Thursday, January 7, 2016

স্মৃতিচারণ


বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কখনও হাফ প্যান্টের পকেটে কিংবা কখনও লুঙ্গির কোছায় প্রায় ৮০/১০০ মার্বেল নিয়ে বুইজ্জার বাগানে খেলায় নেমেছি।খেলা শেষে প্যান্ট বা লুঙ্গি মার্বেলের ভারে খুলে যায় যায় অবস্থা কারন এখনতো সাথে ৩০০/৩৫০ মার্বেল। পানির পাম্পে উঠে সেগুলোকে নীচের দিকে ছুঁড়ে মারতাম আর নীচে থাকা ছোটরা সেগুলো কুড়ানোয় ব্যাস্ত। যারা কুড়িয়ে একদম পেতোই না তাদেরকে আবার দয়াবশত ১০/১২ টা এমনিতেই ধরিয়ে দিতাম।

একটা রড বাঁকা করে গোলাকৃতি করে আরেকটা রড বিশেষভাবে বাঁকিয়ে কত যে চালিয়েছি। সেগুলো নিয়ে চালাতে চালাতে আবার ড্রেন লাফও দিতাম। বুইজ্জার বাগান ছিল নারিকেল গাছে ভরা। আর গাছের শিকড়্গুলো ছিল সাতচাড়া কিংবা নই খেলার উপকরন। সিগারেটের প্যাকেট ছিঁড়ে টাকা হিসেবে ব্যাবহার করতাম।


ফুটবল খেলতে যেয়ে গাছের শিকড়ে অনেকবার পা কেঁটে গিয়েছে, নখ উপড়ে গিয়েছে। নারিকেল গাছের ঝুলন্ত ডাল ধরে টারজানের মতো চিৎকার দিয়ে কত মজা করতাম।

কাশেম কাকার (কোরবান ভাইয়ের বাবা) আমগাছ থেকে আম চুরি করে পালানো ছিল আমাদের জন্য একটা মজার খেলা। আম চুরি করতে যেয়ে আঞ্চলিক ভাষার কত গালি যে বাবা মাকে খাইয়েছি!! 
প্রায় সময় খাল পাড়ে টারজান খেলতাম। খালপাড়ে চাচাদের করা বাগান থেকে চুরি করা টমেটো, কাঁচকলা, কাঁচা মরিচ দিয়ে চাটনি বানিয়ে খেতাম। আহা সে কি অমৃতের স্বাদ।

খালের পাশে আনসার ব্রাকের দেয়াল ঘেষে
যেদিন থেকে রাস্তা বানিয়েছে সেদিন থেকেই আমাদের চাটনী খাওয়া, টারজান খেলা শেষ।সেই নতুন রাস্তা ধরে দেওয়াল টপকিয়ে গুলাইল হাতে কলোনীর সীমানার বাইরে অনেক সময় কর্নফুলীর ধারে চলে যেতাম। সেখানে জেটিতে থাকা বিদেশী জাহাজগুলোতে অনেক অনুনয় বিনয় করে উঠার চান্স পেতাম।অনেক সময় বাছির, মিজান ভয় পেত যদি আমাদের নিয়ে চলে যায় তখন কি হবে!!! আমার হাতের নিশানা এতোই ভাল ছিল যে গুলাইল দিয়ে উড়ন্ত ঘুঘু, শালিক অনেক সময় নীচে নামিয়ে আনতাম।

সেই নতুন রাস্তাতেই অনেককে দেখতাম রড দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে এলুমিনিয়াম, সিলভার নামের কিংবা কয়লা টাইপের কি সব বের করতো, পরে সেগুলো স্টীল মিল বাজারে ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করতো। সেই টাকা দিয়ে লাঠি চকলেট (ললিপপ), লটারী বিস্কুট কিংবা হজমী (দাঁতের মাজন টাইপের) কিনতো। আমরা ছোটরা ভাগ পেতাম এসিস্টান্ট থাকার কারনে। হিহিহি

আরো কত স্মৃতি যে আছে এই কলোনীটাকে ঘিরে! ভাবলে অবাক হতে হয় কি মধুর আর মজার সময়গুলোই আমরা কাটিয়েছি ওখানটায়।

No comments:

Post a Comment