Monday, January 4, 2016

জাফর স্যার, আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন


জাফর স্যার, আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন অসম্ভব কড়া মেজাজের আর প্রচুর ধূমপান করতেন অথচ তাঁর ক্লাসে কেউ কাশি দিলে বলতেন “কিরে ব্যাটা গাঁজা খেয়েছিস নাকি, এগুলো খাসনে, দেখছিস না আমি ধূমপান করে শেষ” স্যারের ক্লাস খাকতো পিনপতন নিরবতা, কেউ কথা বললেই তার উপর চলত “ধামাধাম মাসকালান্দার” এবংপ্রায়ই দিনই এ জিনিস টা আমার উপর প্রযোগ করা হতো। স্যারের ক্লাসে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। যেহেতু Mahabub Rashel আজ স্যারকে নিয়ে লেখা শুরু করেছে তাই রাসেলকে জানিয়েই আমরা কাহিনী গুলোর ছোট্ট কিছু অংশ লিখছি।


ক্লাম এইটে পড়ি তখন, জাফর স্যার অন্য এক স্যারের প্রক্সি ক্লাস নিতে আসলেন, এবং তার ক্লাসে কথা বলার অপরাধে এক দফা লাঠিচার্জ হয়ে গেছে আমার উপর। এরপর শুরু করলেন বাংলা টু ইংরেজী ট্রান্শলেশন ধরা্ , ফট করে আমাকে একটু কঠিন টাইপের ট্রান্সলেশন ধরে বসলেন , আমিও ফটাফট উত্তর দিয়ে দিলাম, স্যার প্রায় মিনিট খানেক আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন ,গুড,ভেরীগুড। আসলে আমার মত গাধা মার্কা ছাত্রের কাছ থেকে এত কঠিন ট্রান্সলেশনের সঠিক উত্তর পেয়েই বোধ হয় উনি এমন অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

ক্লাস নাইনে এবার,সেই ঐতিহাসিক থার্ড বেন্চে আমি, বুড়ামিয়া,রিমান আর জুয়েল বসে আছি। স্যার ক্লাস নিচ্ছেন, বুড়ামিয়া খুব গভীর মনোযোগে স্যারের লেকচার শুনছে, জুয়েল তার অভ্যাসমত বইয়ের নীচে মাসুদ রানা সিরিজের বই রেখে গল্প পড়ছে, আর আমি ও রিমান আমাদের স্কুলের জনৈকা বালিকা কে নিয়ে আলাপে মশগুল, তখন বুড়া আর জুয়েল আমাদের বলছে তোরা কথা বলিস না,স্যার দেখে ফেলবে, ঠিক অই মুহুর্তে স্যার জুয়েল আর বুড়া মিয়াকে দেখে ফেললেন। স্যার ভাবলেন ওরা বোধ হয় কথা বলছে , সেদিন স্যার বেতও আনেন নি হাত আর কনুই দিয়ে অই দুজনকে সমানে পিটালে ন আর সমানে বলে যাচ্ছেন এই লম্বা পান্ডা (বুড়া মিয়া) আর এই মোটা পান্ডা (জুয়েল) তো রা আর কখনও আমার ক্লাসে কথা বলবি , এভাবে মারতে মারতে স্যার হঁপিয়ে যান, আর আমি ভাবছি কথা বলল কে আর মার খাচ্ছে কে, এ খুশীতে ফিক করে হেসে দিলাম, কপালে সুখ সইলোনা, স্যার আমাকে পেলেন এবার, বললেন ওরা মার খাচ্ছে তুই হাসছিস কেনো এটাা বলেই আমার উপর শুরু করলেন দামাদাম।

স্যার জিন্স প্যান্ট পড়া মোটেই পছন্দ করতেন না, কেউ জিন্স পড়ে স্কুলে আসলেই বলতেন “ওরে বাবা জ্বিন পড়ে এসেছে”
স্যারের সাথে শেষ দেখা হয়েছিলো ১৯৯৩ সালে গনি বেকারীর মোড়েে,আমি আর বদরুল ছিলাম, দুজনের হাতেই ছিলো সিগারেট , স্যারকে দেখা মাত্রই সব ফেলে দিয়ে পা ছুয়ে সালাম করতেই , স্যার আমাদের মাথায় স্নেহ ও আশীর্বাদের পরশ বুলিয়ে দিয়েছিলেন। যা এখনো আছে।

স্যারের প্রতিটি ক্লাসেই আমি মার খেতাম। আর স্যারেরও মনে হয় আমাকে না পিটালে ভালো লাগতোনা, তাইতে যেদিন এসএসসির আগে বিদায়ের আগে স্যারকে সালাম করতে গেলাম, স্যার তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন” বাবারে তুই আমার প্রতিটা ক্লাসে মার খেয়েছিস, মনে কোন কষ্ট রাখিস না”। আসলে এগুলো ছিলো স্যারের আমার প্রতি আশীর্বাদ। আমার মত মানুষ জীবনে যতটুকু উন্নতি করেছি, সেটা উনাদের এতটুকু আশীর্বাদ ছিলো বলেই। না হলে বোধকরি জীবনে এটুকু আসতে পারতাম না।

আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
(Sorry Mahabub Rashel তোর মত ভালো লিখতে পারলাম না)

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss