Monday, February 1, 2016

অপেক্ষা


কলোনি তে আমরা যখন প্রথম আসি আমাদের বাসা ছিল BH 1 এ।তিন তলা।পাশাপাশি অনেকগুলো ফ্যামিলি। বাসার পাশেই স্কুল,মসজিদ।আমরা আগে যে বাসায় থাকতাম সেখানে এত মানুষ ছিল না।তাই হঠাত বেশি মানুষ দেখে আমি কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম।আমি নিতু।মা বাবার একমাত্র সন্তান।ভাই বোন নেই।তাই খুব সহজে কারো সাথে মিশতে পারতাম না।

প্রথম দিন স্কুলে গেলাম।একপাশে বসে আছি ক্লাসের।এমন সময় আমার পাশে এসে বসল ইতি।আমার সাথে ও কথার ফুল ঝুড়ি খুলে বসল।সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।এদিকে আমার মাথায় শুধু চিন্তা কিভাবে টিচারদের সুনজরে নিজেকে নিয়ে আসব।।প্রথম সাময়িক পরীক্ষার অনেক দেরি।ইতি আমাকে বুদ্ধি দিল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাম লিখাতে।আমিও ওর কথা মত গান, উপস্থিত বক্তৃতা তে নাম দিলাম এবং প্রথম পুরস্কার জিতে নিলাম।


এভাবে আস্তে আস্তে স্কুলে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকল।বিষয় টি আমিও বেশ উপভোগ করতে লাগলাম।

খেয়াল করলাম এই স্কুলের মেয়েরা টিফিন টাইমে ছাত্তার ষ্টোর নামে ইউনুস ভাইয়ের দোকান থেকে এটা ওটা কিনে খায়।বেশির ভাগই বাসা থেকে টিফিন আনেনা।বরং বাসায় গিয়ে টিফিন খেয়ে আসে।আমিও বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতাম।কিন্তু যখন আমরা সি টাইপে চলে গেলাম আমিও ইউনুস ভাইয়ের দোকানে যেতে শুরু করলাম।

ক্লাস এইটে আমি বৃত্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে গেলাম।এতদিন মা আমায় পড়াতেন।কিন্তু এখন আমার জন্য টিচার খোজার পালা শুরু হল।বাবা নিখিল স্যারের সাথে যোগাযোগ করলেন।কিন্তু উনি সময় দিতে পারলেন না।বাধ্য হয়ে কলোনি র এক মেধাবী বড় ভাইকে আমার গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হল।উনার নাম সাব্বির।বাবার কলিগের ছেলে।চশমা পড়েন।গম্ভীর টাইপের।ফর্সা। মোটামুটি ভালই পড়ান।তবে কথা কম বলেন।ভার্সিটি তে ম্যাথম্যাটিকস এ পড়েন।হিরো টাইপ চেহারা।

স্কুল থেকে ইতি,শান্তা দের সাথে যখন বাসায় ফিরি তখন দেখি সাব্বির ভাই ইউনুস ভাইয়ের দোকানের সামনে সিগারেট খাচ্ছেন।দেখে আমার গা জ্বলে।ভাল ছেলেরা কি সিগারেট খায়? আমি আড়চোখে দেখি,কিছু বলিনা।
আম্মুর সাথে নারকেল তলায় গান শিখতে যাই।তখন দেখি সাব্বির ভাই ট্যাংকি র নিচে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন কিংবা জেক্স থেকে বের হচ্ছেন।আমি তখনো উনার দিকে তাকিয়ে থাকি।কিন্তু উনি সেটা খেয়াল করেন না।ছেলেরা মেধাবী হলে বোধহয় অহংকারী হয়ে যায়।কে জানে?

সাব্বির ভাইয়ের কাছে নিজেকে ভাল ছাত্রী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য আমি পড়ায় আরও মনো্যোগ দেই।বেশি বেশি পড়ি।একসময় আমার বৃত্তি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসে।উনিও আমাকে দুইবেলা পড়াতে আসেন।আমি ত মনে মনে মহা খুশি কিন্তু কাউকে বলতে পারিনা। আমার পরীক্ষা শেষ হয় ভালভাবে। কিন্তু সাব্বির ভাই আর আসেন না।আব্বুর মুখে শুনি উনারা নাকি কলোনি ছেড়ে চলে গেছেন।শুনে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।কাউকে কিছু বলতে পারিনা।

এর কিছুদিন পর স্টিল মিল কলোনি র সব মানুষ একে একে চলে যেতে থাকে।কারন মিল টা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে।আমরাও চলে আসি বাসা ছেড়ে।

তারপর কেটে গেছে সতেরো বছর।কলোনি র কারো সাথে যোগাযোগ নেই।একদিন শুনলাম কলোনি র সব মানুষ নাকি আবার একত্রিত হবে Grand Adda নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।শুনে আমি ত খুশিতে আত্মহারা।

তবে এই আনন্দ শুধু কলোনি র মানুষগুলো কে দেখব বলে নয়, কেন জানি মনে হচ্ছিল সাব্বির ভাই হয়ত আসবেন। কিন্তু উনি কি আমাকে চিনতে পারবেন? না চিনলে আমি কি নিজ থেকে পরিচয় দিব,ইত্যাদি ইত্যাদি। তবুও আমি যাব।

২৯ জানুয়ারি শুক্রবার আমিও সবার মত আড্ডা তে যাই।এর সাথে ওর সাথে কথা বলতে থাকি।এমন সময় ফ্রেঞ্চ কাট দাড়িওয়ালা একজন মানুষ আমাকে বলেন,তুমি নীতু না! আমাকে চিনতে পারছ?প্রথমে না চিনলেও পরে বুঝতে পারি উনিই সাব্বির ভাই।কথায় কথায় জানতে পারি উনি নাকি এখনো বিয়ে করেননি।মনে মনে খুশি হই আর ধন্যবাদ দেই কলোনি র ভাইবোনদের। 

কে জানে হয়ত উনি এতদিন মনে হয় অপেক্ষা করে আছেন একথা বলার জন্য, নীতু তোমাকে ভালবাসি

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss