"রোজা মোবারক"
কলোনীর প্রথম সময় কার কথা।১৯৮৮-৯০ সময় কাল টা এমন।
ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় প্রথম আসি কলোনীর সি/১০/এ তে।বাচ্চা কাল,এক দংগল বাচ্চাকাচ্চা খেলার সাথী মিলে গেল।সারা বিকেল হৈ হৈ রৈ রৈ, খেলা ধুলা।বাসার সামনে বড় একটা মাঠ।মেয়েদের খেলার দখলেই থাকত সারা বিকেল।কত ই বা বয়স এক এক জনের? ফ্রক পড়া আউলা ঝাউলা চুলে মাঠ ধাপিয়ে বেড়ানো বাচ্চা মেয়েগুলা তখন রংগীন শৈশবে দৌড় ঝাপে ব্যাস্ত।।
নিত্য খেলার পর মাগরেবের আজান দেয়ার সাথে সাথে মুরগী খোয়াড়ে ঢুকার মত তারাও বাসায় ঢুকে যেত।
ব্যাতিক্রম হাতে গোনা কয়েক দিন।
যেমন,শাওয়াল মাসের শুরু টা। বাচ্চা গুলা আরো অনেকের মত সন্ধ্যে হলেও বাসায় যেত না।গেলেও তিড়িং বিড়িং করে আজানের পর পর ই আবার মাঠে।
চোখ,সেই দূর আকাশের ওপারে।এ মাথা থেকে ও মাথা খোঁজাখুঁজি। আতিপাতি করে চলে চিরুনি অভিযান।কই কই কই????
হঠাৎ ই হয়ত কারো চোখের কোনে ধরা পড়ে এক ফালি চিকন রুপার বক্রপাত। উল্লাসের মাত্রা ছাড়িয়ে চিৎকার "ঐ তো রোজার চাঁদ "। সাথে সাথে চোখ জোড়া চলে যেত নিদৃষ্ট কোনে। নতুন চাঁদ দেখে নাকি সালাম দিতে হয়।তাই হাত ও উঠে যেত সালামের ভংগিতে। এক দিকে মিলের সেই সাইরেন বেজে উঠতো রোজার আগমন বার্তা জানিয়ে দিতে, অন্যদিকে মসজিদে আজান।
আহ,কি সেই দিন।এক মাস স্কুল বন্ধ।রাতের প্রথম প্রহরে সেহেরী র জন্য ভাল ভাল রান্না।চাচা,ভাই দের দল বেধে তারাবীহ পড়তে মসজিদে যাওয়া। রোজা রাখার চেষ্টা। দিন শেষে হরেক পদের ইফতার তৈরী।সন্ধ্যার আগে আগে তুশে ঢাকা বরফ ঝুলিয়ে বাবার বাসায় আসা। এ বাসায়, ও বাসায় ইফতার বিতরন এবং অবশ্যই গরীব মানুষ দের জন্য ইফতার বন্টন।
আরেক টা সাইরেনের অপেক্ষা।রোজা ভেংগে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের।
একটা মাস।চলত আনন্দের সাথে।রোজার মধ্যে সেই শাটল বাস।ঈদের কেনা কাটার জন্য।।।
চলত,চলত,চলত.......ই।
আর এখন?????
রোজা আসে চাঁদ দেখা ছাড়াই।
ফ্রিজ খুল্লেই ঠান্ডা পানি।
বিকেলেই ইফতার শেহেরী রেডি।
পাশের বাসায় কে থাকে তাই জানিনা,ইফতার তাই নিজেদের টাই নিজেদের পেটে চালান দেই।
পাঁচ তলার এই ফ্ল্যাটে গরীব ঢুকা নিষেধ।তাদের হাসিমুখ দেখার সৌভাগ্য তাই নাই :-(
আর শাটল বাস???বাসার পাশে সব দোকান।পা জুগল ই যথেস্ট অনেক সময়।
হুম,সময়।।।
সময় ই বদলে দিয়েছে,দিচ্ছে,দিবে হয়ত আরো।
তারপর ও সেই সি/১০ এর আনন্দের জাবর কাটাই দিন শেষে একটু সুখ।
সজীব......যা তোর জন্য ছাই পাশ লিখে দিলাম।
সবাইকে রমজানুল মোবারক।
No comments:
Post a Comment