্মেল ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বললো—--“মুরগীটা এ বাচ্চা গুলির মা ছিল রে”।
যাক,বাইর থেকে তালা খুলে আমরা দু’জন ঘরে ঢুকলাম। ভেতরের চোরেরা নির্বিকার। সেখানে আনড়ি চোরদের মাঝে সেলিম(মো: আলী সাহেবের ভাই)ও ছিল। সরাসরি বলরাম—“মুরগীর নাড়ি-ভুড়ি,পাক-ফইর কই ফেলছিস”।
মোজাম্মেল দিশেহার মানুষের মত বিলাপ করে উঠল—“এই গুলির জন্যই ধরা খামুরে ভাই”
----“চুপ কর। একটা কাগজের ঠোংগা দে”। খোজা খুজি করে আনা হলো ঠোঙ্গা। হারুন ষ্টোর রুমের ভিতর থেকে মুরগীর উচ্ছিষ্ট কাগজের ঠোঙ্গায় ভরে দিল। আমি আর গৃহস্বামী মোজাম্মেল ঠোঙ্গা হাতে বের হয়ে গেলাম। মোজাম্মেল কেঁপে কেঁপে বার বার বলছে—“দেখিস রে ভাই। আমার যেন কেমন কেমন লাগে”। আমি স্বাভাবিক ভাবে ঠোঙ্গা নিয়ে আমাদের বাসার পাশের রাস্তার দেয়ালের বাইরে ঠোঙ্গা ছুড়ে ফেলে দিলাম। এতোক্ষণে মোজাম্মেল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল—“তোর এতো বুদ্ধি”! যাক আমিও চোরাই মুরগীতে নিজের ভাগটা নিশ্চিত করলাম। তারপর দুপুর বেলা আমাদের হুজরের মতই বয়স্ক বুড়া মুরগীর অর্ধ সিদ্ধ রাবারের মত মাংশ টানা টানি করে ছিড়ে খেলাম।
আর একদিন আমরা তখন(E-11-G)নিরুদের পাশে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকি। বাসায় কেউ নেই। মোজম্মেল বাসায় এলো। কথা বলছি। হঠাৎ সে উঠে গিয়ে খোলা দরজা বন্ধ করে দিল। ঘরের মধ্যে তিনটা কালো কালো মুরগীর বাচ্চা। মুহুর্তের মধ্যে মোজাম্মেল একাই সব ধরে ফেল বললো----“ধরবি না আমি একাই জব করমু”?
আমার অবস্থা তখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি। কারণ বাচ্চা গুলি আমাদের পাশের বাসার হামিদ সাহের। ডেঞ্চারাস মানুষ। আমরা ছাড়া মনে হয় না কেউ বাদ আছে, যার সাথে তার গালাগালি থেকে হাতাহাতির উপক্রম না হয়েছে। মিউ মিউ গলায় বললাম—“থাক ভাই ও গুলি ছেড়ে দে”।
-----“উ হুঁ । হুজুরের মুরগী মাপ পায় নাই আর......ধর কইলাম”। কী আর করবো! দু’চোরে মিলেমিশে হামিদ ভায়ের সব্বনাশ করে চিকেন ভূনা খেলাম।
যাক এবার সম্মিলিত অপারেশনের কথা বলি----এ ঘটনায় মনে হয় না আমাদের ত্যদর গ্রুপের কেউ বাকি ছিল। আ:রহমান মোল্লা(জম্মের পাকা চোর) থাকে তার ভাইয়ের বাসায় B-H-১এর নিচ তালায়। শীতের দিন তার বাসা খালি। আমরা সবাই তার বাসায় ২৪ ঘন্টা হাজির। সম্ভবত: ফারুক(আমেরিকা প্রবাসি)সংবাদ আনলো মসজিদের হুজুরের ডাব গাছে অনেক ডাব আছে। আমি গাছের কাছে না গেলেও যথা সময়ে হুজুরের গভির ঘুমের সুযোগে ডাবের পুরো কাদিসহ রুমে আনা হলো। মোল্লা ধরা পড়ার আতংকে দিশেহারা। আমরা সবাই বুদ্ধিমান চোর। তাই কোন আওয়াজ না হবার জন্য বস্তা মোটা করে তার উপর হাফ ডাব হাফ নারিকেল রেখে দা-বটি দিয়ে কোপ দেই। তবুও ধুম করে আওয়াজ হয়। মোল্লা দু’হাত তুলে লাফ দিয়ে উঠে-----
-----------“হায় হায় রে এ কথা ফাঁস হইবো। আমার ভাইয়ের চাকরী যাইতো গা। ভায়ে আমারে মাইর্যা বিছায় হাইল বো। ভাই তোরা ডাব নিয়া যা। তগো দুইড্ডা পায়ে ধরি”।
কে শোনে কার কথা। এক এক জন ডাবের পানি- শ্বাষ খেয়ে পেট ঢোল। অল্প কিছুক্ষন পর শুরু হলো ঘন ঘন বাথরুম করা। এক সময় বাথরুমে লম্বা লাইনের কারনে বেশ কয়েক জন বাইরে গেল বাথরুম করতে। তারা ফিরে এলো হুজুরের খেজুর গাছের এক হাড়ি রস নিয়ে। সিন্ধান্ত হলো রসের ক্ষীর পাকানো হবে। মোল্লা ভয়ে ছটফট করতে করতে চাউল-টাউল বের করে দিল। রাত ২/৩টা পর্যন্ত রান্না চললো। খাওয়া দাওয়া শেষে আর ঘুম হলো না। সকাল পর্যন্ত চললো খিক খিক হি হি। একটু হাসির আওয়াজ জোরে হলেই মোল্লা দু’হাত উচু করে---“আরে শালারা তোরা থাম। আমার ভায়ে জানলে আমারে মাইর্যা বিছায় হাইল বো”। সারারাত এই করে সকালে ঘুম ঘুম চোখে বাসায় ফিরলাম।
কাহিনী এখানে শেষ হলে ভাল হতো। কিন্তু না আমরা পুরো চোরের গুষ্টিসহ ধরা খেলাম। তবে মানুষের কাছে না। আল্লাহ্ র কাছে। সব চোরের হয়ে গেল ডাইরিয়া। বিকেলে তখনো কারো কারো ডাইরেক লাইন থেমে থেমে চলছে। আমরা আবার মোল্লার ওখানে মিলিত হলাম। মোল্লা আমাদের উদ্দেশ্যে ডায়লগ মারলো---“দেখ,তগোরে কইছ্ লাম কুন কথা হুনছস(শুনছস) না। হুজুরের বদ-দোয়ায় তগো সাথে আমারও পায়হানা(পায়খানা) করতে করতে জান শ্যাষ”।
No comments:
Post a Comment