(এটি লিখেছিলাম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। আজ একটি সংবাদ পড়ে মনে হল এই লেখার সময় উপযোগিতা একটুও কমেনি। লেখার সাথে আজকের সংবাদটিও সবার সাথে ভাগাভাগি করলাম।) grin emoticon
ছেলেবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়তাম বাংলাদেশে গ্যাস, চুনাপাথর এর খনি আছে। একটু বড় হয়ে জানলাম কক্সবাজার আর টেকনাফের সৈকতের বালুতে এমন উপাদান আছে যা দিয়ে নাকি হাজার হাজার অ্যাটম বোমা বানানো যাবে। এটা শুনে বেশ পুলকিত হয়েছিলাম, সাথে কিঞ্চিৎ আতঙ্কিতও। কক্সবাজার গিয়ে বালুতে সাবধানে পা ফেলতে হবে, কখন আবার হিরোশিমা বা নাগাসাকির মতো কিছু ঘটে যায় তার ঠিক আছে? একদিন দেখি বাপ চাচারা ব্যাপক আলোচনা করতেছে কি নিয়ে যেন। সবই আশাবাদী ধরনের কথাবার্তা। "বাংলাদেশ আরব হয়ে যাবে", "মাত্র তো শুরু", সৌদি ফেরত এক চাচা আরো বেশি আবেগপ্রবন "শালা অ্যারাবিয়ান, কামলা দিতে তো আমাদের দেশেই আসবি। জোব্বা উঠাইয়া জালি বেত দিয়া পাছার উপর যদি দুইটা না দিছি"।
পরে জানলাম সিলেটের হরিপুরে নাকি তেলের খনি পাওয়া গেছে। আরো বড় হয়ে জানলাম গ্যাসক্ষেত্রের সাথে অল্পস্বল্প তেলের পকেট খনি থাকতেই পারে। খুব বেশি তেল ওসব খনিতে থাকে না। হরিপুরের ক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশ দুই বছরে সামান্য কিছু তেলই পেয়েছে। আমাদের কলোনিতে এক লোক ছিলো নাম সোনা মিয়া। কলোনির মাটির নিচ দিয়ে যত পানির পাইপ গিয়েছে সব ওই লোকের নখদর্পণে ছিল। প্রতিদিন হুইল ঘুরিয়ে আমাদের সব বিল্ডিঙের পানির ট্যাঙ্ক ওই লোক ভরে দিত আবার সময় হলে বন্ধ করতো। কোথায় কোন জঙ্গলে কোন হুইলটা কোথায় পানি দিবে সব মুখস্ত ছিল তার। দুষ্টু ছেলেরা আড়াল থেকে তাকে গোল্ড মিয়া বলে চেঁচিয়ে ডাকতো। বেজায় ক্ষেপতো আমাদের সোনা মিয়া। পিতৃদত্ত নামের এমন ইংরেজি সংস্করণ কাহাতক আর সহ্য হয়।
এই সোনা মিয়ার সোনা নাম থেকেই সোনার খনি নিয়ে আমার আগ্রহ। দক্ষিন আফ্রিকা স্বর্ণ খনির জন্য বিখ্যাত। আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকতেও স্বর্ণ খনি আছে। হারানো সাম্রাজ্য আটলান্টিসের কথা পড়েছিলাম যেখানে সবই নাকি স্বর্ণের তৈরি। টয়লেটে যাবার যে বদনা সেটাও নাকি স্বর্ণের। পরশ পাথরের কথা শুনতাম। এই পাথর যেখানেই স্পর্শ করা হবে তাই নাকি স্বর্ণ হয়ে যায়। ছোটবেলায় এই পরশ পাথর কত যে খুঁজেছি। আমার চির অভাবী মায়ের একজোড়া স্বর্ণের বালার শখ। পরশ পাথর পেলে একজোড়া বালা নিশ্চয় গড়ে দেয়া যেত।
বড় আফসোস ছিল বাংলাদেশে কোন সোনার খনি নেই বলে। কত স্বপ্ন দেখেছি কোদালের প্রতিটা কোপে তাল তাল স্বর্ণ উঠে আসছে। এতদিনে আমার সেই আফসোস দূর হয়েছে। বাংলাদেশে সত্যিই একটা স্বর্ণ খনি আছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে ৬০ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/banglanews24.com)
শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার (২৯ জানুয়ারি ২০১৫/banglanews24.com)
শাহজালাল বিমানবন্দরে ৪৩ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার ( ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪/দৈনিক যুগান্তর)
বিমানবন্দরের টয়লেটে ১৫ কেজি স্বর্ণ (Nov 8, 2014/bdnews24.com)
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- এ যেন সেই হারানো আটলান্টিস, যেন এক পরশ পাথর। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সোনার খনি।
No comments:
Post a Comment