Wednesday, October 28, 2015

আমার সুমনা হক



আজকে চান্দু আর টিংকু মিলে আমার মন উদাস করে দিলো। সুমনা হকের কথা মনে করিয়ে দিলো আমাকে। সুমনা হক যে আসলে কে সেটা হয়তো আমিও জানিনা। হয়তো সেই গান গাওয়া পাখি অথবা অন্য কেউ। এসব নিয়ে চলতিপত্র নামে একটা পত্রিকায় একটু লিখেছিলাম ১৯৯৭ সালে। ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৭। লেখাটা মানের দিক থেকে মূল্যহীন তবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব কিছুটা হলেও আছে। আর আমার আবেগের পুরো ষোলআনা তো আছেই। দিলাম লেখাটা।
-----------------------------------------------------------

আমার সুমনা হক
-----------------

পিঁপড়ের পাখা গজালে নাকি আগুনে পড়ে, তেমনি ছেলেদের গোঁফ গজালে প্রেমে পড়ে।

আমার নাকের নিচে কালচে দিগন্ত রেখাটি গোঁফ ছিলো কিনা জানিনা তবে সেসময় আমি জীবনের প্রথম প্রেমে পড়লাম আমার প্রথম প্রেমিকা (একতরফা) সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী সুমনা হকের। টিভি পর্দায় তাঁকে দেখলেই আমার বুক কেঁপে উঠতো। টিভির সব সঙ্গীতানুষ্ঠানের সময় বসে থাকতাম কখন সুমনা হককে দেখা যাবে সেই আশায়। বেশিরভাগ সময়ই আশাহত হতাম। টিভিতে তার দর্শন পাওয়া আর আকাশে হ্যালীর ধূমকেতু দেখা একই ধরনের বিরল ঘটনা। তার দর্শন সমসময় পাওয়ার আশায় তার পোস্টার কিনতে গেলাম দোকানে। হতাশ হলাম। কোথাও তার ছবি নেই। উহ কি দুঃসহ জীবন। পত্রিকায় তার যত ছবি পেয়েছি কেটে রেখে দিয়েছি। হঠাৎ এক পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম তার জন্ম তারিখ আর আমার জন্ম তারিখ একই। ১ আগস্ট। আমি বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলাম।


এরপর বহুদিন গেলো, তার প্রতি মনের টান ফিকে হয়ে যেতে লাগলো। তার অবহেলা আর কতোইবা সহ্য করা যায়। ইতিমধ্যে নাকের নিচের দিগন্তরেখাটি তার স্বরূপ উন্মোচন করেছে। আর কল্পনার রাজ্যে ডিগবাজী খাওয়া নয়। এবার বাস্তব জগতে বুক চিতিয়ে হাঁটতে হবে। কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়লাম। বাস্তবের সুমনা হককে খুঁজে বের করতে হবে। অচিরেই পেয়ে গেলাম।

সেই একই চোখ। সুমনা হকের মতো। মাটির দিকে তাকিয়ে স্কুলে যায় আবার একইভাবে ফিরে আসে। কোনদিকে তাকায় না -- ডানে না, বাঁয়ে না, উপরেও না। আমার মনে চিন্তার উদয় হল এই মেয়ে বোধহয় জীবনে আকাশ দেখেনি। তখন আমার জীবনের একমাত্র ব্রত হয়ে দাঁড়ালো তাকে আকাশ দেখানো। তার নাম ঐশী। ঐশী কলেজে উঠে প্রথম আকাশ দেখলো। প্রথম দর্শনেই তার দৃষ্টিসীমা বোধকরি সাত আসমান অবধি গেলো। সে হয়ে গেলো আরো দূরের, শত মাইল ওপারের। মনের দুঃখে আমি প্রমান সাইজের একটি কবিতা উৎপাদন করে ফেললাম।

প্রথম দুলাইন এরকমঃ
মুনি ঋষির মতো ছিলে শান্ত নিঝুম
কলেজে উঠে তুমি কেড়ে নিলে ঘুম।

এই কবিতা একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। সেটা বলা যাবেনা। লাইফের প্রথম হার্ট কেসে হিট খেয়ে ধরাশয়ি হলাম। এরপর ঐশীর কাছ থেকে মন ঘুরিয়ে রাখার জন্য অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে আঠার মতো লেগে রইলাম। এমনকি এ ব্যাপারে ওই মেয়েটির রোমিওর সঙ্গে আমার কঠিন মারপিট হলো। কিন্তু ঘুরে ফিরে আমি ঐশীর কাছেই ফিরে আসি। চোখ বুজলেই তাকে দেখতে পাই। হয়তোবা তাকে দেখার জন্যই চোখ বুজি।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss