স্টুডেন্ট লাইফ এ আমরা সবাই কমবেশি টিওশনি করতাম। ওটাই আমাদের একমাত্র আরনিং সোর্স ছিল। আমাদের কল্লোলও টিওশনি করত। যাইহোক টিওশনির প্রথম মাসের টাকা পেয়ে কল্লোল আমার আর মানিকের বাসায় আসলো, আমরা ২ জন একই বিল্ডিং এ থাকতাম এবং কল্লোল প্রস্তাব দিল আজ আমাদের খায়াবে, আমি আর মানিকও কোনকিছু না ভেবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। বললাম তোর বাজেট কত? কল্লোল বলল ২০০ টাকা। শুনে আমরা অবাক, ২০০ টাকা... ওবাজি! ওই সময় ২০০ টাকা আমাদের কাছে অনেক টাকা ছিল।
যাইহোক বিকেলে ৩ বন্ধু বেরিয়ে পড়লাম। নিজের এলাকায় কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম কিন্তু হোটেল পছন্দ হল না। সবাই মিলে ভাবতেছি এখন কি করা যায়? ২০০ টাকা বলে কথা, কোন আলতু ফালতু রেস্টুরেন্ট এ তো আর খাওয়া যায় না । হটাত মানিকের মাথায় বুদ্ধি এলো, ও বলল চল আগ্রাবাদ যাই, ওইখানে অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট আছে, অনেক ভালো ভালো খাবার পাওয়া যায়। আমি আর কল্লোল মানিকের প্রস্তাবে রাজি হলাম এবং বাসে উঠে ৩ জন আগ্রাবাদ চলে আসলাম। বাসে করে আগ্রাবাদ আসতে আসতে সন্ধা হয়ে গেল।
শুরু হল ৩ জনের রেস্টুরেন্ট পছন্দের পালা। প্রথমেই গেলাম হোটেল আগ্রাবাদ এ। এর আগে আমি কোনদিন হোটেল আগ্রাবাদ এ যাই নাই, শুধু নাম শুনছি। কিছুক্ষণ ৩ জন হোটেল আগ্রাবাদের সামনে ঘুরাঘুরি করলাম কিন্তু ভিতরে ঢুকার সাহস পেলাম না, এরপর গেলাম সম্ভবত সিলভার স্পুন এ, এই ভাবে মোটামুটি আগ্রাবাদ এর সব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এ গেলাম। প্রায় ২ ঘণ্টা এই ভাবে ঘুরাঘুরি করে পার করলাম।
অবশেষে মানিকের পছন্দমত হোটেল সারাহ তে গেলাম। তখন রাত প্রায় ৮ টা। ৩ বন্ধু হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম। ওয়েটার আসলো, মেনু দিল কল্লোলকে, কল্লোল মেনুটা মানিককে দিল, বলল তুই মেনু সিলেক্ট করে ওডার কর, মানিক ওডার করলো। ৩ জনের পেটে তখন প্রচণ্ড ক্ষুধা। পুরো পৃথিবীটাই মনে হয় খেয়ে ফেলব।
একটু পর খাবার আশা শুরু করলো। গরু, গরু ভুনা, মুরগি, ছাগল, সবজি, বিরয়ানী আরো অনেক কিছু সহ প্রায় ৬-৭ রকমের বেশি আইটেম আসলো। দীর্ঘ ২-৩ ঘণ্টা হাঁটার পর প্রচণ্ড খিদা লেগেছিল তাই ৩ জন কোপাইয়া খাইলাম। আহ পেট পুরে খেলাম। তারপর কোক খেলাম। খাবার পর্ব শেষ হল।
কল্লোল আবার আমাদের জিজ্ঞেস করলো আর কিছু খাবো কিনা, আমরা বললাম না। যাইহোক এইবার কল্লোল খুব ভাবসাব নিয়ে ওয়েটারকে বিলটা আনতে বলল। কে জানত একটু পর আমাদের কপালে দুঃখ আছে। বিল আসলো মানিকের কাছে, মানিক চুপ, মানিকের চেহারা কালো, কল্লোল মানিককে জিজ্ঞেস করলো বিল কত? মানিক চুপ, কোন কথা বের হচ্ছে না কারণ ওডারটা ওই দিছে। বিল আসছে ১০০০ টাকার কাছাকাছি আর আমাদের বাজেট ছিল ২০০ টাকা। এখন কি করি? সবার চোখ কপালে। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত আজকে আমাদের বাণধি রাখবে অথবা আমরা গণধোলাই খাবো। তখন মোবাইলও ছিল না। ৩ জন মানিব্যাগ বের করে যার যা আছে সব দিলাম, বিলের অর্ধেকের একটু বেশি হল, এরপর সবাই সবার চোরা পকেট চেক করতে লাগলাম, আল্লাহ্র অশেষ রহমত মানিকের চোরা পকেট থেকে একটা চকচকে ৫০০ টাকার নোট বের হল। আহ কি শান্তি? আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ......। অবশেষে বিল পরিশোধ করে রক্ষা পেলাম সেইদিনের সেই অপমান থেকে, সেই গণধোলাই থেকে।
[বিঃ দ্রঃ ওইদিন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আমি আর কল্লোল মানিকরে খুব ঝারি দিলাম কারণ মানিক প্রায় সময়ে এই টাইপ এর উল্টাপাল্টা কাজ করত। ওইদিন মেনুর পাশে খাবারের দাম না দেখেই ৬-৭ টা খাবার আইটেম ওডার করছিল। মানিক এবং আমরা মনে করছিলাম ২০০ টাকা হয়তো অনেক টাকা সুতরাং ২০০ টাকা দিয়ে মনে হয় পুরো পৃথিবীটাই খাওয়া যাবে। অবশেষে বলতে চাই “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ......।“]
No comments:
Post a Comment