Friday, April 15, 2016

আকাশ ও তার বোনেরা


- তোমার নাম কি?
- ইতর
- এটা আবার কেমন নাম?
- জানিনা।সবাই এই নামেই ডাকে।
- ও।স্কুলে যাও?
- না
- কেনো?
- বাজান যাইতো দে না।
- কেনো যেতে দে না?
- অম্মা!আই যদি ইস্কুলে হরা লেয়া কৈত্তাম যাই তাইলে হেতেনরে কাম কাজ আগাই দিবো কে।
- তোমার স্কুলে যেতে ইচ্ছে হয় না?
- হ অয়।সকাল বেলা লেদা লেদা হোলা হাইনরে দেই বাফ মায়ে ধরি ধরি ইস্কুলে লৈ যায়।আঁরো যাইতে মন ছায়।কিন্তু হারি না।
- কেনো পারো না?
- অম্মা আন্নেরে এক্কানা আগে দি কিয়া হুনাইলাম?এগিন বাদেয়ো আব্বার টিয়া হৈসা নাই,হরানির লাইগা।
- আমরা যদি বলি আমরা তোমাকে ফ্রিতে পড়াবো তাহলে তুমি পড়বা?

- হ।হরুম
এই বলে ছেলেটির মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।ছেলেটির বয়স ৭ বছর।ভালো নাম আশিকুর রহমান।ডাক নাম আকাশ।সারাদিন টুকি টাকি চুরি আর দুষ্টুমির কারনে বস্তিতে তার নাম হয়ে গেছে ইতর নামে।এখানে আকাশ নামে তাকে কেউ চিনেনা।সবাই এক নামে ইতর বলেই চিনে।৭ভাই আর ৫ বোনের মাঝে আকাশ হলো ৮ নাম্বার। তার বাবা ঘরে না থাকার ফলে তার মায়ের সাথেই আলাপচারিতা সেরে নিলাম।
তার মায়ের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম তার সার সংক্ষেপ সবার ই জানা।সেই চিরপরিচিত দারিদ্রতা।আকাশের বাকি ভাই বোনরা কেউ মিলে,কেউ গার্মেন্টসে আবার কেউ মানুষের বাসায় কাজ করে।আকাশের ছোট ৪ জন। তার মধ্যে ৩জন চায়ের দোকানে,হোটেলে আর ১ জন কোলে।
" স্ট্রিট চাইল্ড " সংঘঠনের সাথে আজ ৩ বছর।এরকম হাজার আকাশ কে দেখেছি এই ৩ বছরে।কারো বয়স ৩ আবার কারো ১০.কেউ হোটেলের কর্মচারি আবার কেউ কাজের মেয়ে।
এসব আকাশরা ছোট বেলা থেকে বেড়ে উঠে দালানে থাকা বাচ্চা গুলাকে দেখে।গাড়ি থেকে নামা বাবার কোলের শিশুটির হাসি মুখ দেখে।কেউ কেউ বেড়ে উঠে ওদের হাত থেকে পড়ে যাওয়া চকলেট টা ধুয়ে মুখে দিতে দিতে।এসব আকাশদের গল্প গুলো যদি মিলিয়ে দেখি তবে তার সার সংক্ষেপ একটি কথা।আর সেটি "দারিদ্রতা"
আকাশ রা বড় হয় খোলা আকাশের নিচে থেকে। তপ্ত রোদ কিংবা হঠাৎ মেঘ অভিমানে বেড়ে উঠে তারা।
আকাশরা বড় হয় কেউ গাজা টেনে কেউ বা রক্তিম চোখে পলিথিন টেনে।
দেশের শিক্ষা খাতে ব্যায় হয় কোটি টাকা।কিন্তু আকাশরা পায় না তার ফুটি কোনা।
আকাশের বোনরাও বড় হতে থাকেঁঅববর্ষ কিংবা ভ্যালেন্টাইনস ডে কিংবা ঈদের দিনে,ফুল বেচে হাসি ফুটায় শিক্ষা খাতের কোটা টাকার অংশদার পাওয়া লোকদের মুখে।
আকাশের বোনরাও বড় হয় গার্মেন্টস এ কাজ করে।ওভার টাইম কাজ করতে গিয়ে তাদের মিটাতে হয় শিক্ষা খাতের অংশ পাওয়া মালিক দের লালসার স্বাদ।
আকাশের বোনরাও বড় হয় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে পুলিশের বিছানার চাহিদা মিটিয়ে। তারা বড় হয় নায্য প্রাপ্তির অভাবে। তারা বড় হয় তাদের প্রাপ্তি আদায়ে আমরন অনশন করেয়ো ব্যার্থ হয়ে। তারা বড় হয় বিল্ডিং দসে পরে মর্গের লাশ হয়ে।
আকাশ ও তার বোনেরা বড় হয় মিডিয়ার কভার ফোটো হয়। তারা বড় হয় ফেসবুকের ইভেন্টে। তারা বড় হয় টক শো তে বসা লোকদের বিতর্ক আলাপে। তারা বড় হয় নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে। তারা বড় হয় লেখকের পাতায় পাতায় কলমের খোচা তে।
একদিন আকাশ ও তার বোনেরা বড় হয় ঠিক ই।কিন্তু কেউ হয় মাদক ব্যাবসায়ি কেউবা ছিনতাইকারি আবার কেউবা সংসদ ভবনের রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা পতিতা নামে।
আমরা কিছু ইচ্ছুক মানুষ পারিনা সব আকাশ দের ভাগ্য বদলাতে।কিন্তু সবাই চাইলে তা সম্ভব।
আকাশদের সুদিন আসবে। তাদের বোনরা মর্যাদা পাবে।সব ঠিক হবে।আকাশ ও তার বোনরা একদিন হাসবে।প্রান খুলে হাসবে।
ওরা হাসবে।স্বপ্ন পুরন হবে।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss