Thursday, March 24, 2016

কেরামত এর মন গত এক সপ্তাহ যাবত খুবই খারাপ


কেরামত এর মন গত এক সপ্তাহ যাবত খুবই খারাপ। কেরামত নিজেকে ফেসবুকের একজন কবি ও লেখক মনে করে (গায়ে মানেনা আপনিই মোড়ল পদ্ধতিতে)। গত এক সপ্তাহ আগে-তার সহধর্মিনী তাকে বলেছে-আজ একটা হেস্ত-নেস্ত হবে-হয় ফেসবুক রাখবা না হয় আমাকে! অনেক দিন মানা করেছি শুনোনি-তোমারমত বেহায়া, নিলজ্জ ও অসভ্য আমি জীবনে দুইটা দেখিনি (শব্দ তিনটি সামাজিক জীবনে পজেটিভ অর্থেও ব্যবহার হয়-সেটা এখানে প্রযোজ্য হবে না)।
কেরামত প্রথমে ফেসবুকের কথা চিন্তা করে-ডিভোর্সের কথা ভেবে ছিল। ডিভোর্সের মধ্যে বেশ একটা মর্ডান গন্ধ আছে। কিন্ত পরে ভেবে দেখল তাতে অনেক হাঙ্গামা। আগেরমত তো সুধু তিন তালাক বললেই হবে না, রিতিমত কোর্ট কাচারী করতে হবে, উকিল মোক্তার ধরতে হবে। কিন্ত কোর্ট কাচারী, উকিল মোক্তার করতে গেলে তার অদ্ভত এক সমস্যা হয়। এই গরমে উকিল সাহেবদের কালো কোট পড়ে থাকতে দেখলেই তার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। কিভাবে যে, উকিল সাহেবরা সহ্য করে তা উপর ওয়ালাই বলতে পারবে। সুতারং বহু চিন্তা ভাবনা করে দেখেছেন সে ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই। তাছাড়া বউ গেলে বউ পাওয়া যাবে। 


কিন্ত তার মেয়ে দুইটা কে তো আর পাওয়া যাবে না। তাই অনেক ভেবে চিন্তে ফেসবুক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং হেড অফিসকে বললো, টুন টুনি আমি তোমাকে বাদ দিতে পারি? কিন্ত চোরে কি আর ধর্মের কাহিনী শুনে? তাই কেরামত মাঝে মাঝে-হেড অফিসের অজান্তে-পরকীয়া প্রেমেরমত-ফেসবুকে ঢুকে টুপকরে লাইক দিতো কিন্ত কোন কমেন্টস করত না। এভাবে এক সপ্তাহ পার হলো-কেরামতের ব্উয়ের আবার দীপ্ত টিভিতে প্রতিদিন-‘‘সুলতান সোলায়মান” দেখার খুব সখ। কেরামতকেও বউয়ের সাথে বসে ফেসবুক বাদ দিয়ে মুখ গোমরা করে সেই জিনিস হজম করতে হয়। কাল কেন জানি-সুলতান সোলায়মান দেখে কেরামতের বউ বললো-না ভাই স্বামীদেরকে এত চাপ দেওয়া ভাল না। যাও, কাল তুমি এক ঘন্টা ফেসবুকে লেখার সুযোগ পাবে। কিন্ত আমার মাথায় হাত রেখে বল-এক ঘন্টার বেশি সময় দিবে না। 

এ একঘন্টায় কেরামত কি লিখবে চিন্তা করতে করতে-কয়েকটা শোনা ঘটনা নিয়ে-লাইক কথন-নামে গল্প লিখল-
-ভাই আপনি ওনার পোষ্টে লাইক দেন, কমেন্ট করেন, আমারটায় করেন না কেন? 
- আমি কার পোষ্টে লাইক দিব না দিব সেটা আমার ব্যাপার।
- কিন্ত আপনিতো আমার কাছের লোক, আপনি আমাকে দিবেন না?
- ফেসবুকে বসলে সবাই-ই এক হয়ে যাই, কাছে দুরের ব্যাপার নাই।
- তারপরেও থাকে না, ছোট ভাই বেরাদার মানুষ।
-আামার লাইক কি খুব জরুরী?
- জ্বি তা না। আপনি ওনাকে দেন আর আমাকে দেন না তো তাই বলাম আর কি!
- আচ্ছা এখন থেকে আপনার পোষ্টেও লাইক দিব।
এই বলে সাইফ রুদ্রের সব পোষ্টের লাইক দেওয়া শুরু করল। একটু পরে রুদ্রো আবার সাইফকে নক করে বললো, 
-ভাই এটা কি করলেন?
-কেন কি হয়েছে?
-অফিসের বস আমাকে থাপ্পর মেরেছে, এটা পোষ্ট দিলাম, কেউ লাইক দেয়নি আর আপনি দিয়া বসলেন?
- কেন ভাই, কেউ না দিলে যে আমি দিতে পারব না এমন কোন কথা আছে?
-না তা নেই, কিন্ত আপনি এটা করলেন কিভাবে? আমার মানসম্মানের উপর আঘাত!
-কেন আপনি না একটু আগে বললেন লাইক দিতে। তাই দিলাম। কেন খুব বেশি পড়ে গেছে লাইক?
রুদ্রের সাথে কথা বলতে বলতেই সাইফ রুদ্রের পুরানো পোস্টগুলোতে আবার লাইক দেওয়া শুরু করল, লাইক দেওয়ার মাঝখানেই আবার রুদ্র নক করে বসল চ্যাটবক্সে,
-আরে ভাই আবার কি করলেন?
-কেন?
-আমার স্ত্রী আমাকে ডিভোর্স দিল আর আপনি এটা পছন্দ করলেন
আপনি না একটু আগে লাইক দিতে বললেন?
-আপনার বিবেক বলে কিছু নাই?
-কেন থাকবে না! লাইক তো আমি আপনার জন্য দেইনি, দিয়েছি আপনার স্ত্রীর জন্য।
-মানে?
-মানে একটা পেইন ক্যারেক্টারের সাথে না থাকাটাইতো ভাল! তাই না!
এরপর আবারো সাইফ একধারে রুদ্রের পুরানো পোষ্ট ঘাটতে ঘাটতে সমানে সব পোষ্টে লাইক দিতে থাকল। এবার রুদ্র হুস্কারের ইমোটিকনস দিয়ে চ্যাটবক্সে নক করল,
-ভাই হচ্ছেটা কি? আর কত?
-কেন ভাই কি হয়েছে?
-আমার বাবা মারা গেছিলো, সেটা পেস্টে জানিয়ে ছিলাম, আপনি সেটাতে লাইক দিয়ে বসলেন?
-কেন ভাই এতে সমস্যা কি? আমি আপনার প্রতি সমবেদনা জানালাম।
-ওটা তো কমেন্টও করতে পারতেন, সবাই তো কমেন্টেই সমবেদনা জানালো।
- না না, লাইক হলো সহমত ও সমবেদনার প্রতীক।
-এত কিছু বুঝেন, আর কোথায় লাইক দেওয়া লাগবে, কোন টায় লাগবে না এটা বুঝেন না! থাক আপনার আর লাইক দেওয়া লাগবে না।
আহ! ভাই বাঁচালেন।
-আপনাকে ফেন্ডলিষ্টেও রাখবনা।
-ওহ হো! শুকরিয়া। এত খুশি কই রাখি।
-আপনি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন, আপনাকে ব্লক করে দিব।
আমি তো ভাই পুরুষ, আপনিও পুরুষ।
আপনাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কি আছে? সাইফের লাষ্ট মেসেজটা শেষ পর্যন্ত আর রুদ্রের কাছে পৌছায়নি। তবে আগেই রুদ্র তাকে ব্লক করে দিলো। পুরুষ হয়ে পুরুষের ছিনিমিনি কিভাবে খেলতে হয় সেটা তার আর জানা হলো না। লাইকগুলোও আর লাগাতার দেওয়া গেলো না।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss