Tuesday, April 19, 2016

এই গরমে বন্ধ পড়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত পরিবারসহ ছিলাম গ্রামে


এই গরমে বন্ধ পড়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত পরিবারসহ ছিলাম গ্রামে। উপলক্ষ্য বন্ধে-চৌদ্দগুষ্টির মিলন মেলা ও একটা বিবাহের অনুষ্ঠান। এই 4 দিন মোবাইল/ফেসবুক সব বন্ধ করে বসে ছিলাম। গরমা গরম সব কিছুই ভাল কেবল গরম কালটা বেরসিক অবশ্য বেরসিক বলাটা ঠিক হলো না, বরং স্বরসিক বললে ভাল হয়। কারণ আর কিছু নয়, কিছুক্ষন পর পর জামাকাপুড় ভিজে এমন অবস্থা হয়যে মনে হবে রসে টইটম্বুর রসগোল্লা। ‘‘গরমে প্রাণ অষ্ঠাগত” কথাটা বলে গরমের ইমেজ কোথায় নামিয়ে দেয় সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ হট কেক আর গরম চা গরমের ইমেজ কত উচ্চ করে রেখেছে। যাই হোক জায়গা বুঝে ইমেজ বারে আর কমে সে তো বাঝাই যায়। জায়গা না বুঝলে যে কেমন ঝামেলায় পড়তে হয় সে অভিজ্ঞতার কথা বলছি। বর কে বুদ্ধি দেওয়া হইল-গরমে শেরয়ানী ও পাগড়ী না পরে সাধারন পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে যাওয়ার জন্য এক জন বুঝিয়ে বলে, ‘গরম কালতো সেই জন্য তোমাকে বলছিলাম’।


‘না না একটু গরমের জন্য ড্রেস কোড ভাঙ্গা যাবে না’।
যাচ্ছ বিয়ে করতে সেখানে আবার ড্রেস কোড কিসের?
কি যে যাতা বলেন আপনারা।

ছেলে তার মতে অটল। অগত্যা শেরয়ানী ও পাগড়ী পরে রোওয়ানা হয়। নতুন জামাই সাজগোজ ভালই করেছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এক সময় পৌছায় গন্তব্যে। আর পৌছানের পরে শরু হয় তার আক্কেল গজানো। গাড়ি বাড়ীর চৌহদ্দিতে পৌছানো মাত্র আশ পাশ থেকে লোকজন হুড়মুর করে চলে আসে নতুন জামাই দেখতে। জামাইও বেশ ভাবগম্বির হয়ে গাড়ী থেকে নামে। এর পর বসে দিয়ে তার নির্ধারিত চেয়ারে। একে বৈশাখ মাসের গরম তার পর উপরে টিনের চাল, নিজেকে মনে হয় চিকেন তুন্দুরী চিকেন, গরমের যে অবস্থা তাতে চাল ডাল মিশিয়ে পানি দিয়ে দিলে আপনা আপনি খিচুড়ী রান্না হয়ে যাবে। 

ক্রমে ফায়ার প্লেসের আগুনের মত লক লক করে তার শরীর ঘিরে নাছতে শুরু করেছে। নাচা নাচি করেও যা হউক কোন মতে টিকে ছিল কিন্ত সর্বনাশটা হলো বিদ্যুৎ চলেগিয়ে। গ্রাম দেশে বিদ্যুৎ যদি একবার যেতে পারে তো তাকে ফিরে আনে কার সাধ্য। যাই হোক তারও তো একটু অবসরের দরকার আছে। কিন্ত তার আসার জন্য সবাই বসে থাকবে না। জেনারেটারের ব্যবস্থা ছিল কিন্ত কারেন্ট যাওয়ার পর সেটাও আর কাজ করছে না। মিস্ত্রী বেটা সেটা ঠিক করার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবসরে আমাদের নতুন জামাই দাঁত কপাটি লাগিয়ে চোখ উলটিয়ে চিৎ হযে পড়ে। সবাই হাউ মাউ করে ছুটা ছুটি লাগিয়ে দেয়। মটর সাইকেল চাপিয়ে কাছা কাছি বাজার থেকে ডাক্তারকে মোটা ফিসের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন এতো অজ্ঞান হয়ে গেছে। সবাইতো অবাক, দিব্যি কথা বলছিল অজ্ঞান হলো কি করে?

ডাক্তার মুখটা সরু করে বলেন ‘মাথা কি ঠিক আছে আপনাদের। গরম পরেছে কিরকম তার খেয়াল আছে”।
একজন বেশ বুক ফুলিয়ে বলে, ‘‘কি বলেন ডাক্তার সাহেব আমরা তো এ গরমের মধ্যে আছি”। 

আরে আপনারাতো পরে আছেন প্যান্ট আর জামা, আর এ বেচারাকে এত গরমের মধ্যে পড়িয়ে রেখেছেন-শেরওয়ানী ও পাগরী! অজ্ঞান কেন আর কিছু হওয়া উচিৎ ছিল।

যা হউক ডাক্তার তার চিকিৎসা চালিয়ে চলে গেলেন। আর তার কিছুক্ষনপর জামাই বাবা চোখ মেলে চায়। তবে চোখ মেলে তো তার চক্ষু চড়কগাছ। একটা বিছানায় শুয়ে আছে সে আর তার চার পাশের ভিড় করে আছে শ্বশুর বাড়ীর আত্বীয় স্বজন। সবচেয়ে আতৎকের কথা তার পরনে সামান্য কাপড় চুপর, যেটা না থাকলেই নয়। হাউ মাউ করে উঠতে গিয়ে আবার শুয়ে পড়ে সে। বিছার চাদর টেনে গায়ে দিতে চায়, কিন্ত একজন তাতে বাধা দেয়। বলে-ডাক্তার বলে গেছে গায়ে কাপড় চোপড় যত কম পারা যায় রাখতে। গরমের হাত থেকে বাঁচতে কাপড়-চোপড় আপাতত না থাকলেই ভাল। কথা শুনে আতকে উঠে জামাই, বলে কি এরা! তবে বোঝা যায় আপতত যা পড়ে আছে সেটা কেউ ছিনিয়ে নিবে না--------

(চলবে)

No comments:

Post a Comment