Sunday, December 13, 2015

" খানা বাতিক "


আমাদের "এমদাদ-৯৭" ( ভাই ভাই ষ্টোর ), কলোনীর কয়েকজন বুদ্ধিজীবী মার্কা বান্দরের মধ্যে একজন ছিলো। মাঝে মধ্যে ভাই ভাই ষ্টোরে বসার কারনে কলোনীর ছোট বড় সবাই তাকে চিনতো। তবে তার অনেকগুলো বদভ্যাসের মধ্যে একটি অন্যতম বদঅভ্যাসের নাম ছিলো "বিবাহের খানা বাতিক"। অফিসার্স ক্লাবের এমন কোন বিয়ে নাই এমদাদ খায় নাই। সুন্দর মত শার্ট-প্যান্ট, জুতা পরে ঢুকে যেত বিয়ের অনুষ্ঠানে, এর পর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমাদের সাথে এসে আড্ডা দিত।

আমরা যদি বলতাম, " কিরে কেউ তোকে সন্দেহ করে না ?"
এমদাদের উত্তরঃ "আরে শুধু খেতে বসে গেলে সন্দেহ করতে পারে, তাই আগে কিছুক্ষন এদিক সেদিক ঘুরি, খাবার পর বোউ-জামাই দেখে দাত খিলাল করতে করতে বের হয়ে আসি, ন্যাচারাল থাকলে কেউ সন্দেহ করে না।"


যাই হোক আমাদের সাহসে কুলায় না, এভাবে ক্লাবের ভিতরে গিয়ে খেয়ে আসতে।

একদিন আমি, আমদাদ, আর মাসুদ আড্ডা দিচ্ছিলাম ইউনুস ভাইয়ের দোকানের সামনে, আর কেউ নেই, মাত্র তিনজনের আড্ডা তেমন কমছে না, কিছু একটাতো করা দরকার। এমনি এমনি কি আর ভালো লাগে !!!!!

এমন সময় এমদাদ বলে উঠলো, চল কিছুই যখন করার নাই, অফিসার্স ক্লাবে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে, খেয়ে আসি। এই বিয়েতে তেমন বেশী সাজায় নাই, মনে হয় খানা সুবিধা হবে না, তবুও চল মেরে আসি !!

আমরাতো কোন ভাবেই যাবো না, কারন ধরা খেলে মান সন্মানের ব্যাপার, তার উপর ক্লাবের সাজ-সজ্জা, আয়োজনও তেমন সুবিধা জনেক মনে হচ্ছে না। কিন্তু এমদাদ আজ নাছোড় বান্দা, আমাদের সাহস দিতে লাগলো, বিভিন্ন ট্রিকস বুঝিয়ে দিতে লাগলো, কিভাবে কি করতে হবে, কিভাবে ন্যাচারাল থাকতে হবে !!!!

এমনিতেই আমরা নাচুনী বুড়ী, তার উপরে এত জোরে ঢোলের বাড়ী পড়লে, না গিয়ে কি আর উপায় আছে !!! তিনজন মিলে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম, " আল্লাহ ভরসা"
অফিসার্স ক্লাবের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই, কেমন যেন লাগলো, " লাইটিং এতো কম কেন?" আর মানুষজনও তেমন আনন্দ উল্লাস করছে না বিয়ের অনুষ্ঠানের মত। আমাদের অবস্থা দেখে এমদাদের ডায়ালগ " তোদের লাইটিং আর মানুষজন দেখার দরকার আছে? খাইতে আসছি, খেয়ে চলে যাব"
বদমাইশের পাল্লায় পড়ে বেছে বেছে তিনজন মিলে একটা টেবিলে বসলাম, টেবিলের সবাই গল্প গুজব করছে, আর আমরা একজন আরেকজনের চেহারা দেখছি।

এমন সময় মুরুব্বী করে একজন এমদাদের পিছনে এসে খুব সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলো, " ওয়া তোয়ারেতো চিনিত ন'ফারির, তুই কার ফোয়া? "
এমদাদঃ আঙ্কেল আমি ভাই ভাই ষ্টোরের ফজলু সাহেবের ছেলে, আব্বা অসুস্থ তাই বিয়েতে আসতে পারে নাই !! আমরা আসছি !!! এরপর মুরুব্বীকে অনেক চিনে এমন ভাব করে বললো, " আঙ্কেল অনে কেন আছন ?" ( আর কি মন মজানো হাসি !!! )

মুরুব্বী কি সব চিন্তা করতে লাগলেন আর এমদাদের দিকে বার বার দেখতে লাগলেন, এরপর বলে উঠলেন, " ওডা তুই কন কইলিযে, অডা ইয়ান কি বিয়ার অনুষ্টান নারে? ইয়ান আর ফোয়ার খৎনার অনুষ্টান !! জারগামির আর জাগা ন'ফাইলিযেনা!!!! খন্ডেত্তুন আইসসুস তুই ? "

আমি আর মাসুদ এই কথা শুনা মাত্র চেয়ার ছেড়ে আর এদিক সেদিক তাকাই নাই, সোজা গেটের বাহিরে। হা হা হা
এক মিনিটের মধ্যে দেখি এমদাদও প্যান্টের দুই পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে ভদ্রলোকের মত বের হয়ে আসছে, যেন কিছুই হয় নাই !!!!! আর বের হওয়ার পর আমরা কি করেছিলাম, তা নিশ্চই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
" শালা এতো দিন ধরে বিয়ের খানা খাস, কোনটা বিয়ের অনুষ্ঠান আর কোনটা খৎনার অনুষ্ঠান এইটাই বুঝতে পারলি না !!!!!"


No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss