আমি কোন লেখক নই। লেখার অভ্যাস আমার কখোনই ছিল না। সিএসএম পেইজের কল্যাণে টুক-টাক দুই-এক কলম লিখি। মহা সমুদ্রের শুরু আছে আবার শেষও আছে। কিন্ত আমার বাবা আমেরিকা চলে যাওয়ার পর বাবাকে নিয়ে যত ভেবেছি, শুরুটা পেয়েছি কিন্ত শেষ পাইনি। বাবাকে নিয়ে আমার ভাবনাগুলো ছিল সবসয়ম নদীর মত প্রবাহমান। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কিছুনা কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকে। আমার জীবনে কোন চাওয়া-পাওয়া ছিলনা। কেননা করুনাময় আল্লাহ তায়ালা আমাকে জন্ম থেকেই সন্তষ্ট করে রেখেছিলেন। আর এই সন্তষ্টির মুল ছিল আমার বাবা। বাবা ছিলেন আমার সকল হাসি-আনন্দের উৎস। তিনিই ছিলেন আমার সব চেয়ে ইনষ্টিটিউশন। আমার মনের সব প্রশ্নের সকল উত্তর পেতাম বাবার কাছ থেকে। আর এ কারনে বাবাই আমার কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়াতো। পৃথিবীর মহৎ ও উত্তম গুনের এমন কোন দিকছিলনা যা আমার বাবার ছিলনা? আমার বিশ্বাস পৃথিবীর সমস্ত উত্তম গুনের অধিকারী ছিলেন আমার বাবা। যাকে বলবো-A man with full good treats.
আমার বাবা ছিলেন আপোষহীন। সেই 1972 সাল থেকে আমরা এফ/10/15 নম্বর বিল্ডিং এ দীর্ঘ 28 বছর 8 জন মানুষ-15 ফুট বাই 15 ফুট রুমে মানবেতর জীবন-যাপন করেছি যা হয়তো ষ্টীল মিল কলোনীর অন্যতম দৃষ্টান্ত। তারপর ও আমার বাবাকে কোন দিন ইউনিয়নের কারো বিরুদ্ধে কোন দিন কোন অভিযোগ করতে শুনিনি। আমার বাবা ছিলেন বারমিলে-পদবী ছিল ‘‘মাষ্টা টেকনিশিয়ান” আমার বাবার বস ছিলেন খানসুর চাচা। অনেক বার আমার বাবাকে ফোরম্যান পদবী নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্ত ফোরম্যান হলে-ওভারটাইম করা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে-উনি প্রমোশন নেন নাই, সুধু আমাদের সচ্ছলতার কথা চিন্তা করে। এমনও দেখেছি-আমাদের একটু সচ্ছলতার জন্য 24 ঘন্টাও মিলে পড়ে থাকতেন। আমাদের জন্য নিজের জীবনটা কে কখোনই জীবন মনে করতেন না। 1996 সালে আমার মা ডায়েবেটিকস রোগে-পরকালে চলে গেলেন। নিজের লেখাপড়া বাদ দিয়ে মাকে নিয়ে ঢাকার বাডেম হাসপাতালে মাসের পর মাস পড়ে থেকেছি-কি দুঃসহ জীবন? কখন কখন আত্মীয়দের বাসায় কখনো হাসপাতালের বারান্দায় কিন্ত মাকে বাঁচাতে পারিনী। আমার বন্ধুরা তার কিছু অংশ জানে। মা গত হওয়ার পর-আমার বাবাকে এমনকি আমার আপন নানীও দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্ত আমার বাবা বলতো-বিয়ে মানুষ একবারেই করে, তাছাড়া আমার ছেলেগুলোর বন্ধন নষ্ট হয়ে যাবে। আমার বাবা আমার মার অভাববোধ কোন দিন আমাদেরকে বুঝতে দেননি। নিজেই আমাদেরকে রান্না করে খাওয়াতেন। আমাদের সুখের কথা চিন্তা করে নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়েছিলেন।
বাবা সম্পর্কে কিছু একটা লিখব বলে উৎসাহ ও উদ্যোম নিয়ে লিখতে বসে ছিলাম। অনেক কিছু লেখার ছিল কিন্ত ভাব প্রকাশে আমি খুব একটা পারদর্শী নই। তাই ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে, যা সকলের অজানা, আমার বাবার চারিত্রিক বৈশিষ্টের অন্য মাত্রা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি জানিনা আমার বাবা পৃথিবীর সর্বত্তোম বাবা কিনা কিন্ত সন্দেহাতীতভাবে জানি পুনজীবন বলে আসলেই যদি পৃথিবীতে কিছু থাকত, তবে আমি আমার এই বাবা-মায়ের সন্তান হয়েই পৃথিবীতে মুখ দেখাতে চাইতাম। আমার বাবা-মায়ের সুখ শান্তিময় জীবন কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
No comments:
Post a Comment