আমি জানি আজ বারবার প্রয়াত হামিদ স্যারের নাম আসবে। ২০ ফেব্রুয়ারি স্যার ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে বলে আসতেন প্রভাত ফেরির কথা। ভোরে যেন সবাই উপস্থিত থাকে। আমরা খালি পায়ে স্কুল মাঠে গিয়ে হাজির হতাম। তখনো আমরা শোক দিবস বুঝিনা, ভাষা আন্দোলন বুঝিনা। আমরা বুঝি ২১ ফেব্রুয়ারি স্কুল বন্ধ থাকে তবে ভোর বেলা স্যারের নির্দেশে খালি পায়ে মাঠে হাজির হতে হয় এবং দুই সারিতে হেঁটে মিলের লৌহ নির্মিত শহীদ বেদিতে ফুল দিতে হয়। স্কুলের পর্ব শেষ করার পর এখন পর্যন্ত আমি আর কখনো শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে কোথাও ফুল দিতে যাইনি। কি অদ্ভুত সুন্দর ছিল সেই লোহার শহীদ মিনারটা।
একটা উদীয়মান লাল সূর্য আর একটা রাইফেল ধরা হাত। কি গভীর কালো রঙ সেই বেদির। সারাদেশে বা সারা পৃথিবীতে যত শহীদ মিনার বা সৌধ হয়েছে বেশিরভাগের রঙ সাদা। শুধু ষ্টীলমিলের সৌধটি এমন কোকিল কালো। জানি সেই লৌহ সৌধে আজ আমাদের সেই ছোটবেলার চেয়ে বেশি ফুলে ভরে উঠবে, জনসমাগম হবে আগের চেয়ে বেশি। কিন্তু তিন নাম্বার বিল্ডিঙের বাগান থেকে কোন বালকের চুরি করে আনা অকৃত্রিম শ্রদ্ধার ফুল আজ একটিও পাওয়া যাবেনা। আজ শোনা যাবেনা ছাত্রদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় হামিদ স্যারের বাজানো ঘন ঘন হুইসেল। আজ কোন বালক গোপন অ্যাডভেঞ্চারের লোভে প্রভাত ফেরির লাইন ভেঙ্গে পালিয়ে মেইন অফিসের করিডোরে করিডোরে ঘুরে বেড়াবে না। এসব ভুলে যেতে পারলে বড় ভালো হতো।
"আমি কি ভুলিতে পারি"
No comments:
Post a Comment