২০০১ সালের ৭ আগস্ট যায়যায়দিন এর "বঞ্চনা" সংখ্যায় "শূন্য" নামক এক লেখকের একটি ছোট লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো। লেখাটি স্টিলমিল কলোনি সম্পর্কিত তাই এখানে দিলাম। লেখার শিরোনাম ছিলো "স্মৃতি"।
-----------------------------------------------------------------------------
৭ জুলাই ১৯৯৯ সালে বন্ধ হয়ে গেলো বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগাং স্টিল মিলস লিমিটেড। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোন কাজ হলো না। আমরা মিলের কর্মরত কর্মচারীদের ছেলেরা মন খারাপ করে মিল সংলগ্ন কলোনির রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। কতো স্মৃতির এই কলোনি, কতো আনন্দের এই প্রাঙ্গন। জমজমাট কলোনি হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো। কারো মুখে হাসি নেই, ভবিষ্যৎ চিন্তায় সকলেই দিশেহারা।
কয়েক মাসের মধ্যেই কলোনি খালি হয়ে গেলো। আমরা চলে এলাম হালিশহর এলাকায়। অনেকে দেশের বাড়ি চলে গেলো। জনমানবহীন হয়ে গেলো আমার জন্মস্থান স্টিল মিল কলোনি। যেখানে কেটেছে আমার শৈশব আর কৈশোরের সোনালী দিনগুলো, যেখানকার আলো বাতাসে একজন পরিপূর্ণ যুবক হয়ে উঠেছিলাম। যেখানকার মাটির গন্ধ এখনো আমার গায়ে লেগে আছে।
এখনো মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে কলোনিতে যাই। আমাদের প্রিয় খালপাড়ের পাথুরে রাস্তায় মন্থরভাবে হাঁটাহাঁটি করি। অথবা চলে যাই স্কুলের কাছে যেখানে আমরা অ-আ, ক-খ শিখেছি। স্কুলের মাঠে বসে পুরনো স্মৃতি নাড়াচাড়া করি কিংবা পানির ট্যাংকের নিচে বসে আগের সেই জমজমাট আড্ডাটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে গেছে। আড্ডাটা আর জমে উঠেনা। কলোনিটা কেমন যেন বুনো হয়ে গেছে। ঝোপঝাড়ে ভর্তি চারদিক। সি-টাইপের মাঠে কোমর উঁচু ঘাস। অনেকদিন বল গড়ায়নি এখানে।

ঘোরাঘুরি শেষে ভাঙ্গা মনে কলোনি থেকে বেরিয়ে আসি। ফিরে আসি বর্তমান বসতিতে। কিন্তু আবার যখন খালপাড়ের রাস্তাটা বা ওয়ার্কার্স ক্লাবের বেঞ্চগুলো কিংবা অফিসার্স ক্লাবের টেনিস কোর্টটা ডাকে তখন ছুটে আসি আমাদের কলোনিতে, আমাদের জন্মস্থানে। আবারও ভাঙ্গা মন নিয়ে ফিরে আসি। নিজেদের তখন বঞ্চিত মনে হয়।
No comments:
Post a Comment