আমি বড় হয়েছি চট্টগ্রামের স্টিল মিল কলোনিতে। বড় হয়েছি বললে অবশ্য সৌম্য (
আমার বোনের ছেলে) আপত্তি করে।সৌম্যর ধারনা আমার এখনো বড় হতে অনেক বাকি,বুদ্ধি সুদ্ধি ও তেমন একটা হয়ে উঠে নাই। আমাকে দেখলে এখনো
অনেকে স্কুলের স্টুডেন্ট ভাবে। এই জন্য অবশ্য অনেক সুবিধা পেয়ে আসছি। ছোট আর বোকা
বোকা চেহারার কারনে অনেক সময় অপরাধ করেও শাস্তি পেতে হয় নাই।আমি এই রকম থাকতেই
চাই। বড় হবো না বুড়ো ও হবো না। কিন্তু বুড়ো হতে না চাইলেও চুল গুলো যে স্টকে আর
থাকতে চাইছে না।
কে যেনো চুল গুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। টাক মাথা নিয়ে অনেক
চিন্তায় আছি, মনে হয় পাপের ফল ভোগ
করছি। সারা জীবন তো কম চুরি করলাম না এইবার আমার গচ্ছা দেবার সময় এসেছে ।আমি স্টিল
মিল কলোনিতে যেখানে থাকতাম সেখানে অনেক সুন্দর ২/৩ জন মেয়ে ছিল , আমি ভাবতাম এদের কারো সাথে হয়তো আমার বিয়ে হবে। বাংলা
ফিল্মের মতো আমার জন্য এরা ঝগড়া করবে একজন কষ্ট পেয়ে দূরে চলে যাবে আর অন্য জন কে
নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবো, কিন্তু হলো ঠিক
উল্টো এরা দুই জন দুই ছেলে কে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে আমি এদের
বাচ্চাদের মামা হয়েই চলেছি। আমি আমার হার্ট এর দরজা সব সময়ই খুলে রেখেছি কেউ আমার
মন চুরি করলো না frown emoticon .
তারপর একটু বড় হতে থাকলাম, আমাদের নিচতলায়
থাকতো তৌফিক,তৌফিক্কা বলে মাঝে মাঝে
ক্ষেপাতাম। এই ভদ্রলোক ছিল নির্ভেজাল চোর। বাপের পকেট থেকে প্রায় কিছু কড়কড়া নোট
ভ্যানিশ করে দিতো, এক দিন রোজার সময় আমাকে
ডেকে নিয়ে পেট ভরে খাওয়ালো । খাওয়ার সময় মাথায় ছিল না এত টাকা কই পাইলো,আমাদের হাতে আমাদের বাবা মা টাকা দিতো না। কিছু প্রয়োজন হলে
কিনে দিতো,আসলে আমাদের দরকার ও হতো
না, হাতের কাছে সব পেলে টাকা দিয়ে কি করবো ?
তৌফিক রে বললাম কিরে এত টাকা কই পাইছোস?
কে দিলো ?
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলে পকেট মারছি,
কার?
আব্বার
ইন্নালিল্লাহে ...রাজিউন। আমাকে খাওয়ালি কেন?
তুই খাইলি ক্যান ? তখন মনে ছিল না ?তুই খাইছোস এখন ধরা খাইলে বলবো দুই জন প্ল্যান করে এই কাজ
করছি ।চুরি না করেও চোর হলাম, সেই থেকে আমার
চুরি বিদ্যা শুরু,
ভার্সিটি লাইফে সমানে চালিয়েছি আমার চুরি বিদ্যা। বোকা বোকা চেহারার কারনে কেউ
ধরতে পারেনাই। ভার্সিটি তে শামীম আমি আর কাইয়ুম বসে বসে ঠিক করতাম কিভাবে মোবাইলে
বিল যোগার করা যায় । প্ল্যান করার গুরু দায়িত্ব ছিল আমার। দুই দিনেই কৌশল ঠিক করে
ফেলি। বই কিনতে হবে/ফটোকপি করতে হবে বলে টাকা নিতাম বাসা থেকে, কিনতাম পুরাতন বই, নোট একবার কপি করে বারবার দেখাতাম।আমার মা আমাকে বলতো বাবা একটু রয়ে সয়ে বই
কিনিস,
আমি বলতাম কি করবো বই না কিনলে পড়বো কি?
আমার মিথ্যা কথা কখনোই ধরতে পারেনাই।আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড রাব্বির কথা না
বলে পারছিনা। চুরি নিয়ে কথা বলতে বলতে রাব্বির চুরির এক্সপেরিয়েন্স এর কথা শেয়ার
করলো। এক সময় খুব টাকার দরকার, কেউ দিচ্ছে না
কারো কাছে বললে হাজার কৈফিয়ত দিতে হবে তাও পাবো বলে মনে হয়না, কি যে করি ভেবে পাচ্ছিনা । বিকালে একা একা ভাবছি কোন কুল
কিনারা পাচ্ছিনা, হঠাত করে চোখ গেলো আমার
পঙ্খিরাজ( সাইকেল) টার দিকে, মায়া হলো সাইকেল
টার প্রতি, কত কষ্টে আনন্দে আমার
সাথে ছিল কিন্তু উপায় নেই , দায় মুক্তি
অধ্যাদেশ জারি করার জন্য একটু আলতো করে চুমো দিলাম তারপর দুই হাজার টাকা দিয়ে
বিক্রি করে দিলাম। বাসায় গিয়ে বললাম সাইকেল রেখে খেলতে গিয়েছি পরে দেখি চুরি হয়ে
গিয়েছে।
চুরি করে একটা তৃপ্তি পেতাম, রাতে শামিম আর
কাইয়ুম রে ফোনে বলতাম কিভাবে পার হলাম এইখানে যদি শেষ হতো চুরি বিদ্যা তাহলে তো
আমি ফেরেস্তা হয়ে যেতাম। ভার্সিটিতে পরীক্ষা আসলেই আমার পকেট ভারি হয়ে যেতো,
পিয়নের কাছ থেকে রিসিট বই নিয়ে নিতাম, তারপর নিজেরাই ফেক রিসিট বানাতাম, শামীম আর কাইয়ুম সিগনেচার করতো, আমি আর বিপ্লব জেতাম সিল মারার জন্য সেমিনারে, কথা বলতে বলতে সেমিনারের মামাদের অন্যমনষ্ক করে রাখতাম আর
বিপ্লব এই সুযোগে সিল মেরে পুন্যের কাজটা করে দিতো।চুরি করে ধরা না খেলেও চুরির
টাকা দিয়ে কেনা কিছু আমার সহ্য হতো না, হয়তো পেনড্রাইভ কিনলাম দুইদিনে হয় নষ্ট হয়ে যেতো না হয় হারিয়ে যেতো,
ভার্সিটিতে পড়ার সময় রাপা প্লাজ়া তে একটা ফতুয়া খুব পছন্দ হলো কিন্তু কেনার
টাকা নাই। কাইয়ুমের বাসায় গ্রুপ স্ট্যাডি করার সময় প্রায় যেতাম ফতুয়া টা দেখে
আসতাম, ফতুয়া কিনবো বললে টাকা তো
দিবে না তাই বললাম টিউটোরিয়াল আছে টাকা লাগবে, পড়ার কথা শুনলে আম্মা টাকা দিতে সময় নেয়না, টাকা পেয়ে গেলাম দ্রুত, তারপর ছূটলাম রাপাপ্লাজা। চেহারা বান্দরের মতো হলেও সুন্দর
ড্রেস পরলে বানর কেও সুন্দর দেখাতে পারে। আমিও একটু ভদ্রলোকের মতো হতে ছূটলাম।
তারপর গিয়ে দেখি ফতুয়াটা সেখানে নেই, নেই তো নেই পুরো দোকানেই নেই, আমি জিজ্ঞাসা
করলাম সেলস ম্যানকে ফতুয়া টা কই। বল্লো এক ভদ্রলোক এসে নিয়ে গেছে।আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে
থাকলাম, সেলস ম্যান আমাকে
জিজ্ঞ্যাসা করলো স্যার আমাকে একবার বললেই তো আমি প্যাকেট করে রাখতাম।আমি একটু
হাসলাম। ধানমন্ডির লেকের ধারে কিছুক্ষন বসে থাকলাম, হাল্কা বাতাস বইছে লেকের পানি গুলো টলমল করছে, বৃষ্টির পানিও দুই এক ফোটা পরছে আমার শরীরে,কাইয়ুম লেকের কাছে আসলো, সব শুনে আমার বোকামির কথা শুনে হাসলো, আমরা এই কাজটা খুব ভালো পারি, কারনেও হাসি বিনা কারনে আরো বেশি হাসি, আমাদের হাসি দেখে কেউ হাসলে একটু থেমে চিৎকার করে হাসি।
কাইয়ুম গান ধরলো
হাসতে দেখো গাইতে দেখো
দেখো না তো হাসির শেষে নিরবতা
কাইয়ুম গান গাইলে অসহ্য লাগে, যে গান এর সুর
দিয়ে শুরু করে তারপর আর সেই সুরে / লিরিকে থাকতে পারেনা। সেদিন একটুও ভুল হলো না,
গ্রুপ স্ট্যাডি করতে কেউ আসলো না, আমরা দুই জন আড্ডা মারলাম।রাত হয়ে আসলো বৃষ্টি শুরু হলো,আমি তারপরো বেড় হয়ে গেলাম। কাইয়ুম ক্যাপিট্যাল বাজেটিং এর
কিছুই বুঝে না বাসায় গিয়ে ফোন করতে বললো ।বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে কাইয়ুম কে ফোন
দিলাম। শুধু বললাম মামা আজ পড়াতে পারবো না, ভালো লাগছে না। কাইয়ুম আমাকে বলে তোর ব্যাগে একটা নোট
রাখছিলাম, বৃষ্টির শুরু হওয়াতে পরে
আর নিতে মনে ছিলনা, একটু দেখবি ঠিক আছে কিনা ?
আমি ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বেড় করলাম, প্যাকেটে লিখা
“ সব কিছু ফিরে আসে ”
আমার সব চেয়ে পছন্দের ডায়লগ। এই ডায়লগ টার কপিরাইট করিয়ে রাখতে হবে কখন আবার
কে চুরি করে নিয়ে যায় বলা তো যায় না ।
প্যাকেট খুলে দেখলাম
আমার পছন্দ করা ফতুয়া
কাইয়ুম ফোনে আমাকে বলছে তোকে চুরিতে মানায় নাআমি একটা শক্ত গালি দিবো ভাবছি
কিন্তু পারলাম না।ভাবছি জীবনে যত কিছু হারিয়েছি সব কিছুই ছিল আমার এই পাপের শাস্তি,
চুরি করতে গিয়ে আমি আরো বড় কিছু হারাতে চাই না,
চুরি আমার জন্য না, চুরি/অনিয়ম করলে আমি আমাকেই খুজে পাইনা। আমি আমাকে আমার
মাঝে ধরে রাখতে চাই। চুরিটা তাই ছেড়েই দিলাম।
No comments:
Post a Comment