কলোনি থেকে যেদিন আমরা চলে আসি,সেদিন আমার কাছে ছিল," ওঠ ছেড়ি তোর বিয়া"র মত।সবকিছু গোছগাছ করে নতুন জায়গার জন্য নিয়ে যাওয়া।কোন কিছু ফেলে যাওয়া যাবেনা।এগুলো করতে করতে নিজের স্কুলের শ্রদ্ধেয় স্যার,আপা আর সহপাঠী এবং বন্ধু কারো সাথে দেখা করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তাড়াহুড়ো করে কিছু জিনিস ট্যাক্সি করে নিয়ে নতুন জায়গায় চলে এলাম।
ছোটবেলা থেকে যেসব মানুষকে দেখে আসছিলাম,তাদের অনেকে চলে গিয়েছিল।পুরনো বলতে শুধু রিপা আপারা।শুনেছি আম্মারা চলে আসার সময় রিপা আপার আম্মা এমনভাবে কেঁদেছিলেন যে অন্যদের চোখেও পানি চলে এসেছিল।ভাগ্য ভাল যে আমি আগেই চলে এসেছিলাম,নাহলে আমিও কেঁদে ফেলতাম খালাম্মার কান্না দেখে।আর কাঁদলে আমাকে আরো খারাপ দেখায়।নিজেকে খারাপ দেখতে কার ভাল লাগে।
নতুন জায়গায় এসে নতুন স্কুলে গেলাম।সবকিছু ভাল কিন্তু আমার ভাল লাগেনা।স্কুল ছিল চট্টগ্রাম কলেজের বিপরীতে। প্রতিদিন টিফিন টাইমে এসে স্কুলের মাঠে এসে দাড়িয়ে থাকতাম যদি কলোনি র কারো দেখা পাই।কিংবা গনি বেকারির সামনে যেখানে কলেজ বাস থামত,সেখানে যদি কাউকে দেখি।কিন্তু কারো দেখা মিলত না।তারপরে প্রতিদিন আশায় বুক বাধা আর আশা ভঙ্গ চলতে থাকত।
সেই সময়ে আমার মনের অবস্থা ছিল অনেকটা এরকম-
এখন আমার প্রতিটি দিন কাটে আরো বেশি ব্যস্ততায়
নতুন পরিবেশে, নতুন অচেনা মানুষের ভীড়ে,
নতুন রুটিনে,অন্যরকম দুঃসহ অনুভুতি
এ যেন গভীর জলাশয়ের মাছকে
হঠাৎ করে ডোবায় এনে ফেলা,
প্রতিনিয়ত নিজের অভিযোজন ক্ষমতার পরীক্ষা,
থাকা না থাকার মধ্যখানে
স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে
গনি বেকারির সামনে যেতে যেতে
আপন মানুষগুলোর মুখ দেখবার জন্য
আশায় বুক বাধা,
কিংবা দেখতে না পেয়ে হতাশ হওয়া,
একদিকে নতুন জায়গায় মানিয়ে চলার বৃথা চেষ্টা
অন্যদিকে নিজের আপন আঙিনায় পা রাখার
দীর্ঘ প্রতীক্ষা,
জানি মানিয়ে চলার শেষ আছে
কিন্তু প্রতীক্ষার শেষ নেই,
যত দূরে যাই, ফের দেখা হবে।
No comments:
Post a Comment