স্টিল মিলস তখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে,
৪০% বিল্ডিং খালি,
বেশিরভাগ মানুষ বের হয়ে গেছে,
আমরাও তখন কলনি থেকে বের হয়ে গেছি,
বলতে গেলে বাসাটাই শুধু বাহিরে ছিলো কিন্তু সব কিছু কলোনিতেই হতো। অবসরের ৯০%
সময়ই কাটতো কলোনিতে। সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবেই চলছে,
সেই আতিক কাকার প্যাড়া,
খেলাধুলা, আড্ডাবাজী, ডাব অপারেশন সব কিছুই স্বাভাবিক।
এই সময় নতুন ২ আঙ্কেল এর আবির্ভাব। উফ………
তাদের খবরদারীতে আমাদের কলোনিজীবন তেজপাতা হবার উপক্রম। যেখানে আতিক কাকার থিওরি অনুযায়ী যদি ভদ্র হয়ে থাকতাম,
আতিক কাকার প্যাড়া এড়িয়ে চলা যেতো,
সেখানে এই ২ জনের আলগা খবরদারীর যন্ত্রণায় আমাদের মাথাতো ফরটি-নাইন হয়ে থাকতো।
অবাক কান্ড !!! ২৬/২৭ বছর কাটিয়ে দিলাম কলোনিতে,
সেখানে আমাদের উপরে মাতাব্বরি
!!! যেখানে কারো কোন সমস্যা হয় না,
সেখানে তাদের সব কিছুতেই শরীর জলতো !!! তাদের একটাই কথা, আমরা কলোনী থেকে বের হয়ে গেছি এখন কলোনীতে কেন আসি
!!! কতবারযে তাদের সাথে ঝগড়া আমাদের
!! ( এখানে অনেকেই আছে এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল এবং অনেকেই জানেন ব্যাপারটা,
জাস্ট কলোনি রিলেটেড বলেই ব্যাপারটা শেয়ার করলাম,
অনুগ্রহ করে আঙ্কেলদের নাম প্রকাশ করবেন না। )
এরপর অনেক চিন্তা করে উপায় বের করলাম,
দিতে হবে পোস্টার থেরাপি। রমজান মাস,
২ জনের নামে ১০ টা করে পোস্টার ছাপালাম ঈদের ৪ দিন আগের একই তারিখের,
পোস্টারের বিষয় ছিলো অনেকটা এইরকম,
“ ……/……/…… তারিখ বাদ আসর,
স্টিল মিলস জরুরী আবাসিক কলোনি,
বাসা ও বিল্ডিং নাম্বার
………………… যাকাতের কাপড় প্রদান করা হবে। আপনারা গরিব দুখি ভাই ও বোনেরা দলে দলে অংশগ্রহন করবেন
“
আরেকটাতে লিখলাম, ““
……/……/…… তারিখ বাদ মাগরিব,
স্টিল মিলস জরুরী আবাসিক কলোনি,
বাসা ও বিল্ডিং নাম্বার
………………… রমজান উপলক্ষে গরিব দুখিদের খাওয়ানোর জন্য এক মেজবানির আয়োজন করা হবে । গরিব দুখি ভাই ও বোনেরা দলে দলে অংশগ্রহন করবেন ও দোয়া করে যাবেন
“
বাহ একই দিনে যাকাত নিয়ে খেয়ে আসতে পারবে,
বার্মা পাড়ার মানুষগুলো হয়তো এমনই ভাববে।
ঈদের ১০ দিন আগে শুধু বার্মা কলোনিতেই বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে দিলাম,
রেজাল্ট কি হবে জানি না,
এর পর ঈদ করার জন্য অনেকেই চলে গেলাম গ্রামের বাড়ীতে,
ঈদ এর দুইদিন পর এসে ইউনুস ভাইয়ের দোকানে এসে দাড়ালাম আর অন্যদের আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভাবছিলাম পোস্টার থেরাপিতে বোধ হয় কাজ হয় নাই। ইউনুস ভাই আমাকে দেখেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি আর বললেন,
“ আমি জানি তোরাই করছত এই কাম,
তোরা ছাড়া আর কেউ নাই এই কাম করবে,
এখন কেউ স্বীকার করতেছে না
”
আমি বললাম, কি কাজের কথা বলতেছেন
?
ইউনুস ভাই, “ আর বলিস না। ওই দিন কলোনির গেটে গোটা বার্মা কলোনি হাজির,
প্রথমে ১ জন ২ জন করে আসতেছিলো,
সিকিউরিটি বুঝে নাই,
পরে যখন দলে দলে আসতেছিলো তখন সিকিউরিটি গেট বন্ধ করেও আটকাইতে পারতেছিলো না
!!! ১৫০/২০০ ফকির এসে চিল্লাইতেছে আর বলতেছে,
কে নাকি পোস্টার লাগাইছে,
এই জন্য যাকাত নিতে আর খাইতে আসছে। সিকিউরিটি না আটকাইলেতো ওই দুই ঘরের দরজা জানালা ভেঙ্গে ফেলতো
, হা হা হা
“
আমি চুপ হয়ে গেলাম কিন্তু স্বীকার করলাম না,
( যদিও আমি জানি ইউনুস ভাই বুজতে পেরেছিলেন,
কারা করেছিলো এই কাজ
) আমি বললাম আমরাতো গ্রামেই ছিলাম,
আমরা কিভাবে করবো?
কিন্তু মিশন সফল এই ভেবে খুশি হলাম এর পর সবাই মিলে সেলিব্রেট করলাম।
পোস্টার থেরাপির পর …………………… আঙ্কেলরাও ঠান্ডা হয়ে গেলো।
“ এখন ভাবি ঝোকের বশে করা কজটা হয়তো অন্যায় ছিলো,
কিন্তু দরকার ছিলো।“
No comments:
Post a Comment