গ্রান্ড আড্ডায় একটা স্মরণিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে আমি গোড়া থেকেই গোঁ ধরে ছিলাম। এদিক সেদিক নানা ভাবে চেষ্টা করেছি কিন্তু গ্রান্ড আড্ডার অন্যান্য কাজের তোড়জোড়ে হয়তো এটা চাপা পড়ে গিয়েছিলো। শেষে কিছুটা বিরক্তি আর ক্ষোভে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ একটি পোস্ট দেই আমি। খানিকটা ওই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় আর অনেকটা স্বদিচ্ছার কারনে পহেলা জানুয়ারি নাজমুল ভাই আমাকে ফোন করেন এবং বলেন এখন কাজে হাত দিলে স্মরণিকা প্রকাশ সম্ভব কিনা। আমি অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই বললাম হ্যা সম্ভব। ২ তারিখ চলে গেলো স্মরণিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত কিনা এই ধারনা বদ্ধমুল করে নিতে। ২৭ তারিখের মধ্যে ম্যাগাজিন হাতে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা কাজ শুরু করলাম। আমাদের হাতে ছিলো মোটে চব্বিশ দিন। প্রথমেই আমরা কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি-
১) সময় স্বল্পতার কারনে আমরা কোন লেখা আহবান করবো না। পেইজের লেখা থেকেই আমরা কনটেন্ট রেডি করবো।
২) স্মরণিকা নিয়ে পেইজে কোন মতপ্রকাশ করবো না এবং কেউ মতপ্রকাশ করলে সেখানে অংশগ্রহন করবোনা। অহেতুক বিতর্ক এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।
৩) কেন্দ্রীয় ফান্ডের উপর চাপ না ফেলতে আমরা চেষ্টা করবো স্মরণিকা প্রকাশের খরচের জন্য যেন মুল ফান্ডের উপর নির্ভরশীল হতে না হয়।
৪) আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো প্রতিনিধিত্বমুলক অথবা শিল্পমানে উৎকৃষ্ট লেখাগুলো তুলে আনতে। যদিও সাড়ে চার মাসের জমানো লেখা থেকে বেছে এই কাজটা করা খুবই দুরূহ।
এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য বন্যা আপার নেতৃত্বে আমরা উদয়াস্ত কাজ করেছি। তাঁর বাসার অন্ন ধ্বংস করেছি এবং তাঁর তিন কন্যাকে চা বানানোতে ব্যস্ত রেখেছি। তিনি হাসিমুখে আমাদের অত্যাচার মেনে নিয়েছেন।
বইয়ের প্রচ্ছদ এবং অঙ্গসজ্জার ব্যপারে আমার প্রথম পছন্দ ছিলো টিটু ভাই। আমার সৌভাগ্য যে তাঁকে আমি পেয়েছি। তিনি আমার এবং নাজমুল ভাইয়ের অনুরোধে এবং CSM এর প্রতি দায়বদ্ধতার কারনে নিজের ব্যস্ততার মাঝেও ডিজাইন সংক্রান্ত সব কাজ করে দিয়েছেন।
আপেল ছেলেটার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে লেখা গুছিয়ে রাখা ও কম্পোজের কাজে আমাকে সবচেয়ে বড় সাপোর্টটি দিয়েছে। রাত দুটায় তাঁকে আমি মেইল করেছি আর সে রাত তিনটায় লেখা রেডি করে আমাকে পাল্টা মেইল দিয়েছে এমনও হয়েছে।
স্মরণিকা নিয়ে গত কয়েকদিনে পেইজে বেশ কিছু আলোচনা, সমালোচনা আর কিছু প্রস্তাবনা দেখেছি। সবই আমরা গভির মনোযোগে লক্ষ্য রেখেছি। এগুলো আমাদের কাজে সহায়তা করেছে, এসব আলোচনা থেকেই আমরা পাঠকদের পালস ও টেস্ট বুঝার চেষ্টা করেছি।
অবশেষে আমাদের স্বপ্নের বই প্রেসে চলে গেছে। লোহার যন্ত্রের নিচে কাগজে, রঙে আর কালিতে আমাদের স্বপ্ন নির্মান চলছে। বন্যা আপা খুশিতে আত্মহারা, এখন তিনি প্ল্যান করছেন প্রেসে যাবেন স্বপ্নের বুনন দেখতে, আপেল কক্সবাজার থেকে ফোন করে আনন্দে হইচই করেছে।
প্রথম প্রয়াস ও তাড়াহুড়ায় কাজ করার কারনে কিছু ভুল, কিছু অসঙ্গতি হয়তো থেকেই যাবে। সকলের কাছে এজন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ও হ্যাঁ, দেড় দশক পর আমাদের ফিরে আসার চেষ্টা থেকে সকলের একত্র হবার যে আয়োজন সে আয়োজনের প্রতি বিনম্র হয়ে আমাদের স্মরনিকার নাম রাখা হয়েছে 'ফেরা'।
No comments:
Post a Comment