Wednesday, September 23, 2015

স্পর্শ


হলিক্রিসেন্ট হসপিটালে বাবা কে নিয়ে মাত্র আসলাম । শুরু দিকের কঠিন সময় টুকু বাদ দিলে হসপিটালের দিন গুলো খারাপ ছিল না। ডাক্তার পেসেন্ট মেডিসিন এই নিয়েই আমার লাইফ । এইভাবেই চলবে মেনে নিয়েছি । আমি মাস্টার্সের পরীক্ষায় এত সিরিয়াস ছিলাম বলে মনে হয় না যত টা সিরিয়াস ছিলার বাবার প্রতি, একটু গাফিলতি করলে কি কঠিন সময় ফেস করতে হবে আমি জানতাম। আমাকে বাবার প্রেসক্রিপ্সন যেভাবে মুখস্ত করতে হয়েছে সেভাবে যদি ম্যানেজারিয়াল একাউন্টস পড়তাম তাহলে আজ পচে মরতে হতো না। যাই হোক হলিক্রিসেন্ট এর সব ডাক্তার দের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। প্রফেসর মুলকুতুর রহমান স্যার এক সময় বাবার রেগুলার ডাক্তার ছিল। উনি চাকরির কারনে সৌদি চলে যান প্রায় এক যুগ পর ফিরে এসে ইউনুস সাহেবের খবর নেন। ইউনুস সাহেব হচ্ছে জটিল এক পেসেন্ট । সারা জীবন অনেক মিরাকল হয়েছে তার উপর দিয়ে । বাবার হার্ট ছিদ্র ছিল এই রকম পেসেন্ট অপারেশন ছাড়া বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না, বাবা ছিল , খুব ভালো ভাবেই ফিরে এসেছিল । কেন ফিরে এসেছিল কি করে ৬০ বছর টিকে ছিল আল্লাহ জানে । মুলকুতুর স্যার এসেই আমার সামনে পরলো , ডাক্তার দের বোর্ড বসিয়ে ছিল। মিটিং এর পর আমার প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে সে কিছুটা বিরক্ত ছিল। রাতে বাবার শরীর খারাপ হলে আবার কল করি। উনি ছুটে আসেন , এসে আমাকে দেখেই কিছুটা বিরক্ত ভাব নিয়ে বাবাকে দেখেন । ইডিনিল কেন দেয়া হয় নাই জানতে চেয়েছে ইন্টার্নির ডাক্তার এর কাছে? উনি আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছে ও খাওয়াতে দেয় নাই। একটু বেশী পন্ডিতি করে ছেলেটা । এমনি তেই আমারে দেখতে পারে না তার উপর কমপ্লেইন আমারে যে কি করে আল্লাহ জানে ?


কেন মেডিসিন দাও নাই বলার সাথে সাথে আমি হুক করলাম । বাবার ব্লাড প্রেসার ৩০/৬০ ছিল এই অবস্থায় ইডিনিল দিলে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতো । প্রফেসর ইন্টার্নির ডাক্তার কে কাছে ডেকে কি জানো বলছিল, তারপর থেকে মুলকুতুর স্যার আমার উপর আর বিরক্ত ভাব নিয়ে কথা বলে নাই। আমার মা কে জিজ্ঞেস করলো ভাবি আপনার ছোট বাচ্চা টা কই ? ওকে দেখছিনা ? কিসে পড়ে ?

মা আমাকে দেখিয়ে দেয়
আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো তারপর কোথায় আছি ইত্যাদি ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলো ? হসপিটালের ইট বালি সব চেনা তোমার তাই সাহস টা একটু বেশী তোমার। প্রফেসর আক্তার স্যার এর সাথে মজা নিচ্ছে মুলকুতুর রহমান এই ছেলে কে আমি কোলে নিয়েছি একবার হিসু করে দিয়েছিল আজ সে আমাদের ভুল ধরে , হাহাহা......
হসপিটালে আমাকে প্রায় একাই থাকতে হতো, পুরা ফ্যামেলি ( আমি আর মা ছাড়া) ঢাকা চলে আসায় আর উপায় ও ছিল না। এই ভাবেই চলে যেতে থাকে সময়, কত গল্প কত কিছু মনের মধ্যে উকি দেয়, আইসিইউ তে হুট করে ঢুকে যেতাম কত ধমক খেয়েছি শিক্ষা হয় নাই আর প্রফেসর দের সাথে বাবার পুরা প্রোফাইল নিয়ে কথা বলতে পারতাম বলে আমারে বেশী চার্জ করতো না । এক বিকালে আইসিইউ তে বসে বাবার সাথে আড্ডা মারছি। আমার ভাই বোন রা কি করে ঢাকা থেকে ছুটে এসে কান্না কাটি করতো কেমন করে করতো দেখা তাম , দুই জন হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতাম । এই রকমি এক সময় হঠাত করে সিসিইউ এর এক পেসেন্ট এর অবস্থা খারাপ হয়ে যায় , আমি সাধারনত হসপিটালে অন্য পেসেন্টদের ধারে কাছে যেতাম না। খুব প্রয়োজন না হলে কথাও বলতাম না। এই দিক দিয়ে আমার ভাই আবার অনেক হেল্পফুল , সুমন ভাইয়া পেসেন্টদের কাছে গিয়ে দুনিয়ার আজাইড়া আলাপ আছে সব করে। পেসেন্ট এর এটেন্ডেন্স যদি ফিমেল হয় তাহলে কথাই নাই আমরাই ওরে খুঁজে পাই না। যাই হোক সে দিন ভাইয়া ছিল না। আর সিসিইউ তে লোক ছিল কম । আমাকে ডাক্তার রুম থেকে বেড় করে দেয়। অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে , বুকে হাত দিয়ে প্রেসার দিচ্ছে , অবস্থা ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে, পেসেন্ট এর এটেন্ডেন্স ঢুকল সিসিইউ তে , আমি বাহির থেকে দেখছি। পেসেন্ট আমার দিকে তাকিয়ে আছে , ওরে আল্লাহ ব্যাটা আমার দিকে তাকায় আছে এইটা এখন এইভাবে মইরা গেলে আমি রাতে ঘুমাবো কেমনে ? ভয়ে আমার অবস্থা শেষ । ইলেকট্রিক শক দেয়া হবে। অবস্থা জটিল হয়ে যাচ্ছে। পেসেন্টের এটেন্ডেন্স আমাকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে কল করতে বলল। সে কথা বলতে পারছে না শুধু বলল হুজুর ...
হুজুর নিয়ে আসতে বলতে হবে ভিজিটিং কার্ডের ভদ্রলোক কে ? এই কঠিন কাজ টা আমাকে করতে হবে? আমার শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করলো , আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, কি করে এই রকম ম্যাসেজ দিবো। পকেট থেকে মোবাইল বেড় করলাম। কল দিলাম এক ভদ্রলোক ধরলো ।
হ্যালো জ্বি ভাই
আপনি আমারে চিনবেন না , আমি হলিক্রিসেন্ট থেকে বলছি
জ্বি বলেন
আপনার একজন পেসেন্ট আছেন তার অবস্থা ভালো না একটু তাড়াতাড়ি আসেন
আসছি সবাই রেডি হচ্ছে তো চলে আসবো। ঘন্টা দুই এক লাগবে ...
ভাই আমি ঠিক বুঝাতে পারছিনা , যত তাড়াতাড়ি পারেন ...
মানে কি? কি হইছে ? তুমি কে ?
আমাকে এই ম্যাসেজ টা দেয়ার জন্য বলেছেন , আমি আরেক পেসেন্ট এর এটেন্ডেন্স। আসার সময় একজন হুজুর নিয়ে আসেন ......
কথা টা শেষ না হতেই একটা চিৎকার শুনলাম ...... তারপর আর মনে করতে পারছিনা ।
পরের দৃশ্যে কি হয়েছিল আমি নিজের লাইফে দেখেছি। একি রকম গল্প একি চিৎকার একজন অন্যজন কে জড়িয়ে ধরে রাখা । এক জন অন্য জন কে সান্ত্বনা দেয়া , হাত ধরে রাখা এই তো ......

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss