Friday, January 22, 2016

হক স্যারের ধোলাই



শাহীন স্কুলে পড়ার সময় ক্লাসে টিচার আসলে আমরা বলতাম "গুড মর্নিং স্যার/ ম্যাডাম"। স্টিল মিলস স্কুলে আসার পর দেখলাম নিয়ম ভিন্ন। এখানে স্যার/আপা ক্লাসে আসলে দেখি সবাই সালাম দেয়। একদিন হক স্যার ক্লাসের আসলেন। সবার মত আমিও সালাম দিলাম কিন্তু অনভ্যস্ত মুখে সালামটা মনে হয় অন্য রকম ছিল। স্যার ক্ষেপে গেলেন। " এরে তুই এরুম করি সালাম দিলি কিল্লাই ?" । বেকায়দা অবস্থা, আমার ব্যাখ্যা করার কিছু ছিলনা, ব্যাখ্যা দেবার উপায়ও ছিল না। তার আগেই স্যার অপারেশন চালিয়ে ফেলেছেন। ব্যথা পাবার চেয়ে অবাক বেশি হয়েছিলাম।

যাক পরে স্যারের সাথে ভাল মতই মানিয়ে নিয়ে ছিলাম । কারণ স্যার পড়া নেবার সময় যদি কেউ গরগর করে শুরু করতো তাহলে স্যার আর বাকিটা শুনতেন না, পরের জনকে পড়া ধরতেন। তাই আমি ( আতিক ভাইয়ের মতে ৩য় বেঞ্চের ছাত্ররা ) সবসময় প্রথম প্যারা ভালো মত শিখতাম, আর ২য় প্যারা মোটা মুটি ভাবে শিখে রাখতাম (প্রথম প্যারা বেশি দ্রুত বলে ফেললে ব্যাক আপ হিসাবে) ফাঁকির টেকনিকটা ভালই ছিল, কোনদিন ধরা খাই নাই smile emoticon ।


কিন্তু এমন দিনওতো ছিল যেদিন পড়া একে বারেই শিখি নাই, সেদিন যথারীতি আমরা ৩য় বেঞ্চের ছাত্ররা রাজনৈতিক বিষয় তুলে ধরতাম। স্যার ব্যাপাটা বুঝতেন, তাই এখানে একটা ঝুঁকি ছিল। যে বিষয়টা তুলত তার মার খাবার সম্ভাবনা থাকতো। এই কাজে স্বেচ্ছা সেবক ছিল হিরণ। সে অবলীলায় দিনের পর দিন আমাদের মত ৩য় বেঞ্চের ছাত্রদের এই সেবা দিয়ে গেছে। পরের দিকে হিরণ শুধু প্রসঙ্গ তুললেই হতো না, তার সাথে একটু বাতাস দেবার প্রয়োজন পড়তো। একদিন আমি বাতাস দেবার চেষ্টা করলাম, দেখি স্যার আমার উপর ক্ষেপে গেছেন, বেত নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসছেন। আমি বেঞ্চের নিচে ঢুকে যেতে চাইলাম, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না, স্যার বেত চালিয়ে দিলেন আর তা আমার পিঠে লেগে গেল বেশ জোরে। কোনদিন ক্লাসে বেত খেয়ে রা করি নি কিন্তু সেদিনের এক বেতই ভয়াবহ ছিল। বলে ফেললাম "স্যার, একটা মারসেন ব্যথা পাইসি, আর মাইরেন না" । স্যারের দয়া হল, ছেড়ে দিলেন। খোরশেদ জিজ্ঞাসা করলো "তুই স্যার কে এই কথা কেমনে বললি?" । আমি বললাম "এমনেই মুখ থেকে বাইর হই গ্যেসে।"

ক্লাস নাইন বা টেন। সিঁড়ির পাশে বড় রুমটায় আবার হক স্যারের কোন এক ক্লাস। আবার কোন কারণে স্যার আমার উপর ক্ষেপে তেড়ে আসতে লাগলেন। আগের বার বেঞ্চের তলায় গিয়ে লাভ হয়নি। কিন্তু তাই বলে দাঁড়িয়ে থেকে মার খাবার কোন করণ নেই। বেঞ্চ থেকে বের হয়ে সামনের দিকে দিলাম দৌড়। স্যার ও পিছন পিছন আসতে লাগলেন। কি আর করা, দিক পরিবর্তন করে প্রথম বেঞ্চের পাশে দিয়ে ঘুরে পেছন দিকে চলে আসতে লাগলাম। স্যার দেখলেন পিছু নিয়ে আর লাভ নাই। হাল ছেড়ে দিলেন। কিন্তু এমন সময় এক ঘটনা ঘটলো। সবাই নিশ্চয় জানেন, স্কুলের ক্লাসের জানালা গুলোর গ্রিল বাহিরের দিকে আর জানালার কপাট গুলো সব ভেতরের দিকে খুলে। কোন এক কারণে, তখন একটা জানালার কপাট খুলে ক্লাসের মাঝামাঝি এক বেঞ্চের সাথে আটকে ছিল। এমন সময় কোন এক বান্দা (নাকি বান্দর) বাহির থেকে এসে ওই ফাঁকে আটকা পড়েছে, তার সাথে আমিও গিয়ে আটকা পড়লাম। এটা দেখে স্যার ও আবার তেড়ে আসতে লাগলেন। আমারতো এবার "ফান্দে পড়ি কান্দে বগা" অবস্থা। স্যার কাছাকাছি এসে পড়েলেন এবং বেত চালিয়ে দিলেন। কিন্তু এবার কোন এক দৈব কারণে ওই আটকানো জানালার কপাট, বেঞ্চের কোনা থেকে ছুটে গেল, এবং স্যার মিস করলেন। আমি আবার দৌড় দিয়ে বেঞ্চের চারিদিকে ঘুরতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত "বেঞ্চে বসলে ধোলাই হবে না" এই চুক্তিতে বেঞ্চে ফিরে আসলাম।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss