Monday, April 11, 2016

অতিথি


যেখানে সীমান্ত তোমার সেখানে বসন্ত আমার
ভালোবাসা হৃদয়ে নিয়ে আমি বারেবার আসি ফিরে ডাকি তোমায় কাছে..........
বাস ফেনীর মহিপাল ক্রস করার পর এই গানটা ক্যাসেটে বাজতে লাগলো। এমনিতে আবেগ আপ্লুত হয়ে ছিলাম এই গান বাজতে শুরু করায় আবেগ নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলো দুই চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো নিরবে। এটাকে কান্না বলে না। আবেগে চোখ বেয়ে এভাবে পানি পড়াকে কি বলে আমার জানা নাই। 

সি এস এম কলোনী ছেড়ে নাটোরে চলে এসেছি একমাস আগে ১৯৯৮ সালের ৪ ঠা মার্চ। কলোনী ছেড়ে চলে আসার পর এই প্রথম আবার কলোনীতে যাচ্ছি তাই এতো বাধ ভাংগা আবেগ।বাস যতই চট্টগ্রামের কাছাকাছি পৌছাচ্ছে আমার আবেগ ততই বেড়ে চলেছে। শীতাকুন্ড পার হয়ে এসেছি। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই চট্টগ্রাম শহরে পা রাখবো। চিন্তা করছি নেমে প্রথমে কোথায় যাবো রাত তখন বাজে দশটা তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এতো রাতে আর কলোনীতে যাবো না। বৌ বাজার পানির কলে বন্ধু ডালিমদের বাসা তাই দেওয়ানহাটে বাস থেকে নেমে ওদের বাসায় গেলাম। মাত্র একমাস আগেই চিটাগাং থেকে বিদায় নিয়েছি কিন্তু ওদের বাসার সবার ব্যবহারে মনে হলো কয়েক যুগ পর পরিবারের কোনো সদস্যের সাথে দেখা। রাতের বেশীর ভাগ সময় কাটলো ডালিমের সাথে গল্প করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে আমার আর তর সয় না কখন পৌছাবো কলোনীতে। সকাল দশটার দিকে ডালিমকে সাথে নিয়ে রওনা হলাম বেবী ট্যাক্সি চড়ে। পরিচিত শহরটাকে দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম চিরচেনা স্টীলমিলস বাজারে। ট্যাক্সি থেকে বাজারেই নামলাম। ভাই ভাই বেকারি তে দেখা বন্ধু সিরাজের সাথে আরো অনেক পরিচিত মানুষের সাথে। বাজার গেট দিয়ে কলোনীতে ঢুকতেই লেখাটা চোখে পড়লো " থামুন, আপনার পরিচয় দিন"। বুকের ভিতর কেমন যেনো করে উঠলো কি পরিচয়ে আমি কলোনীতে প্রবেশ করছি? জন্ম থেকে বেড়ে উঠা এই কলোনীর সাথে আমার সম্পর্ক টা এখন কি? আমিতো আর এই কলোনীর বাসিন্দা নই। জন্ম, বেড়ে উঠা, হাসি আনন্দের হাজারো স্মৃতি বিজড়িত এই কলোনীতে আমি এখন অতিথি। 


ক্ষনিকের ধাক্কা খাওয়া দূর হয়ে গেলো যখন একে একে সব চেনা প্রিয় মুখ গুলোর সাথে দেখা হতে লাগলো। বন্ধু মিলটনদের বাসায় ব্যাগ রেখে ছুটলাম কলোনীর একমাথা থেকে আরেক মাথা। কিসের পরিচয়?? কিসের কি??? এই কলোনী আমার এই কলোনীর সব বাসিন্দারা আমার আত্মার আত্মীয়। জেক্স,পুকুরপার, অফিসার্স ক্লাব, ওয়ার্কার্স ক্লাব, খালপাড়, ইউনুছ ভাইয়ের দোকান, বড় মাঠ, ট্যাংকির তলায়, কলোনীর সব রাস্তাঘাটে প্রিয় বন্ধুদের সাথে আগের মতো আড্ডাবাজী করে দিন কাটছে। কখন কোন বেলা কার বাসায় খাবো সেই শিডিউল ঠিক করতে মনে হয় একজন এসিস্ট্যান্ট দরকার সাত দিন ছিলাম সবার বাসার দাওয়াত খেতে পারিনি কার বাসা ছেড়ে কার বাসায় খাবো? ভুলে গিয়েছিলাম আমি এই কলোনীর আর কেউ নই। নাটোর ফিরে আসার দিন চলে এসেছে আবার আমাকে কলোনী ছাড়তে হবে। প্রথম বার কলোনী ছেড়েছিলাম বাসিন্দা হয়ে এবার ছাড়ছি অতিথি হয়ে।

এরপর ও অনেকবার গিয়েছিলাম কলোনীতে মিল চালু থাকা অবস্থায় মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও। আমার পরিচয় তখন অতিথি।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss