Sunday, February 28, 2016

ফেবুতে নিজের প্রোফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে লিখাটা খুঁজে পেলাম


ফেবুতে নিজের প্রোফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে লিখাটা খুঁজে পেলাম । লিখাটা ২০১১সালের শেষে/২০১২ সালের শুরুতে লিখা,তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম । ভাবলাম সবার সাথে শেয়ার করি লিখাটা ।
অনেক বড়,বিরক্ত হলে আমার দোষ নেই tongue emoticon
পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হলো বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক।

আমার বাবা হলেন আমার সবচাইতে প্রিয় কথাসংগী।ছোটবেলা থেকেই বাবা আমাকে এবং আমার ভাইয়াকে অনেক আদর দিয়ে বড় করেছেন।ছোটবেলায় বাবার কাঁধে চড়তাম সবসময়।বাবা বিছানায় বসে থাকলেই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় উঠে বাবার গলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতাম।বাবা বুঝে যেতেন আমি কি চাইছি।বাবা তখন আমাকে কাঁধে উঠিয়ে নিতেন আর আমি খুশিতে হাততালি দিতাম।
.
আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক।বাবার স্কুলেই শিশুশ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি।আমার সহপাঠীরা সবাই একলাই স্কুলে যেতো।কখনো কারো অভিভাবক তাদেরকে আনা নেয়া করতে যেতোনা।কিন্তু আমি শিশু শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটা দিন আমার বাবার হাত ধরে স্কুলে গিয়েছি। আমার গায়ে রোদের আঁচ না লাগার জন্য বাবা এক হাতে আমার মাথার উপর ছাতা ধরে রাখতেন আর অন্য হাতে আমার একটি হাত ধরে রাখতেন।


এতো বড় হওয়া সত্ত্বেও বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতাম দেখে রাস্তার মানুষ অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতো নাহয় হাসাহাসি করতো।হাসলে হাসুক,তাতে আমার কি?
আমার মতে এটা আমার সৌভাগ্য।কয়জন পারে তার বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে?
ডালপুরি খেতে খুব বেশি পছন্দ করি আমি,তাই স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবা প্রতিদিন আমার জন্য ডালপুরি কিনে নিতো।

স্কুল থেকে ফেরার পথে পুরোটা রাস্তা স্কুলে সেদিন কি কি হয়েছে,কে কি করেছে তা বলতে বলতে আসতাম।বাসায় পৌছানর পর ও আমার গল্প শেষ হতোনা।বাবার অনেক ধৈর্য্য। তাইতো তিনি আমার অনর্থক বকবকানি গুলো অতি মনোযোগ সহকারে শুনতেন!
.
যখন একদম ছোট ছিলাম তখনকার ঈদের দিনগুলোতে পুরোটা দিন বাবার সাথে থাকতাম আমি।ঈদের দিন খুব ভোরে বাবা আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিতেন।বাবা ঈদের নামায পড়তে গেলে মা আমাকে গোসল করিয়ে রেডী করে দিতেন।নতুন জামা পরে বাবার জন্য অপেক্ষা করতাম। বাবা নামায পরে এসে দাদুর বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকলেই দৌড়ে গিয়ে বাবাকে সালাম করতাম।বাবা আমায় কোলে তুলে নিয়ে বলতো 'ঈদ মোবারক'।তারপর বাবা পকেট থেকে ৫টাকা,১০টাকা,২০টাকা,৫০টাকা,১০০টাকার ৫টি নোট বের করে আমার সামনে ধরে বলতেন আমার যেটি ইচ্ছা সেটি নিতে।৫টাকার নোটটা বেশি সুন্দর লাগতো বলে ওইটাই নিতাম।আমার কান্ড দেখে বাবা হাসতো।
.
তারপর বাবা একটা রিক্সা সারাদিনের জন্য ভাড়া করতেন,ওই রিক্সায় চড়ে পুরোটা দিন বেড়াতাম আমি আর বাবা।
.
ঘুম থেকে উঠতে বরাবরই আমি দেরী করি।বাবা প্রতিদিন সকাল ৬টায় আমাকে ডেকে দিয়ে আমার বিছানার মশারী খুলে দেয়্।তখন আমি আমার হাতদুটো বাবার দিকে বাড়িয়ে দেই,আর বাবা আমাকে টেনে তুলে।

আমার প্রতি জন্মদিনে একদম ভোরে উঠে বাবা আমাকে ডেকে দিয়ে আমার কানের পাশে 'শুভ জন্মদিন' বলে যায়।
.
কোথাও যাওয়ার জন্য বা কিছু করার জন্য অনুমতি নিতে হলে প্রথমে মাকে গিয়ে বলি।আমি ফ্যামিলির সবচেয়ে ছোট সদস্য বলে আমার প্রতি অতিরিক্ত খেয়াল রাখে সবাই।বেশির ভাগ সময়ই মায়ের কাছ থেকে অনুমতি পাইনা।মা অনুমতি না দিলে বাবার সামনে গিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় অনুমতি চাই।বাবা কখনোই মানা করেনা।বাবার অনুমতি পেয়ে গেলেই সবগুলো দাঁত বের হরে হিহি করে হেসে মাকে গিয়ে বলি বাবা অনুমতি দিয়েছে।মা তখন হতাশ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বলে 'বেশি দুষ্টো হয়ে গেছিস তুই'।মায়ের কথা শুনে আমার হাসি আরো প্রসারিতো হয়।
.
এখন আমি বেশ বড় হয়ে গেছি।কলেজে পড়ি।কলেজটা বাসা থেকে বেশ দূরে।বাসে করে আসা যাওয়া করতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগে।

সকালে কোচিংয়ে চলে যাই,ওখান থেকে কলেজে।কলেজে থেকে বাসায় আসি দুপুর ৩টা।তারপর ভাত খেয়েই দৌড় দেই কোচিংয়ে।বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।বাবা বিভিন্ন কাজ সেড়ে বাসায় আসে রাত ৯টায়।এখন আর আগের মতো গল্প করা হয়না বাবার সাথে।

তবুও সময় পেলেই বাবার সাথে গল্প করি,গল্পের চেয়ে বেশি ঝগড়া করি।কিন্তু আমরা কখনোই একে অন্যের সাথে রাগ করে থাকতে পারিনা।

বাবা এখন একলাই তার কর্মস্থানে(আমাদের স্কুল) যান।কলেজ থেকে ফেরার সময় যখন কড়া রোদে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যাই তখনি মনে পড়ে বাবার সাথে যখন স্কুলে যেতাম বাবা আমার মাথার উপর ছাতা ধরে রেখে আমাকে ছায়া দিতেন ।

খুব খারাপ লাগে তখন।ইচ্ছে হয় আবার স্কুলে ভর্তি হয়ে যেতে।
এখন আর বাবার কোলে চড়া হয়না।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলি,
'বাবা,তোমায় অনেক ভালোবাসি',
কিন্তু বড়ো হয়ে গেছি তো! তাই বলা হয় না কথাটা। আমি অপেক্ষায় আছি । সুযোগ পেলেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে দেবো কথাটা smile emoticon
.
.
উৎসর্গঃ আমার বাবা স,ই,ম, মাহফুজ চৌধুরীকে।
সবাই বলে আমার চেহারা নাকি একদম আমার বাবার মতো।যে মেয়েদের চেহারা বাবার মতো হয়,তারা নাকি সৌভাগ্যবতী হয়।
আমি যে আমার বাবার মতো একজন মানুষকে বাবা হিসেবে পেয়েছি এটাই আমার সবচেয়ে বড়ো সৌভাগ্য।
আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য অনেক অনেক দোয়া করবেন যাতে তিনি সবসময় সুস্থ থাকেন আর আমাকে আদর করেন smile emoticon

No comments:

Post a Comment