জেকস সিএসএম কলোনীর এক ঐতিহাসিক স্থান। কম বয়সে সেখানে যেতাম শুধু কিছু কেনার প্রয়োজনে আর ঈদের দিনে দলবেধে কোক খাওয়ার জন্য ( তখন কোক আমাদের কাছে খুব বিলাসী সামগ্রী ছিলো)। একটু বড় হওয়ার পর সেখানে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু, প্রখম দিকে জেকসের সামনের বেঞ্চ পর্য্যন্ত ছিলো আমাদের আড্ডার সীমানা, ধীরে ধীরে আমরা বড় হচ্ছি আমাদের আড্ডা ও জেকসের ভিতরে সেই লাল রংয়ের রেক্সিনের সোফায় বসে দেওয়ার অধিকার ও পাচ্ছে। জেকসের পিছনে একটি খুপরি ঘরের মত ছিলো ওখানে হিটারে কাষ্টমার দের জন্য চা বানানো হতো আর এক পাশে একটু সিনিয়ররা চা উইথ সিগারেট আড্ডা চলত, আমাদের খুব ইচ্ছে ছিলো ওখানে আড্ডা দেওয়ার। ঠিকই একদিন আমরা ওখানে আড্ডার অধিকার পেলাম চা উইথ সিগারেট, তার মানে আমরা বড় হয়ে গেছি। এক পর্যায়ে এমনও হয়েছে যে দুপুরে ভাত খেয়ে এসে আড্ডা দেওয়া শুরু হতো চলত সন্ধ্যা পর্য্যন্ত আর বৃষ্টির দিনে তো কোন কথাই নেই।
শাহনুর ভাই, আলীনুর ভাই ও তাদের ছোট ভাই কামাল জেকসে পালাক্রমে বসত, কামাল আমাদের সমবয়সী হওয়ায সে থাকলে আড্ডা টা আমাদের ভালো জমত আর উচ্চ স্বরে ক্যাসেটে গান শোনা তো ছিলোই। প্রায় বিকালে সেই খুপরী ঘরে হিটারে কামাল সহ আমরা নুডলস বানিয়ে খেতাম যার স্বাদ বলতে কিছুই ছিলোনা তারপরও আমাদের কাছে সেটা অমৃত ছিলো।
তাদের বাবা সাদু (আমরা আংকেল বলে সন্বোধন করতাম)যখন জেকসে বসতেন, সে আর এক পরিবেশ-
সারাক্ষন চিৎকার চেচামেচি করে দোকান মাথায় তুলে রাখতেন। পুরানো দিনের হিন্দি গান শুনতেন খুব। আর একটু পরপর আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার করতেন। কিন্ত কোন দিন তাকে নামাজ পড়েতে দেখেছি বলে মনে হয়না। কোন ক্রেতা যদি কোন জিনিস নিয়ে বেশী যাচাই বাছাই করত বা দামদামি করত তাহলে ঐ ক্রেতাকে উদ্দেশ্যে করে তার কর্মচারী মোহিাম্মদ আলী কে শুনিয়ে বলতেন “” TAKE TO TAKE NO TAKE TO GO""। আর এই মোহাম্মদ আলী ছিলো আমাদের অনেক আকামের স্বাক্ষী। আলী নুর ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে, মেযে পাচ্ছেনা তখন এই সাদু চাচা আমাদের ক্ষোভের সাথে আলী নুর ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলতেন “”.............নীর পুয়া, হারা বছর কলোনীর বিতরত দুয়ানদারী গরিও কলোনীর ওগ্গা মাইপুয়ার ল পেরেম গরিত ন পারে এখন আলীনুইজ্যার বিয়ার লাই বলি আত্তুন মাইপুয়া টুয়ান পরের”””।
উনারা ছিলেন অনেক সহজ সরল, উনাদের সরলতার সুযোগে অনেকেই উনাদের অনেক বাকী টাকা শোধ করেনি।
শাহনুর ভাই, আলীনুর ভাই , কামাল ,সাদু চাচা, মো: আলী এরা সবাই পতেঙ্গা র স্থাণীয় বাসিন্দা ছিলো, কিন্ত এটার কোন প্রভাব উনারা আমাদের কখনও দেখান নি, সবসময় উনারা নিজেদের কলোনীর বাসিন্দা মনে করতেন আর আমরাও উনাদের সেভাবেই দেখতাম।
যুগযুগ বেঁচে থাকুক জেকস আমাদের সবার মাঝে।
No comments:
Post a Comment