Thursday, November 26, 2015

লেখাপড়াটাকে কোনদিন সিরিয়াসলি নেইনি


লেখাপড়াটাকে কোনদিন সিরিয়াসলি নেইনি, পড়াশোনা করা দরকার তাই করেছি। কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কোন দিন পড়াশোনা করিনি। যা থাকে কপালে এটাই ছিলো ভিশন।তবে যতটুকুই পড়ালেখা করেছি তা আনন্দ নিয়ে করেছি। লেখাপড়ার ও যে আনন্দ নিয়ে করা যায় এটা এই জেনারেশনের পোলাপান কোন দিন কল্পনাও করতে পারবেনা।

পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়ে এসেছি, এটা নিয়ে বাড়তি কোন টেনশন ছিলোনা। এমন কি আমি কখনও এটার জন্য বাড়তি প্রস্ততিও নেইনি ওই একই চিন্তা “যা থাকে কপালে”। এ জন্যই বোধ হয় ক্লাস এইটে একবার ইংরেজীতে ১১ আর ক্লাস নাইনে অংকে ডাবল জিরো পাইছিলাম। তবে এগুলা নিয়া আমার কোনদিন আফসোস ছিলোনা। কিন্তু এখন বলতে গিয়া পেটটা গ্যাসে মনে হয় দু ইঞ্চি বড় হয়ে গেছে যে ক্লাস টেনে নির্বাচনী পরীক্ষায় ছেলে মেয়েদের মধ্যে আমি ১৬ তম হইছিলাম (আমার ধারনা স্যাররা কোথাও কোন ঝামেলা করছিলো, নাহলে আমার মত ডাবল জিরো পাওয়া ষ্টুডেন্ট ১৬ তম হওয়ার কথা না, সবার শেষের দিকে থাকার কথা)। মেট্রিক পরীক্ষাও দিয়েছি সেরকম বিনোদনের মধ্যে, প্রথম বার ৯১ এর ঘূর্নিঝড়ের কারনে পরীক্ষা বাতিল, দু মাস পরে পরীক্ষা শুরূ হলো, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আবারও পরীক্ষা বাতিল, ১ মাস পর পরীক্ষা হলো। তখন বাংলা আর ইংরেজী ১ম ও ২য় পত্র একইদিনে সকাল বিকাল দু বেলা হতো। 


মাঝখানে বিরতির সময় গার্জিয়ান রা কত রকম খাবার নিয়ে আসতো , আহ ! এই আনন্দ এখনকার পোলাপান কোথায় পাবে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আনন্দও ছিলো অন্যরকম। ষ্টীলমিলের দুটো ষ্টাফ বাস আমাদের কে ট্যাংকীর নীচ থেকে নেভী স্কুলের পরীক্ষা সেন্টারে নিয়ে যেতো। বদরুল প্রতিদিন এসে বাস ধরতো একেবারে শেষ মূহূর্তে। গুটি কয়েক ভালো ষ্টুডেন্ট ছাড়া আমাদের কাছে এ পরীক্ষার বাস কে মনে হতো পিকনিকের বাস। সারা রাস্তা গান েগাইতে গাইতে যেতাম ,এজন্য একবার হেড স্যারের (মরহুম আহমদ কবীর স্যার) কড়া ধমক খেয়েছিলাম। েতারপর রেজাল্ট এলো, আমি সহ আমার সমমনা পোলাপান ২য় বিভাগে পাশ। আমরা এতই খুশী। আমাদের মটো ছিলো “ যারা অল্পতে খুশী হয়, তারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সুখী”। আসলেই আমরা ছিলাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সুখী। তারপর এইচএসসি ২য় বিভাগে পাশ করে, এর পর কমার্স কলেজ থেকে বি,কম পরীক্ষা, পরীক্ষা চলার সময়েও যে কত রোমান্টিক কাজ কর্ম করে ফেলেছি তার কোন হিসাব নাই, সেই পরীক্ষা কেন্দ্র পয্্যন্ত চলে গিয়েছিলো রোমান্স, সে এক বিরাট ইতিহাসরে ভাইয়েরা। এই পরীক্ষাতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার মত লাড্ডু মার্কা ও অতি রোমান্টিক পোলাও ২য় বিভাগে পাশ। 

এরপর কত ঘটনা কত কিছু, আমার চাকুরী হওয়া, ষ্টীল মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া, চাকুরীরত অবস্থায় এম.কম পরীক্ষা দেওয়া। তাতে করে কোন মতে ২য় শ্রেণীর একটি মাষ্টার্স সার্টিফিকেট যোগাড় করা, এই আরকি।

আমার এতা কথা লিখার কারন হচ্ছে,দুদিন পর আমার কেজি ক্লাসে পড়ুয়া ছেলের স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে, তার মা তাকে যেভাবে পড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে জীবনের লেখাপড়ার যত পরীক্ষা আছে সব এক সাথে দিয়ে দিবে। নিজের ওজনের চেয়ে ভারী এক স্কুল ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন সাত সকালে স্কুলে যায়।িআর স্কুলের গার্জিয়ানদের মধ্যে তো নিজেদের বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আছেই। জাষ্ট লেখাপড়া, কোথাও কোন আনন্দ নেই। সপ্তাহে একদিন যা আনন্দ পায় তা হচ্ছে ফাস্টফুড বা টাকার বিনিময়ে কৃত্তিম আনন্দ,যেখানে কোন প্রাণ নেই। আফসোসই লাগে এ প্রজন্মের পোলাপান গুলোর জন্য
আমি বা আমার মত অনেকেই লেখাপড়ায় তেমন ভালো ছিলাম না, তবে প্রানের উচ্ছাস টা ছিলো ঠিকই আর নিজেদের উপর এতটুকু আস্থা বা বিশ্বাষ ছিলো যে আমরা নৈতিক শিক্ষাটা পেয়েছি ঠিকমতো।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss