Saturday, October 3, 2015

জাকিয়া আপা


আজ সকালে ফেসবুকে Riman Babu ভাইয়ের মেয়ের ছবিটা দেখে বহুদিন আগে দেখা একজন মানুষের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।ছোট্ট ওই মুখখানির সাথে মানুষটির চেহারার আশ্চর্য মিল।তিনি হলেন রিমন ভাইয়ের মা জাকিয়া আপা,শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা।

তখন ক্লাস ওয়ানে উঠেছি।আজিজ স্যারের কাছে তিনদিন পড়ে নিজের পড়া নিজে শিখব এই প্রতিজ্ঞা করে স্যারের কাছে আর যাইনি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় মোটামুটি নাম্বার পেয়ে পাশ করে গেলেও শুরু হল নতুন ঝামেলা ( ওই বয়সে ত অবশ্য ঝামেলা)। জাকিয়া আপা আমার ভাইকে দিয়ে খবর পাঠালেন ওনার বাসায় যাবার জন্য।আমি ত যাব না।কি দরকার আমার ওনার বাসায়। 


তারপর একদিন প্রচন্ড ঝড়ের দিনে বজ্রপাতের মধ্যে আমাকে এই শর্তে আপার বাসায় পড়তে পাঠানো হল শুধু একদিনের জন্য যাব আর না।

কিন্তু আপার বাসায় গিয়ে আমার ধারনা পাল্টে গেল।স্কুলের স্যার আপাদের আমি সবসময় ভয় পেতাম।আপা কে দেখলাম সম্পূর্ণ বিপরীত। অত্যন্ত আন্তরিক, স্নেহময়ী একজন মানুষ।পরেরদিন না যাওয়ার কথা থাকলেও গেলাম নিজের ইচ্ছেতে।আপার পড়ার ধরন এতই মুগ্ধকর ছিল যে আমি যেন রীতিমত আপার ভক্ত হয়ে গেলাম।

আপার বাসায় যাবার সময় ছিল আড়াইটা।কিন্তু আমি ২ টা থেকে যাবার জন্য অস্থির হয়ে যেতাম।আম্মা মানা করতেন কারন উনারা তখন দুপুরের খাবার খেতেন।তবুএ যেতাম। সম্মানী কত পাচ্ছেন তা নিয়ে আপার মাথা ব্যথা নেই।আমার পড়ালেখার উন্নতি যেন আপার একমাত্র ধ্যান।একসময় তার ফল পেলেন।

আপাদের বাসায় যে পড়তে যেতাম, কখনো মনে হয়নি টিচারের বাসা।কারন আপার ছেলেরা হিমান ও রিমন ভাই, উনাদের আব্বাও খুব আদর করতেন।

আপার কাছে টানা দুই বছর পড়েছি।ততদিনে আপা আমাকে মোটামুটি ভাল ছাত্রদের কাতারে সামিল করে ফেলেছেন। বাচ্চাদের কোথাও পড়তে যেতে বললে হয়ত নানা অজুহাত দেয়।কিন্তু জাকিয়া আপার কাছে পড়তে গিয়ে আমার কাছে কখনোই মনে হয়নি যে পড়তে যাচ্ছি কারন উনি সেটা কে আনন্দদায়ক করে ফেলেছিলেন আমার জন্য।

মানুষ যে স্বার্থহীন ভাবে কারো ভাল চাইতে পারে জাকিয়া আপাকে দেখেই বুঝেছি।কি ক্ষতি হত আমাকে যদি উনি ডেকে নিয়ে গিয়ে না পড়াতেন।আজ ও আপাকে মনে পড়ে।কখনো কখনো মানুষকে কাছে থেকে শ্রদ্ধা জানানো যায়না, দূরে থেকে জানাতেন।আপা, আপনি আমার আজীবন শ্রদ্ধার পাত্র।দূর থেকেই না হয় আমায় আশীর্বাদ করবেন।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss