Monday, April 4, 2016

CSM গ্রুপ থেকে বের হয়ে গেছি অনেকদিন হলো


CSM গ্রুপ থেকে বের হয়ে গেছি অনেকদিন হলো। বলতে দ্বিধা নেই তীব্র বেদনা আর হতাশা বুকে নিয়েই বের হয়েছি। এরপর ওখানে ফিরে যাবারও আগ্রহ বোধ করিনি কখনো। তবে খোঁজ রেখেছি সবসময়। সম্ভব হলে লেখাগুলো পড়েছি। কলোনির স্মৃতি গন্ধের মাদকতা একেবারে ছেড়ে দেয়া মুশকিল। সেদিন আমার বোনের মোবাইলে তার একাউন্ট থেকে লেখা পড়ছিলাম। দেখলাম একে অপরকে নিয়ে লিখছে। আমারো একজনকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছা হল। আমার বন্ধুকে নিয়ে। এই লেখাটি আমার বন্ধুর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। তার সাথে আমার পরিচয় কবে আমার মনে নেই। হয়তো তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। সে আমাদের মত ছিল না। ভয়াবহ রকম সীমাবদ্ধতা নিয়ে সে জন্মেছিলো। স্কুল জীবনের একটা সময় তার সাথে কিভাবে যেন আমার হৃদ্যতা তৈরী হয়েছিল। আমি তাকে দেখে অসংখ্যবার অনুপ্রানিত হয়েছি, নিজেকে ঢেলে সাজাবার কথা ভেবেছি। ছেলেটা আজন্ম ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড এবং সেই চ্যালেঞ্জ সে খুব সাহসের সাথে নিয়েছে। 


শুধু নিয়েছে বললে কম বলা হয়। বলা যায় বরাবরই সীমাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জকে সে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পার হয়েছে। সে স্বাভাবিক ভাবে লিখতে পারতো না কিন্তু পুরো স্কুল জীবনে কোন পরীক্ষায় আমি তাকে একটা মিনিট বাড়তি খুঁজে নিতে দেখিনি। আমি যখন পুরোপুরি বেকার তখন আমার দোস্ত স্টীলমিল বাজারে কম্পিউটারের নানাবিধ কাজের দোকান নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে। আমি মাঝে মাঝে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বসতাম। একহাতে তার টাইপ করা দেখে আমি বারবারই মুগ্ধ হয়েছি। ২০১১ সালে আমাদের ৯৫ ব্যাচের রিইউনিয়নের কিছু প্রিন্টিং এর কাজ সে আমাকে করে দিয়েছিল। ছোটবেলায় শিশুসুলভ বর্বরতায় আমরা তার দুর্ভাগ্যজনক শারীরিক ভারসাম্যহীনতা নিয়ে অনেক কটূ নামে তাকে ডাকতাম, সেই অভ্যস্ততায় বড় হয়েও ডাকগুলো অব্যাহত ছিল অনেকদিন। এসব নিয়ে সে কখনো রেগে যায়নি আমাদের উপর। এখন ওসব ভাবলে লজ্জায় নীল হয়ে যেতে হয় আমার। তাকে বাজে নামে ডাকা নিয়ে রাগ না করলেও মাঝে মাঝে অন্যান্য বিষয়ে সে ভয়ানক রেগে উঠতো। 

সে রাগলে আমি তার কাছ থেকে দূরে থাকতাম। তার হাত পাথরের মত শক্ত। সেই হাতের ঘুসি যে খেয়েছে সে ভুলেও কখনো তার কাছে যাবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমি তার ঘুসি খেয়েছি। ২৯ জানুয়ারির গ্রান্ড আড্ডায় তার সাথে আমার দেখা হয়েছে। তাকে জড়িয়ে ধরার পর তার আন্তরিক হৃদস্পন্দন আমি অনুভব করেছি। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি সেদিন এতোটা আন্তরিকভাবে কারো হৃদপিন্ড স্পন্দিত হয়নি। আমি আমার বন্ধু মামুনের কথা বলছি। আমি আমাদের আব্দুল্লাহ আল মামুনের গল্প বলছি। বন্ধু তোকে কুর্নিশ আমাকে বারবার ঘুরে দাড়াবার সাহস যোগানোর জন্য। মুখে অনেক কথা বলা যায়না, কৃত্রিম মনে হয়। তাই আজ সুযোগ পেয়ে বলছি। তোকে কখনো শ্রদ্ধা জানানো হয়নি আমার। তোর জন্য আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আজ।

No comments:

Post a Comment