Sunday, August 30, 2015

টুকরো টাকরা এলোমেলো কিছু ..........................


কলোনী তে যখন প্রথম আসলাম, নিজের যেনো একটি পৃথিবী খুজে পেলাম, নিয়ন্ত্রনের মধ্যে বাঁধন হারা উচ্ছাস আর আনন্দে শৈশব চলতে থাকলো, ডাব গাছ, আম গাছ সম্পর্কে ব্যাপক ঞ্জান অর্জন শুরু হোল। এর মধ্যে কখন যেনো রোমিও হয়ে গেলাম টের ও পাইনি, বিশাল ভাবে আছি তখন। সিগারেট খেয়েছি কেনো এজন্য জুলিয়েটের ছলছল চোখে অভিমান। নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হলো, যাক একজন বিশেষ কেউ আমার জন্য ছলছল চোখে থাকে,তখন আমির খানের যুগ চলছে, আহ! নিজেকে আমির খান না হোক অন্তত আতিক খান মনে হচ্ছে। এর মধ্যে ৯১ এর ঘূর্নিঝড় তান্ডবে পুরো চট্টগ্রামের পাশাপাশি কলোনীর অবস্থা শোচনীয়, কিন্ত কলোনী বাসীর দুরন্ত মনোবল ও ‍দুর্দান্ত হিউমারে সকল দুর্যোগ কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থা। মেট্রিক পাশ করে নিজেদের আমি কি হনুরে একটা ভাব। আর রোমান্টিক মৌসুমের কারনে বন্ধু Riman Babu র বাসায় টেলিফোন রোমান্স চলছে আর হিন্দি রোমানটিক সিনেমা মুখস্থ করছি। রোমিও জুলিয়েটের রোমান্স তখন আস্তে আস্তে কলোনীর বাইরেও যাওয়া শুরু করল।

বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা হয় ইউরোপ আমেরিকায়, কিন্তু আমাদের ভাবসাবে মনে হয় যেনো খেলা হচ্ছে আমাদের বড়মাঠ এবং সি টাইপ মাঠে । আর ভিআইপি গ্যালারি তো আমাদের ওয়ার্কার ক্লাব, মোকাদ্দেস আর ইউনুসের চিৎকার চেচামেচি মনে হচ্ছে সত্যিকারের বিশ্বকাপ ভেন্যু থেকে শুনা যাবে। আর দুই ম্যাচের মধ্যবর্তী সময়ে আম গাছ, ডাব গাছ এর উপর অপারেশন তো আছেই। সারারাত জেগে খেলা দেখে পরদিন তো আর রোমান্স করা যায়না, জুলিয়েটের এ জন্য আবার ছলছল অবস্থা,তখন আবার শাহরুখ খানের যুগ চলছে, নিজেরে প্রায় শাহরুখ খান ই মনে হচ্ছে।

এপ্রিল ২৯ গঠন, তিনটি বড় বড় প্রোগ্রাম করে, এপ্রিল ২৯ এর সদস্যরা তখন কলোনীতে একএকজন অনিল কাপুর, অক্ষয় কুমার, সুনিল শেঠি পর্যায়ে।

এদিকে এক রাতে ইউনুস কে বিনা কারনে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো, আমরা ট্যাংকির নিচে বসে অস্থির উৎকন্ঠায় আছি, ঘন্টা খানেক পরে ইউনুসের বিজয়ী বেশে প্রত্যাবর্তন আর মোকাদ্দেসের “আঁই গিয়ে ,আাঁই গিয়ে, আাঁরার ইউনুস আঁই গিয়ে” গগন ভেদী চিৎকারে ইউনুস কে নিয়ে উল্লাস, তখন ইউনুস কে মনে হলো যেন কলোনীর নেলসন ম্যান্ডেলা।
বিকম পরীক্ষা শেষ, আমার পূর্ববর্তী অতি রোমান্টিক কর্মকান্ডের কারনে কলোনী বাসীর ধারনা আমার পক্ষে আর পাশ করা সম্ভব নয়, আমার নিজেরও ধারনা তাই ছিলো। সবাকে অবাক করে আমি ২য় বিভাগে পাশ, আমার রেজাল্টে আমি নিজেও বিভ্রান্ত।

অবশেষে চোখ ছলছল কারিনীর ছলনা আর বিশ্বাষ ভংগে, আমার নিজেরই চোখ ছলছল শুধু নয়, রীতিমত খালপাড়ের খাল, তবে মোটা দাগে বলতে গেলে আমার হারানোর কিছু ছিলোনা, বরং হারিয়ে দিয়েছি।( আমি জানি এ টুকু পড়ে Riman Babu তুমি মিটমিট করে হাসছো, মামা অনেক কিছুর পালের গোদা কিন্ত তুমি।)
এর মধ্যে ষ্টীল মিল বন্ধ করার চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে, সবার মধ্যে তখন ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি রব।
মন্দের ভালো ঢাকায় একটি বিথ্যাত কর্পোরেট হাউসে আমার চাকরী হয়ে গেলো। মোকাদ্দেসের একটি ডায়ালগ মনে পড়ল তখন, সে যখন ষ্টীল মিলে চাকরী শুরু করে আমাদের সবাকে বলেছিলো ” আঁই এখন চরি গরি আঁরে এখনুত্তুন কাক্কু ডাকিবি” । নিজেকে সেই কাক্কু কাক্কু লাগছিলো।চাকরী অবস্থায় এম কম শেষ করলাম। আমি ঢাকায় থাকি,তখনও কলোনী ছাড়িনি।

যেদিন কলোনীর বাসা ছেড়ে দিচ্ছিলাম , তখন মনে হচ্ছিলো আমার কিছুই দরকার নেই, কোন রোমান্স দরকার নেই,শাহরুক আমির দরকার নেই শুধু যদি কলোনীতে থাকতে পারতাম। আমার বন্ধু গুলোকে শুধু চাই।
যেদিন কলোনী ছেড়ে হালিশহরে চলে এলাম,আমার একটি পৃথিবীর সমাপ্তি সেদিন ই ।
(with Chand Sultana)

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss