তখন ক্লাস টেন পড়তাম। ক্লাস টেন আমাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে পরার টেবিলে । টেবিল
থেকে উঠে গেলেই ধমক শুনতে হয়। বিনোদনের এক মাত্র মাধ্যম বিটিভি ও আমার জন্য বন্ধ
হয়ে যায়। আমার বিনোদন বলতে বিকাল বেলা জাহাঙ্গির এর কাছে কোন নাটকে কে কি করলো তাই
হজম করা। জাহাঙ্গির নাটকের গল্প বলতে মজা পেতো , জাহাঙ্গির এর মজা দেখতে ভালো লাগতো বলেই উৎসাহের পরিমান টা
একটু ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখাতাম । প্রতি মাসে মান্থলি টেষ্ট ছিল আমার জন্য চরম
বিরক্তকর সময়।
সারাক্ষন চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে কার ভালো লাগে ? আমার ভালো না লাগলেও টেষ্টের আগে তিন তলায় বেঞ্চ নিয়ে
যাওয়ার সময় টা ফ্রেন্ডদের অনেক পছন্দের সময় ছিল। তিন তলায় নাকি পরীমনি আছে ?এদের দেখার জন্য রবিন মুসলিম থেকে শুরু করে হেভিওয়েট সবাই
মিলে মিশে একাকার হয়ে যেতো আমি অবশ্য এখনো জানি না মেয়েরাও কি এই রকম ভাবে আমাদের
দেখতে চাইতো ? আমি মেয়েদের সাইকোলজি
বুঝি না তাই জানি না মেয়েদের কি মনে হতো? যাই হোক বেঞ্চ তিন তলায় উঠানোর জন্য হেংলা পাতলা রাসেল রেও দেখলাম বিপুল উৎসাহ
নিয়ে দৌড় ঝাপ শুরু করেছে । এক একটা বেঞ্চের যেই ওজন আমি একটা তিন তলায় নিয়ে গেলে
তিন তলা থেকে নির্ঘাত আমারে হসপিটালে নিতে হতো ।
ক্লাস টেন বলেই হয়তো অনেকের দাড়ি গোফের বাম্পার ফলন দেখা যাচ্ছিল । এই অনেকের
মধ্যে একজন হচ্ছে রঞ্জু। এক বিকালে বেচারা নরসুন্দরের কাছে নিজেরে আরো একটু সুন্দর
করে ফুটিয়ে তোলার জন্য গেলো ।রঞ্জু সেলুনে ঘুমিয়ে না পরলেও ভয়ে অস্থির ছিল বলে চোখ
বন্ধ করে রেখেছিল । নরসুন্দরের হাতের যাদুতে অর্ধেক্টা সুন্দর হবার পর রঞ্জুর ভয়
একটু কেটে গিয়েছে, চোখ খুলেই দেখে মোস্তফা
কামাল স্যার পাশের সিটে বসে আছে। হয়তো একটু মুচকি হাসিও দিয়েছেন স্যার।রঞ্জুর
ভাষায় মনে হইলো আমার উপর ঠাডা পরছে আমার হাত পা যেনো চলছেই না তার পরেও সেই
অবস্থাতেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দিলাম দৌড়।
এই রকম ঘটনা আরো আছে আমাদের। আমি
সৌরভ আর জাহাঙ্গির মিলে ইউনুস স্যার এর কাছে পড়তাম। স্যার কে আল্লাহ বেহেস্তে নসিব
করুক ।স্যার এর সুরে সুরে বকুনি ছিল সেই রকম মজার। ট্রান্সলেসন ভুল করলেই চলতো
সমানে গালি । আবার আদর করতেও ভুল করতো না। স্যার এর বকা খেয়ে ফেরার পথে সৌরভ
আমাদের কে সেলুনে নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলে। ওনার ও একটু সুন্দর হতে হবে ?
সৌরভ এর মুখে ফোম লাগানোর একটু পরেই জাহাঙ্গির
বলে উঠলো সৌরভ বাদল বাবু স্যার আসছেন কি করবি ?
সিট ছেড়ে উঠে সত্যি কি আসছে স্যার ?আমার বুক কাপছে। চল ভাগি এইখান থেকে grin emoticon
এইভাবে দিন চলে যায় , এক সময় এক একজন
একেক দিকে হারিয়ে যায়, জাহাঙ্গির মেরিনে
চলে যায়, সৌরভ ফিনল্যান্ডে আমি
ঢাকাতে চলে আসি। কারো সাথেই কারো যোগাযোগ থাকে না। তখনো মোবাইলের যুগ শুরু হয়নি
ফেসবুক তো এসেছে কয়দিন আগে, মাঝে মাঝে মনে
হতো হয়তো আর কোন দিন কারো সাথে দেখা হবে না । এই রকম ভাবতে ভাবতে এক দিন টঙ্গিতে
বাস থেকে নামার পরেই একটা ছেলে হঠাত করে ঝাপটে ধরে । শালা কই ছিলি এত দিন ?রঞ্জুর কাছেই জাহাঙ্গির এর খবর পাই তারপর রিপকের দেখা হয়।
রিপকের কাছেই সৌরভ এর এড্রেস পাই । এক জন রে পেলেই ৯৭ ব্যাচের সবার খবর পাওয়া যায়
। এখন অবশ্য পরিধি বেড়েছে। একজন ষ্টিলার সহস্র ষ্টিলার দের খবর দেয়ার জন্য
প্রস্তুত হয়ে আছে। মাঝে আবার সৌরভ হারিয়েও গিয়েছিল।কাল হঠাত করে জাহাঙ্গির ফোন করে
কথা বল তোর ফ্রেন্ডের সাথে চিনতে পারিস কিনা দেখ ?
কি নমি চেনা যায় ?
কন্ঠ শুনেই সৌরভ বলে চিৎকার ? বালি ঘড়ির জন্য
কান ধরে ঊঠ বস করাইছস তোরে কেমনে ভুলবো grin emoticon আমাদের আড্ডা আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে। সেদিন ১৫ বছরের বেশি
সময় পর টিপু ভাইয়ার সাথে কথা হলো। একটুও বদলান নি টিপু ভাই, উনি তো শুধু বড় ভাই ছিলেন না,আমার স্কাউটের লিডার ছিলেন, স্কুল লাইফে আইডল ও ছিলেন । টিপু ভাইয়ার স্ট্যাইল ফলো
করতাম। সব কিছুই যেন ফিরে আসছে ? এত দিনের কষ্ট
যন্ত্রনা সব শেষ করে হয়তো আনন্দের দিন গুলো আমাদের হাতছানি দিচ্ছে ?
No comments:
Post a Comment