১৯৮৩ সালের কথা। সেশন জটের কারনে তখনও আমি চতুর্থ বরষ এর ছাত্র। সে সময়ে স্টিল মিলে বিজ্ঞাপন দিল "সহকারী প্রকৌশলী" পদে লোক নিয়োগের। আব্বার খুব মন খারাপ। 'সেশন জট' টা না থাকলে ছেলে তার স্টিল মিলেই 'ইঞ্জিনিয়্রর' হিসাবে চাকরীটা পেয়ে যেত। তখন মিলের চাকরীটা একেবারে খারাপ ছিল না। তাছাড়া এক সাথে থাকতে পারা,ছোট ভাইবোনের লেখাপড়ার দেখভাল - এমনতর আরও কিছু বাড়তি সুবিধা।
'৮৪তে আমার সমসাময়িক বুয়েট, কুয়েট,রুয়েট (বর্তমান) থেকে পাশ করা অনেক বন্ধুরা জয়েন করলো মিলে।
তাদের দেখে আমারও মন খারাপ হোল।
ফাইনাল পরীখখা দিয়ে বেকার জীবনে অফিসারস ক্লাবে সদ্য জয়েন করা ইঞ্জিনিয়র বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই বটে, মনের খচখচানিটা কিছতেই যায় না।
মা-বাবা, ছোট ভাইবোনদের কায়মন প্রাথনা আমার কখন একটা চাকরী হবে-সংসারে একটু সাছছন্দ আসবে।
মাস ছ'য়েক পর পল্লী বিদ্যুতে চাকরী পেলাম, বেতন ও অন্যান্য লিগ্যাল সুবিধা স্টিল মিলের চেয়ে ভাল।পোস্টিংটাও কেমন করে যেন চিটাগাং এ পেয়ে গেলাম-সাথে একটা নতুন ১১০ সিসির মোটর সাইকেল আর একটা পিক আপের সুবিধা।
এসব দেখে আব্বা বললেন -
-স্টিল মিলের চাকরী না হয়ে ভালই হয়েছে
মা বললেন-
- সবুরে মেওয়া ফলে;
তারপর অনেক দিন------
আরও দুটো চাকরী বদল করে এখন যেখনে এসেছি তা দেখলে আব্বা নিশচয় খুশি হয়ে বলতেন-
-সব আল্লার রহমত, তারই দয়া;
আব্বা! তুমি যেখানে আছো, সেখান থেকেই দোয়া কো'র -- তার রহমতের ছায়া থেকে আমরা যেন কোনদিনই বঞ্চিত না হই।
*************************************
কাকতালীয় ভাবে -আমার এখনকার পোস্টিং টা দেখলে আব্বা না যেনি কত খুশি হতেন। আব্বাকে KEPZ এ বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সেখানকার রেস্ট হাউজের ছাদে গিয়ে বলতাম-
--দ্যাখো তোমার পুরন ভালোবাসার জায়গা,
সেই স্কুল,সেই মসজিদ। শুধু চিমনি গুলো নেই।
আব্বা বুকে একটা দীর্ঘ সবাস ছেড়ে ভেজা কন্ঠে বলতেন--
--আহারে! পানি ট্যাংক টাও তো নেই দেখছি।
আমি আব্বাকে সান্তনা দিয়ে বলতাম-
--এ মায়ার গ্রহে তুমি, আমি কেউ থাকবো না আব্বা। সত্যি, আমার আব্বা আজ নেই, আর আমিই বা কত দিন !!অফিস থেকে ফেরার পথে,
২৬.০৫.২০১৬
No comments:
Post a Comment