গতকাল লেখার পর লেখাটি-চলমান করার ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ থাকায় আর আগ বাড়িলাম না। কখন কে আবার কোন উপাধী দিয়া বসে? তবে 84-85 এর দিকের একটি ঘটনা মনে পড়ল। কলেজে ভর্তির জন্য সিটি কলেজের ওয়েটিং লিষ্টে থাকিয়া সেন্ডেলের তলা খোইয়া শেষে আমার আর হাফিজের স্থান হইল-এম ই এস কলেজে। হাফিজকে লেখাপড়ায় খুব সিরিয়াস দেখিলাম। বাধ্য হইয়া আমাকেও সিরিয়াস হইতে হইল। ফাস্টইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষায়-হাফিজ ফাস্ট হইল আর আমি সেকেন্ড হইলাম। তবে কয়টি প্রশ্ন মুখস্ত লিখিয়াছিলাম মনে নাই। তবে বেশীর ভাগই নকল করিয়া লিখিয়াছিলাম-উহা মনে আছে! লাভের মধ্যে দুইটা জিনিস হইল-দরখাস্ত করিয়া কিছু বেতন মৌওকুফ হইল এবং প্রথম 5 জন বিনা টাকায় পিকনিকে যাইবা্র অনুমতি পাইলাম। পিকনিকে জায়গা নির্ধারিত হইল কক্সবাজার প্রিন্সিপলকে জানানো হইল। ঠিক হলো স্যারেরা যাবে।
কলেজে সব মিলিয়ে 200/250 জন হইবে। 6টি বাস ঠিক হলো যাওয়ার জন্য। ছেলে মেয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে সবােই উঠেছে। একজন করে শিক্ষাক অবশ্য প্রতি বাসে আছেন। আর প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল সহ অন্য শিক্ষকরা উঠেছেন একটা বাসে। বাসে মেয়েদের বসার জায়গা হয়েছে সামনের দিকে। এরকম একটা বাসে উঠেছে কলেজের সেরা সুন্দরীদের একজন। সে বসেছে ড্রাইভারের পাশে যে আরা আরি সিট আছে সেখানে। এই সব সুন্দারীদের বন্ধনাকারী অনেক গোলাম সবসময় হাজীর থাকে। এখানেও তারা হাজির। তেমন তোষামোদে এক গোলাম হলো ইকবাল ভাই,বিএন.পির নেতা। উনার লেসুমির জন্য ছেলে-মেয়েরা উনার নাম দিয়েছিল সম্রাট শাহজাহান। কলেজে কোন সুন্দরী মেয়ে আসলে পারলে তার জন্য এখুনি তাজ মহল বানাইয়া দেয় আর কি! মুখে মুখে সে সুন্দরীদের জন্য তাজমহল গড়ে ফেলে। তো সে শাহজাহান বাসে উঠে দেখে তার র্টাগেট তো এমন জায়গায় বসেছে যার আসে-পাশে আর সিট নেই। সে কোন পারোয়া না করে বসে পড়ে বাসের ইঞ্জিন কভারের উপর।
বসেই তার কায়দা মারা গল্প শুরু করে দেয়। মাঝে মাঝে মেয়েরা যে তার কথায় টিটকারী দিয়ে কথা বলছে বা হাসা হাসি করছে তাহা তার গায়ে লাগছে না। কিছুক্ষনের মধ্যে বাস চালূ হয়ে যায়। শহর ছাড়িয়ে গিয়ে খোলা রাস্তায়। বেগও বাড়ে সেই সাথে। শাহজাহান সেখানে বসেছে সেখানে তাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ইঞ্জিন যত চলতে থাকে ততবেশী সেটা গরম হতে থাকে। সেই সাথে গরম হয় ইঞ্জিনের কভার। আর সেটার উপর সিংহাসনের মত বসে আছে শাহজাহান। তার মুখ দেখে মোটেও বোঝা যাচ্ছে না সেটা গরম একটা জায়গা। মেয়েদের সাথে এমন হেসে হেসে গল্প করছে যে মনে হচ্ছে বসে আছে ময়ুর সিংহাসনে। তার গল্পের ভান্ডার অফুরান। চলছে তো চলছেই। গল্প থামে তখনই যখন যায়গা মত বাস পৌছায়। সবাই বাস থেকে নামে কিন্ত শাহজাহান ভাই নামে না। শেষ জন নামার সময় জিজ্ঞেস করে, ‘‘কি শাহজান ভাই নামতেছেন না কেন”? শাহজাহান ভাই উকি মেরে দেখে নেয় মেয়েরা দুরে গেছে কি না,
তারপর বলে, ‘‘ভাইরে আটকে গেছি”।
আটকে গেছেন মানে
উঠতে পারছি না।
আটকে গেলেন কিসে?
আরে বাবা সেটাইতো বুঝতে পারছি না।
শাহজাহান ভাইকে টেনে তোলা হল। তখন দেখা যায় তার হিপ পকেটের ফাঁক দিয়ে প্লাষ্টিকের মানি ব্যাগ বের হয়ে গলে লেগে গেছে ইঞ্জিন কভারের খাঁজে। বন্ধু অবাক হয়ে বলে, এই রকম গরম আর আপনি বসে থাকলেন কি করে?
শাহজাহান ভাই অবাক হয়ে বলে, তাইতো! কিন্ত আমিতো টেরই পেলাম না
অনেকে এই গল্প নিয়ে সন্ধেহ প্রকাশ করলেও পরিবেশে পরিস্থিতি যে অনেকটাই মানুষকে বশ করে ফেলে তা অসম্ভব কিছু না।
পরিবেশ পরিস্থিত সবাইকে সহ্য করিয়ে দেয়।-------------------
No comments:
Post a Comment