গত কয়েকদিন এক বায়ারের শিপমেন্ট নিয়ে টেনসনে ছিলাম। ফরওয়ার্ডার বলে এক কথা ক্যারিয়ার বলে আরেক কথা। দুইটারই ভাবসাব আলাদা। আজকে ফোনে কথা বলেছি প্রচুর। এত বেশি কথা বলেছি যে মোবাইলের চার্জ দুইবার দিতে হয়েছে। বিদেশী এক ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে দেখা করার কথা ছিল, করতে পারি নাই এমনকি ফোন করতেও ভুলে গেছি। প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে। সন্ধ্যায় বাসায় আসার পরে তাই বিছানায় শরীরটাকে আত্মসমর্পন করলাম। একটু পরে গৃহমন্ত্রী এসে বললো আগামীকাল বোয়ালখালী যেতে হবে জানো? আমি বললাম জানি। বললাম গিফট কি দেওয়া যায়? বললো এখন গিফট কিনার সময় নাই। তাছাড়া সবাই টাকা দিচ্ছে । আমি বললাম টাকা দেওয়াটা বিশ্রী দেখায় তাছাড়া টাকা দিলেতো লস। ও বললো লস হলেও কিছুই করার নাই। অগত্যা রাজি হলাম। গৃহমন্ত্রী তার কাজে চলে গেলো। চোখটা একটু বন্ধ করলাম। তখনি মনে পড়লো আমার ছোট বোন শেলীর কথা। ওকে দেখিনা প্রায় সাড়ে চার বছর। আর দেখা হবেওনা কোনদিন। ২০১১ সালের ৩১ জুলাই ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।
আমরা পাঁচ ভাই বোন ছিলাম (জসিম ভাই, আমি, শেলী, মুন্নি এবং নাজিম)। ভাই বোনদের শেলী ছিল তৃতীয় অর্থাৎ আমার ছোট। সে তার ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। ইচ্ছে ছিলো স্কুলের টিচার হওয়ার। তাই সে ডিগ্রী পাশ করার পর ষ্টীল মিল স্কুলেই অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা শুরু করে। কয়েক বছর করার পরও স্থায়ী হয় নাই। এরই মধ্যে ওর বিয়ে হয়ে যায় বোয়ালখালী উপজলোর চরণদ্বীপ এলাকায়। চলে যায় বোয়ালখালীতে। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আবার চলে আসে শহরে। শহরে আসার কিছু দিন পরে বোয়ালখালীর এক প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেয়। প্রতিদিন চিটগাং শহর থেকে বোয়ালখালীতে যাওয়া আসা সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু সে করেছিল। প্রতিদিন প্রচুর পরিশ্রম তারপরেও তার মুখে সর্বদা হাসি থাকতো। কাউকে বুঝতে দিতো তার প্ররিশ্রমের কথা। বছর কয়েক পরে সরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার দেখে বোয়ালখালী উপজেলার জন্য এপ্লিকেশন জমা দেয়। এবং চরণদ্বীপে অর্থাৎ নিজ শশুরালয়ের খুব কাছে নিয়োগ পায়। ছেলে মেয়েকে নিয়ে সেখানে চলে যায়। স্কুল থেকে বাড়ী দুই মিনিটের রাস্তা। মোটামুটি ভাবে কেটে যাচ্ছিল দিন। হঠাৎ একদিন স্কুলের মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাড়ী এসে ভাত খাওয়ার সময় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। কাউকে কোন সুযোগ না দিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। আমর বা আমাদের জানা মতে সে কখনো কারো মনে আঘাত দেয়নি। যদিও কারো মনে আঘাত দিয়ে থাকলে তার জন্য ওকে সবাই ক্ষমা করে দিবেন। দোয়া করবেন যেন আল্লাহ ওকে জান্নাত বাসী করে।
এই বৎসর ওর ছেলে এসএসসি দিচ্ছে আর মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ছে। ওর ছেলে মেয়ের জন্য সকলে দোয়া করবেন। যাতে ওরা মায়ের স্বপ্ন কিছুটা হলে পুরন করতে পারে।
No comments:
Post a Comment