Thursday, February 4, 2016

কিছু "দুর্জন"


ছোটবেলায় পাঠ্যবইতে একটি গল্প পড়েছিলাম- এক বৃদ্ধলোকের দশ ছেলে। ছেলেদের মধ্যে কোন ঐক্য নেই। সারাদিন ঝগড়াঝাঁটি করছে। মারামারি, গালাগালি করছে। এ ওকে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে কিংবা নিজেই কেউ একজন রাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। এক যাচ্ছেতাই অবস্থা। বৃদ্ধ দিনের পর দিন এসব দেখেন আর ছেলেদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে শঙ্কিত হয়ে উঠেন। একদিন বৃদ্ধ ভদ্রলোক বিশটি কঞ্চি যোগাড় করে ছেলেদের ডাকলেন। সকলের হাতে একটি করে কঞ্চি দিয়ে বললেন ভাঙো। ছেলেরা ভাবল বুড়ো বয়সে বাবার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে। যে যার মতো মটমট করে বাঁশের চিকন কঞ্চি ভেঙ্গে ফেললো। যার যার কাজ সমাপ্ত করে চলে যেতে উদ্যত হলো ছেলেরা। বুড়োর ম্যাজিক কিছু বাকি ছিলো তখনো। তিনি ছেলেদের দাঁড়াতে বললেন এবং বাকি দশটি কাঠি একটি আঁটি বেঁধে জ্যেষ্ঠ পুত্রের হাতে দিয়ে বললেন "ভাঙো"। বড় ছেলে বিফল হলে দ্বিতীয় পুত্রের হাতে দিলেন। এভাবে একে একে সব ছেলেই সেই আঁটি ভাঙতে বিফল হলে বুড়ো বললেন তোমরা যদি একতাবদ্ধ না থাকো তাহলে ওই কঞ্চিগুলোর মতোই মটমটিয়ে ভেঙ্গে যাবে আর একসাথে আঁটি বেঁধে থাকলে কেউ তোমাদের ভাঙ্গতে পারবে না। 


এটি একটি উপদেশমূলক গল্প। গল্পের মোরাল হচ্ছে "একতাই শক্তি"। আমরা সবাই এই গল্প অসংখ্যবার শুনেছি বা পড়েছি। কিন্তু সম্ভবত আত্মস্থ করতে পারিনি কখনোই।

আরেকটা গল্প। এটাও ছোটবেলায় পড়া ঈশপের গল্প-
এক দুষ্ট নেকড়ে আর এক ভেড়ার বাচ্চার কথা। একদিন দুষ্ট নেকড়ে আর ভেড়ার বাচ্চা নদীতে পানি খাচ্ছিল। এসময় নদীর উজানে থাকা নেকড়ের হঠাৎ কচি ভেড়ার গোশত খাবার লোভ জাগে। তো সে চিন্তা করছিল কোন অযুহাতে ভেড়ার বাচ্চাকে আক্রমণ করবে?

এক সময় সে ভেড়ার বাচ্চার উদ্দেশে বলে- তুই আমার পানি নষ্ট করছিস কেন?
ভাটিতে থাকা ভেড়ার বাচ্চা উত্তরে বলল- আমি ভাটিতে থেকে তোমার উজানের পানি কিভাবে নষ্ট করলাম?
প্রশ্নের সদুত্তর না দিতে পেরে লোভী নেকড়ে বলে- তাহলে গতকাল তুই আমার পানি নষ্ট করেছিস।
ভেড়ার বাচ্চা বলে- গতকাল তো আমি এই পথেই আসিনি।

এখন নেকড়ে জেদের সুরে বলে-তাহলে তোর কোন আত্মীয় আমার পানি নষ্ট করেছে।
সহজ সরল ভেড়ার বাচ্চা নেকড়েকে বলে- আমার কোন আত্মীয় তোমার পানি নষ্ট করেনি। আর যদি কেউ করতো, তাহলে তুমি তাকে বাঁচতে দিতে না। এখন বল, তুমি কি চাও?
নেকড়ে বলে- তোর আত্মীয়দের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আমি তোকে খাব।

এই গল্পের মোরাল "দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।"
২৯ তারিখে চমৎকার একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের পরও কিছু "দুর্জন" সেখানে দোষ খুঁজে বেড়াবেই আর আমরাও বুড়োর দশ ছেলের মত ঝগড়াঝাঁটি করে আমাদের ঐক্য নষ্ট করবো এবং ভেঙ্গে যাবার জন্য প্রস্তুত হব এটা হতে পারেনা। প্রয়োজনে "দুর্জন" সরিয়ে দেয়া হোক তবু একতা থাকুক। ঈশপের গল্পের মত বাংলা ভাষায়ও একটি প্রবাদ আছে "দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো"। দুষ্টু গরুর শিং এর গুঁতানি খাবার আগেই কুরবান করে দেয়া হবে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss