Monday, February 8, 2016

কাছের মানুষ


রি ইউনিয়ন হতে শুরু করে ঢাকার বাহিরে কোন বিয়ের প্রোগ্রাম হলেই আমার ফ্রেন্ডরা প্রথমেই ধরে নেয় নমি যাচ্ছে না। ঘরকুনো স্বভাবের ছিলাম বলে আমাকে কলোনির অর্ধেক টার বেশি মানুষ চিনে না। গ্রুপে বিশাল বিশাল গল্প লিখে বিরক্তির কারন হয়ে দাড়াইয়েছি বলেই কিনা কেউ কেউ আমার পরিচয় জানতে চায় ? আমি ইফতেখার সাইমুল হাসান বলার পরেও কেউ চিনতে পারছে না। অনেকেই জিজ্ঞেস করে আগে পরে কিছু নেই? 
ভাই এত বিশাল নাম তারপরেও চিনতে পারছেন না ? 
তুমি কার ছেলে কার ভাই? কার কি ? কোন অপ্রীতিকর স্ক্যান্ডাল কি ছিল তোমার? 

হাহাহা না ভাই ছিলনা ,আগে জানলে হয়তো প্রীতিকর কিছুর বিপরীতে চিহ্ন রেখে আসতাম grin emoticon এত বড় নাম নিয়ে পরিচয় সংকটে আছি বলেই কিনা নামটা কচ করে কেটে ফেললাম। কেটেকুটে আমি হলাম ইফতি নমি।আমি ইউনুস সাহেবের ছেলে বেবি বুলার ভাই।নবিন সংঘের মানিক,২৯ এর সুমনের একটা ছোট ভাই ছিল আমি সেই পিচ্চি ছেলে।মিন্টু মামা আমার আপন মামা।এইবার আমার ১৪ গোষ্ঠি চিনে ফেলেছে।মিতু ভাই হতে শুরু করে টলি ভাই সবারই একি অবস্থা।নমি নাম নিয়ে পরিচয় দেয়ার পর টলি ভাই জড়িয়ে ধরেছিল আর যেই না শুনেছে বেবি বুলার ভাই গাল টানা শুরু করেছে দাড়ি টেনে দিচ্ছে বড় ভাই একটু লজ্জাই পেলাম । 


আড্ডা-২০১৬ তে আড্ডা ঢুকেই কলোনির গন্ধ পেতে শুরু করলাম, যেখানেই যাই ষ্টিলার আর ষ্টিলার , মনে হচ্ছে অনেক গুলো নমি একসাথে হয়েছে,সব ষ্টিলার রাই তো আমি,একি প্যাটার্নে সৃষ্টি ষ্টিলাররা রাজিবের এই কথাটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। সবখানে আমি আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। কমুভাই এর সাথে দেখা হলো। কমুভাই পাশে থাকলে মাথার উপর থেকে অর্ধেক্টা দায়িত্ব এমনিতেই কমে যায়। চোখ বন্ধ করে ডিপেন্ড করা যায় কমু ভাই এর উপর। এই সুযোগ টা আমি সব সময় নেই। এইবারো নিলাম।সকালে গিয়েই নাস্তা ধরিয়ে দিলো ইমরুল/ হিমেল। আমার এই পাগলা দুই ফ্রেন্ড আর সজিব ভাই রা কাজ করেই যাচ্ছে। নাস্তা করতে করতেই একটু খোলা মাঠে এলাম।একটা ছেলে সামনে এসে ভাইয়া আমি রনি। হ্যান্ডশেক করলাম,বুঝতে পেরেছে চিনতে পারিনি,হ্যান্ডশেকে মন ভরে নাই আবারো বলল ভাই আমি রনি।একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম রনি মানে হচ্ছে ডি টাইপের রনি।আমার উপরের ফ্লোরে থাকতো রনি। এইবার দুই জন ষ্টীলার এক সাথে ঝাপিয়ে ধরলো .এক সময় ঘুম ভাংলেই রনি/রাফি/বাবু/তৌফিকের চেহারা টা দেখতে হতো। সারাটা দিন থাকতাম এক সাথে। 

কত ঝগড়া করেছি কত গাল ফুলিয়ে বসে থেকেছি সেই ছেলেটার সাথে প্রায় বিশ পর দেখা হলো। রনির খবর নিতেই দেখলাম রাফি সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হেটে তো যাবেই আজ যে ষ্টীলার দের মিলন মেলা। রাফির চেহারা চেঞ্জ হয়নি। রাফি/রনির সাথে ছবি তুল্লাম। রাজিনা আর ফারহানা কে খুব মিস করলাম। আমার ফাষ্ট ফ্রেন্ড তো এরা দুই জন। এক সাথে তিন জন স্কুলে যেতাম। ফিরতাম ও এক সাথে। রাজিনা /ফারহানা স্কুলে না গেলে আমিও যেতামনা। কত গল্প বলার ছিল আমাদের । আজ আমি সব কিছু ফেলে এলাম আড্ডায় আর আমার দুই ফ্রেন্ড সবাই কে নিয়ে আসতে পারলো না। এইবার না হয় হলোনা পরেরবার হবেই ,হতেই হবে ষ্টিলারদের একবার ফিল করতে শুরু করলে আর দূরে থাকা যায়না। 

আড্ডায় অনেকএর সাথে দেখা হচ্ছে। সবাই জড়িয়ে ধরছে , আজ যেন ষ্টীলার দের ঈদের দিন। কারো সাথে খুব বেশি সময় ধরে আড্ডা দেয়া যাচ্ছে না, জসিম ভাই এলো কথা বল্লো একটি ডিটেইলসে যাওয়ার আগেই দেখলাম দুইজন কে দুই জনের ফ্রেন্ডরা দুই দিকে টেনে নিয়ে গেলো । আমাদের এই জরুরি কথা আর বলাই হলো না। এরি মাঝে দেখা হলো রাশেদ ভাইয়ার সাথে। উনি আমাদের নিচের ফ্লোরে থাকতো। একি রকম আছেন। ঢাকাতে আছেন, রাশেদ ভাই কে দেখে মনে হলো আমি যেন ডিটাইপেই আছি। একটু পর খেলতে নামবো। উনি তার বিখ্যাত ডায়লোগ টা ছুড়ে দিয়ে বলবেন । “ আমারে একটা দলে রাখিস , আমি আছি , I Have আমি আছি tongue emoticon" 

রাশেদ ভাই রে দেখে খুব তৌফিকের কথা মনে পরলো। তৌফিক ঈদের দিন ঘনিয়ে এলেই আমারে ধরে নিয়ে আদর আপ্যায়ন এ ব্যস্ত হয়ে পরতো। আমার হ্যান্ড রাইটিং খুব যে ভালো তা কেউ কখনো বলে নাই কিন্তু ক্লিয়ার ছিল বলে তৌফিকের কাছে আমার কদর একটু বেশি ছিল। ৩০/৩৫ টা ঈদ কার্ড নিয়ে এসে ব্যাচের সব মেয়েদের কে নিয়ে আতিক ভাইয়ার মতো অনুছড়া লিখে দিতে হতো। আজ এত বছর পরে সেই ঈদ কার্ড গুলো যদি কেউ কালেকশনে রাখেন তাহলে আমার হাতের লিখার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন মাইর গুলি এত বছর পরে ক্যাশ পেমেন্ট করবে কিনা আল্লাহ জানে । তৌফিক আমারে দিয়ে যাদের ঈদ কার্ড লিখাতো ওদের গার্ডিয়ান যদি তখন টের পেতো মাইড়া আমার হাড্ডি গুড্ডি এক করে দিতো। 

তৌফিকরে কত করে বলতাম এই মেয়েদের ১৪ গোষ্টী আমার হাতের লিখা কি রকম জানে ধরা খেলে আমি আলু ভর্তা হবো। তৌফিক আমারে পেয়াজুর লোভ দেখিয়ে হ্যান্ড রাইটিং চেঞ্জ করে লিখিয়ে নিতো। পেপসি কেনার টাকা ছিল না আমি আশাও করিনাই যাই হোক রাশেদ ভাই এর পর নাজমুল ভাই মনু ভাই এর সাথে দেখা হলো, দেখা হলো ইমুর সাথে। ইমু রে দেখলেই মনে হয় এই ছেলে এখন গেয়ে বসবে 
তৃষ্ণা কে আমি এত ভালোবাসি বলে ওরা সবে মিলে এত বাড়াবাড়ি করে ,আমি তৃষ্ণা,
গান গাওয়ার সময় চোখ বন্ধ থাকবে আর আবেগের ধাক্কার পরিমানেই হয়তো পুরা শরীর বাতাসে ঢেউএর মতো নেচে বেড়াবে। 

নাজমুল ভাই আর আমাদের বাসা ছিল পাশা পাশি, আমাদের দুই বাসার ভিতর কোন সীমারেখা ছিলনা। কখন যে নাজমুল ভাইদের বাসায় বসে চা খাচ্ছি কখন যে খেলা দেখছি কোথায় মনেই থাকতো না।একটু পর পর রনি/রাফির সাথে আবারো দেখা হলো। আজ ষ্টীলারদের দিন বলেই কিনা একটু পর পর শুধু আমাদের দেখা হচ্ছে। লাঞ্চের পর একটু ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা মারছি। হুট করে দেখা হলো নাজমুল ভাইয়ার আব্বার সাথে। উনি জড়িয়ে ধরলো। নাজমুল ভাইয়ার বাবা মানে হচ্ছে প্রথম জেনারেশনের ষ্টীলার। কাকা আমার বাবার কলিগ/বন্ধু/ভাই। কাকা আমারে জড়িয়ে ধরেই আছেন। আমার ভিতর টা কেপে উঠছে। দুইজনের কেউ কথা বলতে পারছিনা। কাকার জড়িয়ে ধরায় আমি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার সাথে আমার বাবার শেষ দেখাটা এয়ারপোর্টে এই রকমই ছিল। কাকার চোখ এর দিকে তাকিয়ে মনে হলো আমি একা হয়ে যায়নি। 

আমার বাবা আমার জন্য এখনো কাউরে রেখে গেছেন। আমার ভিতর কলোনির স্মৃতি গুলো ফিরে আসছিল। একটু সামলে নিয়ে অনেকক্ষন কথা বললাম। আজ কথা গুলো কেমন জানি জড়িয়ে আসছে। চোখ ভিজে ভিজে আসছে বারবার।স্ট্যাজে উঠতে হবে ,রেজা ভাই আমার নাম ধরে ডাকছে। কাকা ও বুঝতে পেরেছেন এখন উঠতে হবে বিদায় জানালাম উনি আবার জড়িয়ে ধরলেন
কি জানি হয়তো আমার বাবা বেচে থাকলে এইভাবে জড়িয়ে ধরতেন, উনি যদি এই দৃশ্য দেখে থাকেন তাহলে হয়তো বলেই বসতেন 
“ হুদা ভাই আমার নমিরে এইভাবে ধরে রাখেন,যখন ওর আমারে খুব দরকার ছিল তখনি আমাকে সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হলো। আপনি পাশে থাকেন সব সময় ......” 
আমি বিদায় নেয়ার পর আর পিছনে তাকাতে পারলাম না। একটু তাকালেই আমি আর সারাদিন নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না। কাকা হয়তো তাকিয়ে আছে ,তাকিয়েই আছে 
স্ট্যাজে উঠে গেলাম। পাশে পেলাম আবার কমু ভাই কে। যেখানে চোখ বুলাই সেখানেই ষ্টিলার আর ষ্টীলার । যেখানেই তাকাই মনে হয় কলোনি কে দেখতে পাচ্ছি, আমার স্কুল কে দেখতে পাচ্ছি, স্যার রাও আজ জড়িয়ে ধরছে । কত কঠিন সময় ছিল আমাদের । আমরা ফিন্যান্সিয়াল সল্ভেন্ট ছিলাম না, কিন্তু এক বুক ভালোবাসা ছিল আমাদের । শেষ দিকে ষ্টীলার রা ৬/৭ মাস স্যালারি পায়নি। আমার বাবা ট্রান্সফার হয়ে প্রগতি তে চলে না গেলে হয়তো টানা টানি কারে বলে আমি আরো ভালো বুঝতাম । নিজের উপর দিয়ে না গেলেও খুব কাছ থেকে দেখেছি অভাব কি জিনিষ। টাকা মানূষ কে কত টা অসহায় করে দেয়, আজ আমি যখন ১০ তারিখেও পে রোল স্ট্যাটমেন্টের কাজ করতে ভুলে যাই আমার পিয়ন গুলো শেষ বিকেলে কাছে এসে চাতক পাখির মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে চোখ ছল ছল করে উঠে। বুঝতে পারি বাড়ি ভাড়ার টাকা না দিলে বাড়িওয়ালা বেড় করে দিবে । 

বাজার নাই স্যার , ছেলেপুলে আছে ...... আমার তখন মনে পরে ফাষ্ট ষ্টিলার রা কিভাবে দিন পার করেছিল, কত টা ঘাম ঝড়িয়ে আমাদের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। ফাষ্ট ষ্টীলার দের এই ঘাম ঝড়ানো শ্রমের দাম কোন দিন কি আমরা দিতে পারবো ? 
আমাদের ষ্টিলার রা একটু আলাদা প্যাটার্নের তৈরী হাজারো কষ্টের মাঝেও এরা আনন্দ করে যেতো অবিরাম। পকেটে টাকা নেই কিন্তু বিকেল হলে মেয়েদের বাসায় উকি দিতে কেউ ভুল করতোনা , কত বড় ভাই কে দেখতাম নির্ধারিত জায়গায় এসে স্যান্ডেল ছিড়ে যাচ্ছে , কেউবা জিএফের বাসার কাছে এসে কোকিল হয়ে যেতো কেউবা সেখানেই রেস্ট নেয়ার জায়গা খুজে নিতো জিএফের ফ্ল্যাট ছিল । রেগুলার বড় মাঠে আড্ডা বসতো। জুনিয়র দের বিড়ি ধরানো কে এভয়েড করার জন্য অনেক টা রাস্তা ঘুরে গন্তব্যে পৌছাতাম। 

সুজনের গান টা আজ সব মনে করিয়ে দিলো। ছেলেটার মুখে সব সময় হাসি লেগেই আছে। হাসতে দেখলেই আমার ফাষ্ট ষ্টীলার দের মুখ গুলো ভেসে উঠে । কষ্টের মাঝে এরা কখনো আনন্দ বিষর্জন দেয়নি । সুজনের গান এর ভিতর সেই আনন্দ টুকু আমি পেয়েছি । থ্যাঙ্কস ব্রো । আড্ডায় গিয়ে কাছের মানুষ গুলোর আরো কাছে চলে এলাম।তাই হয়তো আয়নায় নিজের দিকে তাকালেই রিয়েল ষ্টিলার দের মুখ ভেসে উঠে। কাছের মানুষের স্পর্শ গুলো বারবার আন্দোলিত করে যাচ্ছে।কল্পনার এই অনুভুতি গুলো যেন রিয়েল লাইফে একাকার হয়ে যাচ্ছে।অনুভুতি গুলো শারীরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছড়িয়ে দিলাম আকাশের দিকে ,হয়তো এই ভালোবাসার স্পর্শ টুকুই আমাদের পরের জেনারেশন কে জাগিয়ে তুলবে। আরো কাছে নিয়ে আসবে

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss